ঢাকা মঙ্গলবার, ২২শে এপ্রিল ২০২৫, ১০ই বৈশাখ ১৪৩২


কঠোর নিরাপত্তার মধ্যেও রাজধানীতে আসছে মাদক


১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০২:২১

মাদকদ্রব্য
সারাদেশ থেকে মাদক আসছে রাজধানী ঢাকায়। প্রশাসনের কঠোর নজরদারির মধ্যেও মাদক চোরাচালান করছে মাদক ব্যবসায়ীরা। তারা এই মাদক চোরাচালানের জন্য সহজ, নিরাপদ ও ঝুকিমুক্ত মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করছে কুরিয়ার সার্ভিস ও ডাকযোগকে।
 
প্রশাসনের সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে মাদক চোরাচালানের পদ্ধতি। আর নতুন নতুন পদ্ধতি আবিষ্কার করছে তারা। নারিকেলের ভিতরে, ডিমের খোঁসার ভিতর এবং হেয়ার অয়েল ক্রিমের বোতলে ভিতরে করে আসছে এসব মাদক। যা প্রশাসনকে হতবাক করে দিচ্ছে।
 
সুন্দরবন কুরিয়ার সার্ভিসের কয়েকটি শাখায় ঘুরে দেখা যায়, গ্রাহকদের কাছ থেকে কার্টুন ভর্তি মালামাল রিসিভ করছে কর্তৃপক্ষ। কিন্তু তাদের কাছে পরীক্ষা করার কোনো যন্ত্র নেই। এই বক্সে কি যাচ্ছে তা বোঝার কোনো উপায়ও নেই কর্তৃপক্ষের কাছে।
 
এ সময় কয়েকজনের সঙ্গে কথা হলে নতুনসময়ের প্রতিনিধিকে তারা জানান, গ্রাহকদের কাছ থেকে মালামাল গ্রহণ করার সময় বক্সে কী মাল যাচ্ছে জিজ্ঞেস করি। কিন্তু এই বক্সে কী মাল যাচ্ছে তা পরীক্ষার করার কোনো যন্ত্র নেই আমাদের কাছে। ফলে বক্সে কি যাচ্ছে তা আমরা বুঝতে পারি না।
 
কুরিয়ার সার্ভিস এর মতোই একই চিত্র দেখা যায় জিপিও পার্সেল শাখায় এখানেও মালামালের বক্স রিসিভ করছে। কিন্তু এটিতে কী যাচ্ছে তা পরীক্ষা করার যন্ত্রও নেই তাদের কাছে।
 
এ সময় দেখা যায় জিপিওর মূল ভবনের বাইরে পশ্চিম পাশে এক ভদ্রলোক এই কার্টুনগুলো ঠিকানা লিখে কসটেপ দিয়ে মুড়ে পাঠানোর উপযোগী করে দেয়। তার কাছেও পরীক্ষা করার কোন যন্ত্র নেই। কিন্তু সে চাইলে ভেতরের মালামাল দেখতে পারেন।
 
এখানে নিয়মিত বসেন ৪/৫ জন লাইসেন্স ধারী ব‍্যক্তি এই কাজ করে যাচ্ছে। লাইসেন্স ছাড়া এখানে কাউকে বসতে দেয়া হয় না বলে জানান তারা। তাদের লাইসেন্স আছে। আর এই কার্টুন করার কারণে গ্রাহকদের কাছে যার কাছ থেকে যা পারে সম্মানী নিয়ে থাকেন।
 
মালামাল রিসিভ কাউন্টারের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা জানান, সকল মালামাল এখানে এনে প‍্যাকেট করার বাধ‍্যকতা থাকলেও কার্যকর তেমন কিছু নেই।
 
কুরিয়ার সার্ভিস প্রেরকের কাছ থেকে মালামালের চালান বা ভোটার আইডি কার্ডের ফটোকপি জমা নিয়ে থাকলেও জিপিও পার্সেল শাখা কিছুই জমা নেন না। সব দায়িত্ব কাস্টমসের বলে জানা যায়।
 
জিপিওর প্রসাশনিক কর্মকর্তা কালাম পাসা নতুনসময়ের প্রতিনিধিকে জানান, গ্রাহকদের কাছ থেকে মালামাল গ্রহণের সময় জিপিওতে কোনো মালামাল চেক করা হয় না এবং চেক করার মেশিনও আমাদের এখানে নেই। এ মালামাল সব বিমান বন্দর কাস্টম হাউজে চেক করে তারপর ডেলিভারি দেওয়া হয়।
 
তিনি বলেন, আর আমরা গ্রাহকদের কাছ থেকেও কোনো ভোটার আইডি কার্ড বা চালানোর গ্রহণ করি না এবং যদি কোনো মালামাল ফেরত আসে তবে তার টাকা ফেরত দেওয়া হয় না। কিন্তু মালামাল গ্রাহকের কাছে ফেরা হয়।
 
কুরিয়ার সার্ভিসের অপারেশন পরিচালক আবিদুর রহমান নতুনসময়ের প্রতিনিধিকে জানান, আমরা এখন খুব সতর্কতার সহিত গ্রাহকদের কাছ থেকে মালামাল গ্রহণ করছি। তাদের ভোটার আইডি কার্ড এবং মালের চালানও করছি।
 
তিনি বলেন, এ বিষয়ে প্রশাসনকে আরও সচেতন হতে হবে। আমাদের কাছে কোন মালামালের বক্স সন্দেহ হলে আমরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে জানাই। এখন আমরা মালামাল অনেক সময় খুলে চেক করে দেখি। কিন্তু মালামাল চেক করার কোনো যন্ত্রপাতি আমাদের কাছে নেই।
 
এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপ-পুলিশ কমিশনার মিডিয়া এবং পাবলিক রিলেশন্স অফিসার মাসুদুর রহমান জানান, মাদকের ব্যাপারে আমরা সব সময় সচেতন এবং তীক্ষ্ণ দৃষ্টি রাখছে যেন কোনোভাবেই মাদক চোরাচালান না হয়।
 
কিন্তু কুরিয়ার সার্ভিস জিপিও ব্যাপারে মালামাল গ্রহণ করা নিয়ে কোনো নির্দেশনা আছে কিনা সেটা আমার জানা নেই। এটা পুলিশ হেডকোয়ার্টাস ভালো বলতে পারবে।
 
উল্লেখ্য, এই কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে ঢাকায় আসছে মাদক। গত (১০ সেপ্টেম্বর) ইথিয়োপিয়া থেকে বাংলাদেশে আসে আমদানি নিষিদ্ধ ১ হাজার ৬০০ কেজি "খাত" নামক মাদক। যার আনুমানিক মূল্য ২ কোটি ৩৭ লক্ষ ৯৫ হাজার ৪ শত টাকা। এর আগে (২৭ আগস্ট) চট্টগ্রাম থেকে আসে ইয়াবা। রাজধানীর মতিঝিল দিলকুশা সুন্দরবন কুরিয়ার সার্ভিসের শাখা থেকে রিসিভ করতে আসা ৪ জনকে ৪০ হাজার পিস ইয়াবাসহ গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব-১০। যার আনুমানিক বাজার মূল্য প্রায় ২ কোটি টাকা।
 
একেএ