ঢাকা বৃহঃস্পতিবার, ২৮শে মার্চ ২০২৪, ১৫ই চৈত্র ১৪৩০


চোলাই মদ তৈ‌রি না করার প্র‌তিশ্রু‌তি দিল রায়ঘা‌টির আদিবাসীরা


২০ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ১১:৩৯

রাজশাহী জেলা মোহনপুর থানাধীন কেশরহাট পৌরসভার রায়ঘা‌টি গ্রা‌মে ২২ টি আদিবাসী পরিবার বসবাস ক‌রে। এ পাড়ার প্রায় সকল আ‌দিবাসী অশি‌ক্ষিত এবং কর্ম‌ বিমুখ ও অলস। প্র‌তি‌দি‌নের জী‌বিকা নির্বা‌হের জন্য তারা নিয়‌মিত চোলাই মদ তৈরী ক‌রে বিক্রয় ক‌রে। যা বর্তমান যুব সমাজ খে‌য়ে নষ্ট হ‌য়ে যা‌চ্ছে এবং সমা‌জে না রকম বিশৃঙ্খলা সৃ‌ষ্টি কর‌ছে। এই আ‌দিবাসী পাড়ায় প্র‌তি‌দিন কমপ‌ক্ষে ২ থে‌কে ৩ শত জন মাদকসে‌বী যায় মাদক গ্রহণ করার উ‌দ্দো‌শ্যে। আজ রায়ঘা‌টি আদিবাসী পাড়ায় গিয়ে সেখানে অবস্থিত ২২ টি পরিবারের ১১৩ জন সদস্যের সংগে একটি উঠান বৈঠকে চোলাই মদ তৈরী না করার জন্য আ‌লোচনা সভা করা হয়।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন কেশরহাট পৌর মেয়র শ‌হিদুজ্জামান শহীদ, মোহনপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ও‌সি) মোস্তাক আহ‌মেদসহ সঙ্গীয় ফোর্স, সাওতাল সম্প্রদায়ের প্রধান ভারতী রাণী। আদিবাসী পরিবারের শ্রী সু‌রে‌নের নবম শ্রেণী‌তে পড়ুয়া ছে‌লে শ্রী কি‌শোর কুমার ব‌লে, আমার বাপ দাদারা দেশভাগের আগে কাজের উদ্দেশ্য রাজশাহীর বিভিন্ন অঞ্চল হতে এসে অন্য মানু‌ষের জমিতে বসতি স্থাপন করে । এখানে বর্তমানে ২২ টি পরিবারে ১১৩ জন বসবাস করে। ১১৩ জন সদস্যের মধ্যে প্রাইমারী স্কুলগামী ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা ৭ জন, উচ্চ বিদ্যালয়গামী ২ জন

