বর্তমান সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়: সুজন

গোলটেবিল বৈঠকে নেতারা বলেন, রাজনৈতিক সরকারের অধীনে কখনো সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হওয়া সম্ভব নয়। ইতিহাস সাক্ষী দেয় তত্ত্বাবধায়ক ছাড়া দেশে কোনো নির্বাচন নিরপেক্ষ হয় নি। আর এ বিষয়ে সকলকে সচেতন হতে হবে।
রোববার (১৬ সেপ্টেম্বর) সকাল ১০টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ সংশোধন ও সুষ্ঠু নির্বাচন শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা এসব কথা বলেন।
বদরুল আলম মজুমদার বলেন, নির্বাচন আয়োজনে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে সরকারের সদিচ্ছা। প্রশাসন ও নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষতার প্রয়োজন আছে। কিন্তু সরকার না চাইলে কখনোই সুষ্ঠু গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের আয়োজন করা সম্ভব নয়।
সুজনের সাবেক সমন্বয়ক আলী ইমাম মজুমদার বলেন, সরকার চাইলেই একমাত্র সুষ্ঠু গ্রহণযোগ্য নির্বাচন সম্ভব। তাই সুষ্ঠ নির্বাচনের জন্য সরকারের সদিচ্ছা প্রয়োজন। নির্বাচন কমিশনার যদি অকার্যকর হয় তাহলে কর্মকর্তাদের পক্ষে সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজন করা কখনোই সম্ভব নয়।
তিনি বলেন, বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনের পরে প্রতিটি আন্দোলনে বাঙালি সক্রিয় ছিলেন। আবার বাঙালির পিঠে দেয়াল ঠেকে গেলে বাঙালি ঠিকই বেরিয়ে আসবে।
নির্বাচনে সাংবাদিকদের প্রবেশ বিধান থাকলেও পুলিশ এবং সরকারদলীয় লোকজন ঢুকতে না দেওয়ায় ঘটনায় পরিস্থিতি তুলে ধরতে পারেন না সাংবাদিকরা এমন এক প্রশ্নের জবাবে গোলটেবিলে অন্যতম আলোচক হাফিজ উদ্দিন খান বলেন, দেশে কোন আইনের শাসন নেই এবং সরকার ও অনিয়ন্ত্রিত। ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আমার বাসায় হামলা হলো আমি একটা জিডিও করতে পারলাম না।
গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, নির্বাচনের আগে অনেকগুলো আইন সংশোধন করা হয়েছে যাতে সাধারণ ভোটারদের হয়রানি করার সুযোগ রয়েছে। যে আইনকে সরকার অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে।
তিনি বলেন, সরকার নিবন্ধন আইন এমনভাবে তৈরি করেছে যেখানে জনগণের অধিকার বঞ্চিত হবে। এই আইনে বলা হয়েছে পর পর দুইবার যদি কোনো রাজনৈতিক দল নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করে তাহলে তাদের নিবন্ধন বাতিল হয়ে যাবে। নির্বাচনের আগে এই সব আইনগুলোকে সরকার হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে যাচ্ছে।
গণফোরামের নির্বাহী সম্পাদক সুব্রত চৌধুরী বলেন, দেশে এখন কন্টোল ডেমোক্রেসি চলছে। ক্ষমতায় থাকলে এক কথা আর ক্ষমতার বাইরে থাকলে আরেক কথা বলে রাজনৈতিক দলের নেতারা।
তিনি বলেন, যেখানে একজনের ইশারা ছাড়া কিছুই ঘটে না। সেখানে নিরপেক্ষ নির্বাচন হওয়া কখনোই সম্ভব নয়। জাতীয় নির্বাচন তো দূরের কথা, ইউনিয়ন নির্বাচন নিরপেক্ষ হওয়া সম্ভব না।
সচেতন নাগরিক হিসেবে এস এম আকরাম বলেন, রাজনৈতিক নেতারা যদি মনে করেন নির্বাচনে হেরে গেলে দেশ ছেড়ে চলে যেতে হবে। তাহলে এখানে আইন করে কোন লাভ নেই। এখানে সুষ্ঠু নির্বাচন হবে না।
তিনি বলেন, আমরা আইনি শাসনে নেই। আমরা শাসকের আইনে আছি। এই সরকারকে রেখে কখনোই গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হওয়া সম্ভব নয়।
অ্যাডভোকেট সৈয়দ রিজওয়ানা হাসান বলেন, ক্ষমতায় পরিবর্তন আসলে কি শাসন ব্যবস্থায় পরিবর্তন আসবে? জনগণের জীবন মানে পরিবর্তন আসবে কিনা?
তিনি বলেন জনগণের ক্ষমতা প্রতিষ্ঠা করতে হলে সকল পাবলিক এজেন্সি যেমন পুলিশ, বিজিবি, র্যাব, নির্বাচন কমিশনসহ প্রত্যেকটি সরকারি দপ্তর নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন না করলে দেশে কোন কিছুই সম্ভব নয়। এবং এর মাধ্যমে আমাদেরকে এমন একটি নির্বাচন প্রসেসিং করতে হবে যা স্থায়ী হয়।
তিনি আরো বলেন, এখন প্রতিটা সেক্টরে দলীয়করণ করা হয়েছে। যেখানে অর্থমন্ত্রী নির্বাচনের তফসিল কবে ঘোষণা করা হবে এবং নির্বাচন কবে হবে তারিখ বলে দেন। সেখানে নির্বাচন কমিশনের কি প্রয়োজন আছে। এ বিষয়ে আবার নির্বাচন কমিশনারও নাখোশ।
গোলটেবিল বৈঠকে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) এর সমন্বয়কারী দিলীপ কুমার সরকার। এ সময় গোলটেবিল বৈঠকে আরো উপস্থিত ছিলেন, এস এম আকরাম, ঢাবির প্রফেসর সি আর আবরার সহ বিভিন্ন সংগঠনের নেতাকর্মীরা।
আইএমটি