ঢাকা রবিবার, ২০শে এপ্রিল ২০২৫, ৮ই বৈশাখ ১৪৩২


নির্বাচনকালীন সরকারে থাকবেন কারা


৫ অক্টোবর ২০১৮ ২৩:৫১

ছবি ফাইল ফটো

চলতি মাসেই নির্বাচনকালীন সরকার দায়িত্ব গ্রহণ করবে। আগামী ২১ অক্টোবর দশম জাতীয় সংসদের শেষ অধিবেশন। রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বৃহস্পতিবার এ অধিবেশন আহ্বান করেছেন। এতে স্পষ্ট হয়েছে চলতি অধিবেশনেই নির্বাচনকালীন সরকার গঠন হবে।

সূত্র মতে, সর্বসাকুল্যে শেষ অধিবেশনের মেয়াদ ৩ দিন থেকে সর্বোচ্চ ৫ দিন হতে পারে। চলতি মাসের ৩১ অক্টোবরের আগে এ সরকার গঠনের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এই সরকার সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে কমিশনকে সব ধরনের সহায়তা দেবে।

রাজনৈতিক দলগুলোর সূত্রে জানায়, নির্বাচনকালীন সরকারের প্রধান থাকছেন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সংসদে প্রতিনিধিত্বকারী দলগুলো থেকে এ সরকারের মন্ত্রিপরিষদের সদস্য হবেন। তবে কারা ওই সরকারের মন্ত্রী পরিষদে ঠাঁই পাবেন সেটি একান্তই সংসদ নেতার এখতিয়ার। এজন্য সংসদে কোনো বিল আনা কিংবা আলোচনারও প্রয়োজন হবে না।

সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, নির্বাচনকালীন সরকারের পরিসর হবে খুবই ছোট। সংসদ না থাকায় এমপিদের কোনো ক্ষমতা থাকবে না। তবে মন্ত্রীরা রুটিন ওয়ার্ক কাজ করবেন। এই ব্যবস্থাতেই নির্বাচন হবে। এটাই আমাদের সংবিধানের নিয়ম। ওই সরকারের সদস্য সংখ্যা সর্বোচ্চ ১৫ সদস্যের বেশি হবে না বলেও জানান তিনি।

সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংসদের অধিবেশনে নির্বাচনকালীন সরকারের বিষয়ে বলেন, কীভাবে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে তা আমাদের সংবিধানে স্পষ্টভাবে বলা আছে। সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচনের আগে নির্বাচনকালীন সরকার গঠিত হবে। এই সরকারের পরিসর ছোট করা হবে। সংসদে প্রতিনিধিত্বকারী দল থেকেই এই সরকারের সদস্য নির্বাচিত হবে। সরকার নির্বাচনের সময়ে শুধু রুটিন কার্যক্রম পরিচালনা করবে। কোনো নীতিগত সিদ্ধান্ত নেবে না। সেই সরকার সর্বোতভাবে নির্বাচন কমিশনকে নির্বাচন পরিচালনায় সহায়তা দিয়ে যাবে। সংবিধানের ১২৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী নির্বাচন কমিশন তার দায়িত্ব পালন করবে।

নির্বাচনকালীন সরকারে কোন রাজনৈতিক দল থেকে কাদের ঠাঁই হবে— এ নিয়ে চলছে নানা গুঞ্জন। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি এবং জাসদ এ তিন রাজনৈতিক দলের মন্ত্রী-এমপিদের মধ্যে প্রতিনিধি বাছাই নিয়ে বেশি আলোচনা চলছে। কারণ ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী সদস্যদের মধ্যে সবাই এ সরকারের থাকবে এ নিশ্চয়তা কেউ দিতে পারছেন না। কারণ প্রধানমন্ত্রী ছোট মন্ত্রিসভায় চমক হিসেবে আলোচনায় নেই কিংবা তার আস্থাভাজন এমন কাউকে স্থান দিতে পারেন। এক্ষেত্রে প্রভাবশালী দু-একজন বাদও পড়তে পারেন। এদিক থেকে এগিয়ে রয়েছেন সর্বশেষ মন্ত্রিসভায় ঠাঁই পাওয়া মোস্তাফা জব্বার। একইভাবে জাসদে হাসানুল হক ইনুকে রাখা হলেও সেখানে নিজেকে যোগ্য হিসেবে ঢুকতে মরিয়া মঈনউদ্দীন খান বাদল এমপি।