আ‌লোচনার শুরু‌তে ভারতী রাণী বলে, আমা‌দের কোন জ‌মিজমা নেই । আমরা অন্য মানু‌ষের জ‌মি‌তে বাস ক‌রি। আমরা সরকারী ভা‌বে তেমন কোন সু‌যোগ সু‌বিধা পায়না। আমা‌দের পেট আ‌ছে, কিস্তির টাকা লা‌গে, আমা‌দের অসুক/‌বিসুক আ‌ছে, বাচ্চাকাচ্চার খরচ আ‌ছে। আমরা তো সামান্য চোয়া‌নি বা চোলাই মদ তৈ‌রি ক‌রে বি‌ক্রি ক‌রি। আমরা তো কারও কোন ক্ষ‌তি ক‌রিনা। আমরা কাউ‌কে চুয়া‌নি খে‌তেও ব‌লিনা। ওরাই আ‌সে খে‌তে, না পাই‌লে খুব খে‌পে যায়। ওরা খে‌তে আ‌সে তাই আমরা বি‌ক্রি ক‌রি। ও‌দের আস‌তে মানা ক‌রেন আর আমা‌দের খাওয়া, কাপড়/‌চোপড়, অসুক/‌বিসুক ও কি‌স্তির টাকা দেন তাহ‌লে আমরা চুয়া‌নি বি‌ক্রি করব না। আদিবাসী সম্প্রদা‌য়ের অন্য সদস্যরাও তখন হাঁ হাঁ হাঁ ব‌লে সমর্থন জানা‌চ্ছিল। এ সময় কেশরহাট পৌর মেয়র ব‌লেন, ই‌তিপূ‌র্বে চুয়া‌নি না করার জন্য তোমা‌দের নি‌য়ে অনেক আ‌লোচনা করা হ‌য়ে‌ছে। তোমরা বি‌ভিন্ন দা‌বী দাওয়া ক‌রেছ। আমরা সেগু‌লো পূরণ ক‌রে‌ছি। তোমা‌দের ১০ টা ভ্যান গা‌ড়ি কি‌নে দেওয়া হ‌য়ে‌ছে, সে ভ্যান গু‌লো তোমরা বি‌ক্রি ক‌রে খে‌য়ে নি‌য়েছ। তোমাদের এ পাড়া কেশরহা‌টের নিকট। তোমা‌দের বি‌ভিন্ন সময় কা‌জের ব্যবস্তা ক‌রে দেওয়া হয় কিন্তু তোমরা প‌রে আর সে কাজ করনা, পা‌লি‌য়ে আস। সরকারী যত সু‌যোগ/সু‌বিধা আ‌সে, সে সমস্ত সু‌যোগ/সু‌বিধা আ‌মি তোমা‌দের দিই। পাশাপা‌শি অনেক সময় নি‌জে‌দের প‌কেট হ‌তে তোমা‌দের সাহায্য ক‌রি। তোমা‌দের পূজার সময় সা‌র্বিক সহ‌যো‌গিতা ক‌রি। বি‌য়ে সা‌ধির সময়ও সহ‌যো‌গিতা ক‌রি। কোন ব্যাপা‌রে আমরা তোমা‌দের সহ‌যো‌গিতা ক‌রিনা আজ তোমরা সবার সাম‌নে বল সেটা। আমার বাবা মরহুম কা‌সেম গাইন অত্র এলাকায় দীর্ঘ ৩৬ বছর চেয়ারম্যা‌নি ক‌রে‌ছেন। তি‌নিও তোমা‌দের বাপ চা‌চা‌দের এবং তোমা‌দের সহ‌যো‌গিতা ক‌রে‌ছেন। আজ তোমরা বলছ তোমরা কোন সু‌যোগ/সু‌বিধা পাওনা। এত বড় মিথ্যা কথা বল‌তে তোমার বি‌বে‌কে বাধল না। তোমরা আস‌লে অলস, কাজ কর‌তে চাওনা। (এ সময় স্থানীয় মানুষজনেরাও বল‌ছিলেন, ঠিক ব‌লে‌ছেন। এরা আস‌লে কাজ কর্ম ক‌রে খে‌তে পছন্দ ক‌রেনা। চোলাই মদ তৈ‌রি ক‌রে বি‌ক্রি কর‌লে অল্প টাকায়, কম ক‌ষ্টে অনেক বে‌শি লাভ হয়, তাই এরা চোলাই মদ তৈ‌রি ক‌রে বি‌ক্রি ক‌রে।) ‌মেয়র আরও ব‌লেন, আজ থে‌কে চোলাই মদ তৈ‌রি করা সম্পূরর্ণভা‌বে নি‌ষিদ্ধ করা হল। তোমা‌দের সক‌লের কা‌জের ব্যবস্থা ক‌রে দেওয়া হ‌বে, আজ থে‌কে আল‌সেমী ছে‌ড়ে তোমরা কা‌জে মনে‌যোগী হও। তোমা‌দের যে কোন ধর‌ণের সমস্যায় আ‌মি যেমন পূ‌র্বে তোমা‌দের পা‌শে ছিলাম, ঠিক তেম‌নি এখনও থাকব। এ সময় আ‌দিবাসী সম্প্রদা‌য়ের প্রধান ভারতী রাণী তার ভুল বুঝ‌তে পা‌রে ও মেয়‌র মহাদ‌য়ের প্র‌তি কৃতঙ্গতা প্রকাশ ক‌রে এবং সবাই মি‌লে কথা দেয় যে, তারা আর চোলাই মদ তৈ‌রি ক‌রে বি‌ক্রি কর‌বে না। উপ‌স্থিত জনতাসহ সবাই করতা‌লি দেয়। আ‌লোচনার এক পর্যা‌য়ে ওসি মোস্তাক আহম্মেদ ব‌লেন, আজ‌কের এ আ‌লোচনা সভায় উপ‌স্থিত থাক‌তে পে‌রে আ‌মি ও আমার সঙ্গীয় ফোর্সেরা খুব খু‌শি। ত‌বে আজ‌কে আপনারা আ‌দিবাসীরা মেয়র মহা‌দ‌য় ও আমা‌দের নিকট যে ওয়াদা দি‌লেন তা অক্ষ‌রে অক্ষ‌রে পালন কর‌বেন। আ‌মিও বি‌ভিন্ন ভা‌বে আপনা‌দের সহ‌যো‌গিতা করব। আপনারা সব সময় প‌রিষ্কার প‌রিচ্ছন্ন থাক‌বেন। ছে‌লে/‌মে‌য়ে‌দের স্কু‌লে প‌াঠা‌বেন। ম‌নে রাখ‌বেন, চোলাই মদ বি‌ক্রি ক‌রে জীব‌নের ম‌ান উন্নয়ণ হ‌বে না। জীবন মান উন্নয়ণ কর‌তে চ‌াই‌লে ছে‌লে‌মে‌য়ে‌দের লেখাপড়া শি‌খি‌য়ে কর্মমুখী ক‌রে গ‌ড়ে তুল‌তে হ‌বে। এর প‌রে যারা চোলাই মদ তৈ‌রি ক‌রে বি‌ক্রি কর‌বে, তা‌দের কোন প্রকার ছাড় দেওয়া হ‌বে না। আপনারা ভাল কাজ কর‌লে পুরুষ্কার পা‌বেন। আর মন্দ কাজ কর‌লে শা‌স্তি পাবেন।

সবশে‌ষে পুনরায় কেশরহাট পৌর মেয়র ও মোহনপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোস্তাক আহম্মেদ তাদের অভাব অভিযোগের কথা মনোযোগ সহকারে শোনেন এবং তাদের সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।

এ সময় অন্যান্যদের মাঝে উপস্থিত ছিলেন, কেশরহাট পৌরসভার সকল কাউ‌ন্সিলর বৃন্দ, সাংবাদিক ও মানবাধিকারকর্মী কামাল হো‌সেন, রি‌পোন হো‌সেন, নতুন সময় টেলিভশনের স্টাফ রিপোটার আনসার তালুকদার স্বাধীন, আরও অনেক গন্যমান্য ব্য‌ক্তিবর্গ।

নতুনসময়/আইকে