ঢাকা রবিবার, ২০শে এপ্রিল ২০২৫, ৮ই বৈশাখ ১৪৩২


ফাঁসির দণ্ড বাবরের, যাবজ্জীবন তারেকের


১০ অক্টোবর ২০১৮ ২৩:১৯

বহুল আলোচিত ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার মামলায় সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরসহ ২০ জনের মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন আদালত। এ ছাড়া বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ ১৭ জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের আদেশ দেয়া হয়েছে। বুধবার পুরান ঢাকার নাজিমুদ্দিন রোডে স্থাপিত ঢাকার ১নং অস্থায়ী দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক শাহেদ নুর উদ্দিন এ রায় ঘোষণা করেন। এরমধ্য দিয়ে দীর্ঘ ১৪ বছরের প্রতীক্ষার অবসান হলো বিচারপ্রার্থীদের।

এ মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন—মো. তাজউদ্দিন, মাওলানা শেখ আবদুস সালাম, মো. মাজেদ ভার্ট, আব্দুল মালেক, মহিবুল্লাহ ওরফে অভি, মাওলানা আবু সাঈদ, আবুল কালাম আজাদ, মো. জাহাঙ্গীর আলম, হাফেজ মাওলানা আবু তাহের, হোসাইন মো. তামিম, মঈনুদ্দিন শেখ, মো. রফিকুল ইসলাম, মো. উজ্জ্বল ওরফে রতন, মো. লুত্ফুজ্জামান বাবর, মেজর জে. রেজ্জাকুল হায়দার চৌধুরী, ব্রি. জে. (অবঃ) আব্দুর রহিম, মোহাম্মদ আবদুস সালাম পিন্টু ও মো. হানিফ।

যাবজ্জীবনপ্রাপ্তদের মধ্যে রয়েছেন— শাহাদত উল্লাহ ওরফে জুয়েল, মাওলানা সাব্বির আহমেদ, আরিফ হাসান সুমন, হাফেজ মাওলানা ইয়াহিয়া, আবু বকর, মো. আরিফুল ইসলাম, মুহিবুল মুক্তাকিন, আনিসুল মুরসালিন, খলিল, জাহাঙ্গীর আলম বদর, মো. ইকবাল, তারেক রহমান, হারিছ চৌধুরী, শাহ মোফাজ্জেল কায়কোবাদ, মুফতি শফিকুর রহমান, মুফতি আবদুল হাই ও রাতুল আহমেদ বাবু।

দুপুরে রায় ঘোষণার রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল আদালত প্রাঙ্গণে সাংবাদিকদের তিনি জানান, ২১ আগস্ট একটি ন্যাক্কারজনক হত্যাকাণ্ড। আওয়ামী লীগকে নিশ্চিহ্ন করতেই এ হামলা চালানো হয়েছিলো। আদালত মামলার ১২টি পয়েন্টের ওপর ভিত্তি করে রায় ঘোষণা করেছেন। মামলায় সাবেক প্রতিমন্ত্রী লূৎফজ্জামান বাবার, বিএনপি আবদুস সালাম পিন্টুসহ ১৯ জনকে ফাঁসি দেওয়া হয়েছে। আর তারেক রহমান, হারিছ চৌধুরীসহ ১৯ জনকে যাবজ্জীবন দণ্ড হয়েছে।

তবে আদালতের রায়ে ন্যায়বিচার প্রতিফলিত হয়নি বলে মন্তব্য করেছেন আসামিপক্ষের আইনজীবী সানাউল্লাহ মিয়া। রায়ের পর আদালত প্রাঙ্গণে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় বিএনপির এই আইনজীবী বলেন, আদালতের রায়ে ন্যায়বিচার প্রতিফলিত হয়নি। ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলার ঘটনায় হত্যা ও বিস্ফোরক দ্রব্য আইনের মামলায় তারেক রহমানের যাবজ্জীবন ও অন্যান্যদের ফাঁসির যে রায় দেওয়া হয়েছে তা অন্যায় ও বেআইনি। হাওয়া ভবন, ‘আবদুস সালাম পিন্টুর বাসা থেকে কোনো স্বাক্ষী আইসা এ মামলায় সাক্ষ্য দেয় নাই। তারা এখানে বসে গ্রেনেড হামলার পরিকল্পনা করেছে- এটা কোনো সাক্ষী বলে নাই।’

এ মামলার মোট আসামি ৫২ জন। তাদের মধ্যে জামায়াতের সাবেক সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, জঙ্গি নেতা মুফতি হান্নান ও জেএমবি সদস্য শহিদুল আলম বিপুলের অন্য মামলায় মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়ায় এ মামলা থেকে তাদের নাম বাদ দেয়া হয়। বাকি ৪৯ জন আসামির মধ্যে বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ ১৮ জন পলাতক রয়েছেন। দণ্ডিতদের ৩০ দিনের মধ্যে আপিল করার সুযোগ দিয়েছেন বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিচারক। এছাড়া এ মামলায় পলাতকদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে।

মামলার রায় উপলক্ষ্যে সকালে কারাগার থেকে ৩১ আসামিকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়। সকাল ৭টায় আসামিদের কাশিমপুরের কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে পুলিশ প্রিজন ভ্যানে করে ঢাকায় আনা হয়।

মামলার অভিযোগ থেকে জানা গেছে, ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট ভয়াবহ গ্রেনেড হামলায় অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে যান বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। হামলায় আওয়ামী লীগের মহিলাবিষয়ক সম্পাদিকা ও সাবেক রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের স্ত্রী আইভি রহমানসহ ২৪ জন নিহত হন। আহত হন দলের তিন শতাধিক নেতাকর্মী।

ঘটনার পরদিন মতিঝিল থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) ফারুক আহমেদ বাদী হয়ে মামলা করেন। মামলাটি প্রথমে তদন্ত করে থানা পুলিশ। পরে তদন্তের দায়িত্ব পায় ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। পরবর্তীতে মামলাটি যায় পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগে (সিআইডি)।

২০০৮ সালের ১১ জুন মুফতি হান্নানসহ ২২ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেন সিআইডির জ্যেষ্ঠ এএসপি ফজলুল কবির। ২০০৯ সালের ৩ আগস্ট রাষ্ট্রপক্ষ মামলাটি অধিকতর তদন্তের আবেদন করলে ট্রাইব্যুনাল তা মঞ্জুর করেন। মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব পান সিআইডির পুলিশ সুপার আবদুল কাহ্হার আখন্দ।

২০১১ সালের ৩ জুলাই তারেক রহমানসহ ৩০ জনের নাম উল্লেখ করে মোট ৫২ জনের নামে হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে দুটি অভিযোগপত্র দেন তিনি। আলোচিত এ মামলায় ৫১১ সাক্ষীর মধ্যে ২২৫ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়। এ ছাড়া আরও ২০ জনের সাফাই সাক্ষ্য নেয়া হয়েছে।

আরকেএইচ