অবাঞ্ছিত ঘোষণার প্রতিবাদে যা বললেন ইলিয়াস কাঞ্চন

নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা) আন্দোলনের চেয়ারম্যান ও চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন বলেছেন, কেন কি কারণে আমাকে টার্গেট করে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হলো তা আমার বোধগম্য নয়। পাশাপাশি আমার স্ত্রী জাহানারা কাঞ্চনের মৃত্যুর ঘটনাকে সম্পূর্ণ ভুল তথ্য দিয়ে বিতর্কিত করার অপপ্রয়াস চালানো হয়েছে।
রোববার (৭ অক্টোবর) রাজধানীর ফুলবাড়িয়া টার্মিনালে এক সমাবেশ থেকে পরিবহন মালিক-শ্রমিক নেতারা ইলিয়াস কাঞ্চনকে দেশের সব বাস টার্মিনালে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেন। পরিবহন মালিক-শ্রমিক নেতাদের এমন কথার পরিপ্রেক্ষিতে ইলিয়াস কাঞ্চন এ মন্তব্য করেন।
বিভিন্ন বাস টার্মিনালে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদ কর্তৃক অবাঞ্ছিত ঘোষণার প্রতিবাদে সোমবার বিকেল ৩টায় জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেছিলেন নিরাপদ সড়ক চাই’র কর্ণধার ইলিয়াস কাঞ্চন। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পেশ করেন তিনি।
ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, ‘প্রথমেই বলতে চাই আমার এবং আমার সন্তানদের জীবনের স্পর্শকাতর ঘটনা- ১৯৯৩ সালের ২২ অক্টোবর মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় আমার স্ত্রীর জাহানারা কাঞ্চনের মৃত্যু। ২৫ বছর পর এসে আমার স্ত্রীর এই মর্মান্তিক মৃত্যুর ঘটনাকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার জন্য বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক শ্রমিক ঐক্য পরিষদ কর্তৃক ভুল তথ্য দিয়ে নাটক সাজানোর অপপ্রয়াস চালাচ্ছে।
তাদের বরাত দিয়ে সংবাদে লেখা হয়েছে আমার স্ত্রীর মৃত্যু হয়েছে আমার নিজস্ব গাড়িতে। কিন্তু প্রকৃত সত্য হচ্ছে ঐদিন জাহানারা কাঞ্চন (আমার স্ত্রী) হোটেল সোনারগাঁও থেকে একটি মাইক্রোবাস ভাড়া নিয়ে দুই সন্তানকে সাথে করে বান্দরবানে আমার স্যুটিং স্পটে যাচ্ছিলেন। পথিমধ্যে চট্টগ্রামের অদূরে চন্দনাইশ পেরিয়ে পটিয়ার কাছাকাছি একটি ট্রাকের ধাক্কায় মাইক্রোবাসটি দুমড়ে-মুচড়ে যায় এবং আমার স্ত্রীর মৃত্যু হয়। সেদিন গাড়িতে অভিনেতা এটিএম শামসুজ্জামানও ছিলেন। পুরো দেশবাসী ঘটনাটি জানেন। প্রশাসন থেকে বিভিন্ন অনুসন্ধানেও ঘটনাটি উঠে এসেছিল।
আমি এ ধরনের মিথ্যা অপপ্রচার থেকে বিরত থাকার জন্য বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক শ্রমিক ঐক্য পরিষদ নেতৃবৃন্দকে আহবান জানাচ্ছি। তাদের উদ্দেশ্যে আরও বলতে চাই আমার দরজা তাদের জন্য সবসময় খোলা। তারা আমার প্রতিপক্ষ নন, যে কোনো সময় তারা আমার সাথে আলোচনা করতে পারেন।’
ইলিয়াস কাঞ্চন আরও বলেন, ‘আমাকে কেন অবাঞ্ছিত করা হয়েছে তা প্রকাশিত সংবাদে উঠে আসেনি। তবে এ ঘটনা নতুন নয়। ২০১২ সালে শহীদ মিনারে পরিবহন মালিক শ্রমিক সমাবেশে আমার ছবিতে জুতার মালা পরনো হয়েছিল, আমার ছবি পোড়ানো হয়েছিল। এমনকি রাজধানীর কুড়িল রেলক্রসিং-এ দাঁড়িয়ে থাকা আমার গাড়িকে পেছন থেকে ধাক্কা দিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত করে আমার উপর আক্রমণের প্রয়াসও চলেছিল।
এমনকি কোমলমতি শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সময় খুলনা এবং ঢাকার যাত্রাবাড়িতে ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের নেপথ্যের নায়ক উল্লেখ করে আমার ছবি পোড়ানো হয়েছিল। তখন আমি বিষয়টি জানার পরেও আপনাদের বলিনি সকলের মঙ্গলের কথা ভেবে। এমনকি এসব ঘটনায় আমি বিচলিতও হইনি। নিজেকে নিয়ে চিন্তিতও নই। আমি চিন্তিত সড়ক নিয়ে, সড়কের মানুষকে নিয়ে।’
সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮ নিয়ে ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, ‘আমরা বলতে চাই তারা যে দাবি করছে তা সরকারের দেখার বিষয়। আমরা চাই সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে আইনের যথাযথ বাস্তবায়ন। এই আইন প্রণয়নে আমাদের পক্ষ থেকে ছোট বড় মিলিয়ে একাধিক সংশোধনী দেয়া হয়েছিল। বিশেষ করে আইনটির শিরোনাম ‘সড়ক পরিবহন ও সড়ক নিরাপত্তা আইন ২০১৮’, সড়ক দুর্ঘটনায় শাস্তির মেয়াদ দশ বছর করা, অবৈধ ড্রাইভিং লাইসেন্স এবং লাইসেন্সবিহীন ও ফিটনেসবিহীন গাড়ি চালিয়ে দুর্ঘটনা ঘটালে এবং তাতে কারো মৃত্যু হলে মামলা ৩০২ ধারায় হবে উল্লেখযোগ্য।
আইনটি পাশ হওয়ার পর আমাদের পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে আমাদের চাওয়ার প্রায় ৮০ ভাগই বর্তমান আইনে এসেছে। আমি সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮ প্রণয়নে সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি এইজন্য যে দীর্ঘ দিনের জঞ্জাল পরিষ্কার করার উদ্যোগ নিয়েছেন এই সরকার। কিন্তু এ আইন নিয়ে যদি আমাকে জড়ানো হয় তা হবে দুঃখজনক। আমি মনে করি সরকার সকল মহলের মতামত নিয়ে এ আইন প্রণয়ন করেছেন। আমি একজন স্টেক হোল্ডার মাত্র। আমি আমার অভীষ্ট লক্ষ্য থেকে একচুলও নড়বো না। মহান সৃষ্টিকর্তার উপর ভরসা রেখে আমি আমার কাজ করে যাব।’
এসএ