ঢাকা শুক্রবার, ২৬শে এপ্রিল ২০২৪, ১৪ই বৈশাখ ১৪৩১


যাকে গনায় ধরিনা সে কিনা আমার বিরুদ্ধে মামলা করছে: শামীম ওসমান


৮ ডিসেম্বর ২০১৯ ০৭:০৪

ছবি সংগৃহীত

শামীম ওসমান জীবিত থাকতে নারায়ণগঞ্জের কোন আওয়ামী লীগ নেতা কর্মীর গায়ে হাত দিয়ে কেউ এক ঘন্টাও শান্তিতে ঘুমাতে পারবে না উল্লেখ করে সাংসদ শামীম ওসমান বলেছেন, সরকারের বিরুদ্ধে দেশ ও দেশের বাইরে সমান ভাবে ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। প্রিয়া সাহা ও খালেদা জিয়ারা দেশের বাইরে ষড়যন্ত্র করছে। আর নারায়ণগঞ্জেও প্রিয়া সাহার ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন দলেরই একজন নারী জনপ্রতিনিধি। যিনি সম্প্রতি দলেরই ৯ জন পরীক্ষিত নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা করেছেন যারা রাজপথের লড়াকু সৈনিক।
শামীম ওসমান বলেন, ২০১৮ সালের ১৬ জানুয়ারী নগরের বঙ্গবন্ধু সড়কে হকারদের সঙ্গে নাসিক মেয়র আইভী ও তার অনুসারিদের সংঘর্ষ হয়। সেখানে মামলায় আমাকে ওই ঘটনার ইন্ধনদাতা উল্লেখ করে দলেরই ৯ জন নেতার বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। শুধু তাই নয় ওই ঘটনায়, উচ্চ আদালতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়, আইন মন্ত্রনালয়, স্থানীয় সরকার মন্ত্রনালয়, পুলিশের আইজিপি, নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার ও সংশ্লিষ্ট থানার ওসিকে বিবাদী করে রিট করা হয়েছে। সরকারি দল করে আইভী স্পষ্ট ভাবে সরকারেরই বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে।
শনিবার দুপুরে নারায়ণগঞ্জের নম পার্কে ফতুল্লা থানা আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনে অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখতে গিয়ে শামীম ওসমান এসব কথা বলেন।
শামীম ওসমান বলেন, গত বুধবার নারায়ণগঞ্জের একটি ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টে ওই মামলার পর দলের নেতা কর্মীরা আমাকে অনুরোধ করে বলে ভাই আপনি কয়েকদিনের জন্য দেশের বাইরে চলে যান। আমরা দেখাতে চাই নারায়ণগঞ্জের রাজপথ কাদের দখলে থাকে। শেখ হাসিনার কর্মীদের নাকি খন্দকার মোশতাকের অনুসারিদের। নেতা কর্মীদের ভাষা বুঝতে পেরেই আমি আজকের সম্মেলনে এসেছি কিছু কথা বলতে।
শামীম ওসমান বলেন, আজকে প্রিয়া সাহারা বিদেশের মাটিতে গিয়ে দেশের বিরুদ্ধে মিথ্যাচার করছে। আর নারায়ণগঞ্জে আমাদের দলের মেয়র দলের পরিক্ষীত নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা করে প্রিয়া সাহাদের ভূমিকায় অবর্তীণ হচ্ছে।
তিনি বলেন, যেহেতু আইভীর সঙ্গে হকারদের সংঘর্ষের ঘটনায় আমাকে (শামীম ওসমান) ইন্ধনদাতা বলা হচ্ছে তাই পুলিশ প্রশাসনের কাছে এমপি হিসেবে নয় আসামী হিসেবে অনুরোধ করে বলছি মামলাটির তদন্ত করেন। তদন্ত করলেই সেদিনের ঘটনার প্রকৃত সত্য বেরিয়ে আসবে। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বুয়েটে আবরার হত্যার ঘটনা যদি সিসিটিভি’র ভিডিও ফুটেজ থেকে সত্য বেরিয়ে আসতে পারে তাহলে নারায়ণগঞ্জে সেদিনের সংঘর্ষের ঘটনারও ভিডিও ফুটেজ রয়েছে। তা দেখলেই সবকিছু স্পষ্ট হয়ে যাবে।
শামীম ওসমান বলেন, সেদিন সংঘর্ষের পর ঘটনাস্থলে গিয়েছিলাম শুধু দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের অনুরোধে। ভাগ্য ভাল যে মেয়র তার মামলায় উল্লেখ করেনি যে, ওবায়দুল কাদেরই ছিল সেই ঘটনার ইন্ধনদাতা।
শামীম ওসমান সম্মেলনে একটি দলিল দেখিয়ে বলেন, আইভীর ও তার বাবার সঙ্গে জামায়াতের নেতাদের গভীর সর্ম্পক রয়েছে যা এই দলিল প্রমাণ করে। শামীম ওসমান বলেন, এই দলিলটি ১৯৭৬ সালের ২১ অক্টোবরের। এই দলিলের মাধ্যমে আইভীর বাবা প্রয়াত পৌর মেয়র আলী আহাম্মদ চুনকা মাত্র ১০ হাজার টাকার বিনিময়ে নগরের মাসদাইরে যুদ্ধাপরাধী আলী আহসান মুজাহিদের কাছে ৩৪ শতাংশ জমি বিক্রি করেছিলেন। ওই জমি ক্রয় করে মুজাহিদ একটি স্কুল গড়ে তোলে। সেই স্কুল এখনও চলছে। ওই ঘটনা বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার মাত্র ১ বছর ৩ মাসের মাথায়। গত বছর নারায়ণগঞ্জ জেলা জামায়াতের আমীর মাওলানা মাঈনুদ্দিন আহমাদ পুলিশের হাতে গ্রেফতারের পর জয়েন্ট ইন্টারগেশন সেলে জিজ্ঞাসাবাদে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী কাছে চাঞ্চল্যকর এই তথ্য প্রদান করে। ওই জামায়াত নেতার বক্তব্য এই দলিলের মাধ্যমেই প্রমাণিত হয় যে আইভী ও তার পরিবারের সঙ্গে জামায়াত-বিএনপির সুনিবিড় সর্ম্পক রয়েছে।
ফতুল্লা থানা আওয়ামীলীগের সভাপতি এম সাইফ উল্লাহ বাদলের সভাপতিত্বে সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি আব্দুল হাই, সাধারণ সম্পাদক আবু হাসনাত শহিদ মোহাম্মদ বাদল মহানগর আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক খোকন সাহা প্রমুখ। উপস্থিত ছিলেন, জেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মীর সোহেল আলী, মহানগর আওয়ামীলীগের যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক শাহ নিজাম, সাংগঠনিক সম্পাদক জাকিরুল আলম হেলাল, সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামীলীগের সভাপতি মজিবুর রহমান, ফতুল্লা থানা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক শওকত আলী, সিদ্ধিরগঞ্জ থানা যুবলীগের সভাপতি মতিউর রহমান মতি প্রমুখ। সম্মেলনে কণ্ঠ ভোটে ফতুল্লা থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি এম সাইফুল্লাহ বাদল এবং সাধারণ সম্পাদক শওকত আলী একই পদে পুনরায় নির্বাচিত হন।