জাতীয় পার্টির দ্বন্দ্ব চরম পর্যায়ে। এরশাদ ও রওশনপন্থী নিয়ে রয়েছে চরম বিপাকে ক্ষমতাসীন সরকার প্রধান। এরশাদ চান তার অনুসারী হিসেবে দলের মহাসচিব রুহুল আমিন হাওলাদার, কাজী ফিরোজ রশিদ ও জিয়া উদ্দিন বাবলুকে ওই সরকারে ঢোকাতে। তবে সরকারের পছন্দ ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ এবং প্রতিমন্ত্রী মজিবুল হক চুন্নু। অপরদিকে, সংসদে বিরোধী দলীয় নেতা রওশন এরশাদ তার আস্থাভাজন হিসেবে ওই সরকারে দেখতে চান ফখরুল ইমাম এমপিকে।

এছাড়া জাতীয় পার্টির (জেপি) চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মঞ্জু, তরিকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী এমপি ও ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি ও সমাজকল্যাণমন্ত্রী রাশেদ খান মেননকে এ মন্ত্রিসভায় দেখা যেতে পারে।

নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে সংবিধানে যা আছে তা নিয়ে এখনো ধোঁয়াশা কাটেনি। কারো মতে, এটি একেবারেই প্রধানমন্ত্রীর এখতিয়ার। তিনি যাকে ইচ্ছা যেভাবে ইচ্ছা এই সরকারে রাখতে পারেন। সংসদের কর্মকর্তাদের মতে, নির্বাচনকালীন সরকারের অনুমোদন সংসদ থেকে নেওয়া হতে পারে। তবে এখনো এটি গঠন বিষয়ে সংসদ সচিবালয়ে কোনো ধরনের বিল পাঠানো হয়নি।

সংবিধান বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সংবিধান অনুযায়ী একটি সরকার থেকে নির্বাচনের মাধ্যমে আরেকটি সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর হবে। আর নির্বাচনের সময় আগের নির্বাচিত সরকারই তার দায়িত্ব পালন অব্যাহত রাখবে। জাতীয় নির্বাচনের সময়ও বিদ্যমান সরকারই স্বাভাবিক দায়িত্ব পালন করে যাবে। নির্বাচন পরিচালনা করবে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এক্ষেত্রে সরকারের কর্তব্য হবে নির্বাচন অনুষ্ঠানে কমিশনকে সহায়তা করা।

জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টাম-লীর সদস্য ও আইনজীবী ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন বলেন, চলতি অধিবেশনে নির্বাচনকালীন সরকার গঠন হবে। এরই মধ্যে অধিবেশন আহ্বান করা হয়েছে। নির্বাচনকালীন সময়ে প্রধানমন্ত্রী গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেবেন না কিন্তু খণ্ডকালীন সরকার প্রধান হিসেবে তার সিদ্ধান্ত নেওয়ার সুযোগ থাকবে।

আইনজ্ঞ স ম রেজাউল করিম বলেন, সংবিধানে নির্বাচনকালীন সরকারের কোনো বিধান নেই। নির্বাচনের সময় বর্তমান সরকার স্বাভাবিকভাবে দায়িত্ব পালন করে যাবে। বর্তমান নির্বাচিত সরকার পরবর্তী নির্বাচিত সরকারের হাতেই ক্ষমতা হস্তান্তর করবে। নির্বাচনের সময় সরকারের আকার ছোট করতে হবে এমন কোনো বিধান নেই জানিয়ে তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী চাইলে সেটি করতে পারেন। এতে সংবিধানের কোনো ব্যত্যয় ঘটবে না।
আরকেএইচ