ঢাকা বুধবার, ২৪শে এপ্রিল ২০২৪, ১২ই বৈশাখ ১৪৩১


নারায়ণগঞ্জে রোহিঙ্গাদের পাসপোর্ট তৈরির মূল হোতার সন্ধান


১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০৯:০৬

ফাইল ফটো

রোহিঙ্গাদের পাসপোর্ট ও ভূয়া নাগরিক সনদ তৈরির জালিয়াতি চক্রের ছয়জনকে নারায়ণগঞ্জ থেকে আটকের পর তাদের মূল হোতার সন্ধান পেয়েছে র‌্যাব। আটককৃতদের জিজ্ঞাসাবাদে বেরিয়ে এসেছে তাদের মূল হোতাদের বেশ কয়েকজনের নাম এবং পাসপোর্ট সংশ্লিষ্ট অবৈধ কর্মকান্ডের ব্যাপারে নানা চাঞ্চল্যকর তথ্য।

গত ১১ সেপ্টেম্বর এমনই এক চক্রের সন্ধানে নারায়ণগঞ্জের জালকুড়িতে অভিযান চালায় র‌্যাব-২ এর একটি অভিযানিক দল। তারা এখানে আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস সংলগ্ন কয়েকটি কম্পিউটারের দোকানে অভিযান চালিয়ে ভূয়া পাসপোর্ট ও বিপুল পরিমান (পঁচিশ হাজারেরও বেশি) জাতীয় পরিচয়পত্রের জাল সনদসহ হাতেনাতে আটক করে এই চক্রের ছয়জনকে।

র‌্যাব জানিয়েছে, আটক ছয়জনকে জিজ্ঞাসাবাদে বেরিয়ে এসেছে এই চক্র কীভাবে এসব কাজ সম্পাদন করেন, কারা কারা এর সাথে জড়িত এবং এই চক্রের মূল হোতাকে। জিজ্ঞাসাবাদে আটকৃকতরা র‌্যাবকে জানিয়েছেন নারায়ণগঞ্জে রোহিঙ্গাদের পাসপোর্ট তৈরির মূল হোতা সৌদি প্রবাসী এক ব্যক্তি। আর পুরো প্রক্রিয়ায় জড়িত সৌদি দূতাবাস, সিটি করপোরেশন, ইউনিয়ন পরিষদ ও জন্ম নিবন্ধনের কাজে নিয়োজিত কর্মকর্তারা।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে র‌্যাবকে আটককৃতরা জানিয়েছে, সংঘবদ্ধ একটি চক্র অবৈধভাবে জন্মসনদ তৈরি করে আসছে, যার মূলহোতা হচ্ছেন বায়েজিদ নামের একজন সৌদি প্রবাসী ব্যক্তি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বাংলাদেশের সদস্যদের কাছে তিনি তথ্য আদান প্রদান করতেন। বাংলাদেশ থেকে কাগজপত্র তৈরি করে তারা পাঠাতো বায়েজিদের কাছে। এরপর তৈরি হতো রোহিঙ্গাদের পাসপোর্ট। সৌদি আরবের দূতাবাস কর্মকর্তার সহায়তায় একটি বিশেষ অ্যাপসের মাধ্যমে এই কাজটি করতো তারা। এর সাথে জন্ম নিবন্ধন অধিদফতরের বেশ কিছু কর্মকর্তাও জড়িত রয়েছেন বলে জানতে পেরেছে র‌্যাব-২ এর সদস্যরা।

আটককৃতরা র‌্যাবকে আরও বলেন, আমাদের একজন বস আছেন যার নাম মোস্তফা কামাল। তিনি জেদ্দা অ্যাম্বাসিতে কাজ করেন। উনিই পরিচয় করিয়ে দিয়েছে বায়েজিদ সাহেবের সাথে।

র‌্যাব জানায়, বিশেষভাবে পারদর্শী এ চক্রকে চিহ্নিত করণের কাজটি বেশ কঠিন ছিলো। সৌদি দূতাবাস কর্মকর্তা, সিটি করপোরেশন, ইউনিয়ন পরিষদ ও জন্ম নিবন্ধন কর্মকর্তারাও এ কাজে জড়িত রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এই প্রক্রিয়ায় রোহিঙ্গাদের পাশাপাশি অনেক সাজাপ্রাপ্ত আসামিও পাসপোর্ট তৈরি করে বিদেশে পাড়ি দিচ্ছে। এই অবৈধ কাজে যারা যারা জড়িত আছেন তাদের ব্যাপারেও তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে।

র‌্যাবের কোম্পানি কমান্ডার মহিউদ্দিন ফারুকী গণমাধ্যমকে জানান, এখানে সৌদি থেকে হাইকমিশনের সাথে যে দালাল চক্রের পরিচয় আছে তারাই এই পথ দেখিয়ে দেয়। শুধু রোহিঙ্গারা নয়, ফেরারি আসামি যারা পালিয়ে বেড়াচ্ছে তারাও পাসপোর্ট করে পালিয়ে যাচ্ছে।

র‌্যাব গণমাধ্যমকে জানায়, মানবতার খাতিরে রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে আশ্রয় দেওয়া হয়েছিলো। কিন্তু সেই রোহিঙ্গাদের অনেকেই এদেশী পাসপোর্ট ও নাগরিক সনদপত্র ব্যবহার করে বাংলাদেশী নাগরিক পরিচয়ে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে যাচ্ছেন। আর তাদের এই অবৈধ কাজে সহযোগিতা করছিলেন বাংলাদেশেরই কিছু অসাধু ব্যক্তির একটি সংয়ঘবদ্ধ চক্র।

র‌্যাব জানায়, এসব রোহিঙ্গারা মধ্যপাচ্যের বিভিন্ন দেশে গিয়ে নানা ধরনের অপরাধ কর্মকান্ডে জড়িয়ে পড়ছেন এবং আইন শৃংখলা বাহিনীর হাতে ধরা পড়ছেন বাংলাদেশী নাগরিক পরিচয়ে। এতে আন্তর্জাতিকভাবে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হচ্ছে। এই চক্রের সাথে জড়িত অন্যান্য সদস্যদের গ্রেফতারে অভিযান চলছে বলে র‌্যাব জানিয়েছে।