ঢাকা মঙ্গলবার, ২২শে এপ্রিল ২০২৫, ১০ই বৈশাখ ১৪৩২


পুকুরে ইলিশ চাষের স্বপ্ন দেখছেন গবেষকরা


১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ১৪:২৩

সম্প্রতি গবেষকরা পুকুরে ইলিশ চাষের  স্বপ্ন দেখছেন। ইলিশের পূর্ণাঙ্গ জীবনরহস্য উন্মোচন পর এমন দাবি করেছেন ময়মনসিংহের বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা। এই গবেষকদের দাবি, এখন থেকে ইলিশের জীবনের গতিপথ ও বিচরণের রহস্য উন্মোচনের মাধ্যমে জানা যাবে, কীভাবে ইলিশের স্বাদ ঠিক রেখে সব গুণাগুণসহ উৎপাদন বাড়ানো সম্ভব।

অবশ্যই পুকুরে ইলিশ চাষের সম্ভাবনা নিয়ে ১৯৮৮ সাল থেকে চার ধাপে গবেষণা করেছে বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট। তবে ওই গবেষণায় পুকুরে ইলিশ চাষে সফলতা আসেনি। এই প্রসঙ্গে মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট বলছে, আরো গবেষণা করলে হয়তো পুকুরে সৌখিনভাবে ইলিশ চাষ করা গেলেও বাণিজ্যিকভাবে  সম্ভব নয়।

তবে, গবেষণায় যে তথ্য পাওয়া গেছে, তারই আলোকে এখনই পুকুরে ইলিশের চাষের স্বপ্ন দেখা ভুল হবে বলে মনে করছেন জিনোম সিকোয়েন্সিং অ্যান্ড অ্যাসেম্বলি টিমের সমন্বয়ক ও বাকৃবির ফিসারিজ বায়োলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. সামছুল আলম।

প্রসঙ্গত, দীর্ঘ তিন বছরের ধরে করা জিনোম গবেষণার মাধ্যমে এর জীবনরহস্য উদঘাটিত হয়েছে বলে গত ৮ সেপ্টেম্বর (শনিবার) এক সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন ময়মনসিংহের বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) মৎস্য বিজ্ঞানীরা।

এই গবেষক দলের মতে, ইলিশের জীবনরহস্য উন্মোচন হওয়ায় বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ইলিশের ওপর কী প্রভাব পড়ছে এবং এর ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে খুব দ্রুত জানা যাবে।

এদিকে, ১৯৮৮ সালে সরকারি অর্থায়নে মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট চাঁদপুরের পুকুরে ইলিশ চাষের প্রথম উদ্যোগ ব্যর্থ হলে ১৯৯৫ সালে প্রকল্পটি বাতিল করা হয়। এরপর ২০০৪-০৫ অর্থবছরেও একই উদ্যোগ ব্যার্থ হয়।

এরপর ২০১০-১১ এবং ২০১২-১৩ অর্থবছরে ‘জাটকা সংরক্ষণ, জেলেদের বিকল্প কর্মসংস্থান ও গবেষণা’ প্রকল্পের অধীনে গবেষণা শুরু হয়। তখন গবেষণার জন্য নদী-সাগর থেকে ৮-১২ সেন্টি মিটার সাইজের ২ হাজার ২০০ ইলিশের পোনা সংগ্রহ করে ইনস্টিটিউটের ৩টি পুকুরে ছাড়া হয়। এর একবছর পর মাছগুলো পরীক্ষা করে দেখা যায়, মাছের বৃদ্ধির হার খুবই কম। ডিমগুলোও অপরিপক্ব। পরবর্তী সময়ে ২০১৫-১৬ সালে ওয়ার্ল্ড ফিস সংস্থার ইকোফিশ প্রকল্পের অধীনে ইউএসএইডের অর্থায়নে আবারও গবেষণা শুরু হয়। কিন্তু সেটিও সফল হয়নি।

 ‘এখন আমরা যে গবেষণা করেছি, তা যদি প্রয়োগ করা না হয় তাহলে মানুষের কোনও কাজে আসবে না। তবে আমরা এখন পর্যন্ত স্পষ্ট হয়েছি, আমাদের গবেষণায় পাওয়া তথ্য প্র্যাকটিক্যালি যদি অ্যাপ্লাই করা যায়, তাহলে স্বাদ ও মান ঠিক রেখে ইলিশের উৎপাদন বৃদ্ধি করা সম্ভব বলে মনে করেন জিনোম সিকোয়েন্সিং অ্যান্ড অ্যাসেম্বলি টিমের সমন্বয়ক ও বাকৃবির ফিসারিজ বায়োলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. সামছুল আলম।

ইলিশের জীবনরহস্য উন্মোচন হওয়ায় বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ইলিশের ওপর কী প্রভাব পড়ছে, এর ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে খুব দ্রুত জানা যাবে বলে মন্তব্য করেছেন গবেষকদলের অন্য এক সদস্য বায়োটেকনোলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. শহিদুল ইসলাম।

ইলিশের জিনোম বিন্যাস উদঘাটনে পৃথক একটি গবেষণার নেতৃত্ব দিচ্ছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণ রসায়ন ও অণুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক হাসিনা খান বলেন, ‘গবেষণা তো মাত্র শুরু। এখনও অনেক পথ এগোতে হবে।’

পুকুরে ইলিশ চাষের সম্ভাবনা বিষয়ে জানতে চাইলে মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের ইলিশ গবেষক ড. আনিছুর রহমান বলেন, ‘আমরা ২০১০-১৩ অর্থবছরে নদী ও সাগর থেকে ৮-১২ সেন্টিমিটার সাইজের ইলিশের পোনা এনে ইনস্টিটিউটের পুকুরে ছাড়ি। একবছরের মধ্যে ওই মাছগুলো বেড়ে প্রায় ৩০০ গ্রাম হয়। এই বৃদ্ধির হার খুবই কম। মাছের পেটের ডিমগুলো ছিল অপরিপক্ব।

আনিছুর রহমান বলেন, ওই অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে পরবর্তী সময়ের গবেষণায় পুকুরের ইলিশগুলোকে প্রাকৃতিক খাবার তৈরি করে দিয়ে দেখেছি। এর ফলে আগের চেয়ে কিছুটা ভালো হলেও তা বাণিজ্যিকভাবে চাষ করার মতো নয়। তবে, পুকুরে ইলিশ চাষ একেবারেই অসম্ভব তা বলবো না।

এসএমএন