ঢাকা শুক্রবার, ২৯শে মার্চ ২০২৪, ১৫ই চৈত্র ১৪৩০


টাঙ্গাইলে রিকশাচালককে পেটানো সেই পুলিশ প্রত্যাহার


১৫ মে ২০১৯ ০২:০৭

নতুনসময় ছবি

রিকশাচালকে পুলিশ সুপার সঞ্জিত কুমার রায় নগদ টাকা তুলে দেন ও উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন টাঙ্গাইল প্রতিনিধি টাঙ্গাইলে রোজাদার রিকশাচালককে পেটানো সেই পুলিশ প্রত্যাহার টাঙ্গাইলে সেলিম মিয়া (৩৫) নামের এক রোজাদার রিকশাচালককে জনতার সামনে পেটানোর ঘটনায় পুলিশের সেই ড্রাইভারকে (কনস্টেবল) ক্লোজ করা হয়েছে।

সোমবার রাতেই ওই গাড়িচালক আবুল খায়েরকে ক্লোজ করে পুলিশ লাইন্সের সংযুক্ত করা হয়েছে।

অপরদিকে, আহত ওই রিকশাচালকের সকল চিকিৎসার ব্যয়ভারের দায়িত্ব নিয়েছেন পুলিশ সুপার। এ লক্ষ্যে মঙ্গলবার দুপুরে জেলা পুলিশ সুপারের সভাকক্ষে ওই রিকশাচালকে পুলিশ সুপার সঞ্জিত কুমার রায় নগদ টাকা তুলে দেন।

এর আগে সোমবার সকালে এক রোজাদার রিকশাচালককে টাঙ্গাইল শহরের আকুর-টাকুর পাড়া টাঙ্গাইল প্রেসক্লাবে সামনে বেধড়ক মারেন পুলিশের ওই ড্রাইভার। মুহূর্তের মধ্যেই ফেসবুকে বিষয়টি ভাইরাল হয়ে যায়। পরে বিষয়টি পুলিশের নজরে আসে। আহত ওই রিকশাচালক টাঙ্গাইল সদর উপজেলার রসুলপুর গ্রামের মোখছেদ আলীর ছেলে।

সেলিম মিয়া বলেন, আমি টাঙ্গাইল শহরের স্টেডিয়াম মার্কেট থেকে এক যাত্রীকে নিয়ে নিরালা মোড়ের দিকে যাচ্ছিলাম। কিছুক্ষণ পর পথিমধ্যে টাঙ্গাইল প্রেসক্লাবের সামনের রাস্তায় পৌঁছলে মোড় ঘুরাচ্ছিলাম। তখন নিরালামোড়গামী পুলিশের একটি গাড়ি আমাকে ওভারটেক করে আমার সামনে এসে থামে। তখন ওই গাড়ি থেকে পুলিশের পোশাক পরা এক লোক এসে আমাকে বলে, তোর গাড়ি চালানো ‘রং’ হয়েছে। তুই মোড় ঘুরাইছিস সিগন্যাল না মেনে। তুই মোড় ঘুরানোর সময় বাম হাত দেস নাই কেন? তিনি বলেন, তখন আমি বলি, স্যার আমার ভুল হয়েছে। পরে পুলিশের গাড়ি থেকে নেমে গাড়ি চালক আমাকে লাঠি দিয়ে মারে। এতে আমার হাতে প্রচণ্ড আঘাত পেয়েছি। বর্তমানে আমার হাত ফুলে গেছে। কোনো কারণ ছাড়াই আমাকে এভাবে মারলো।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক প্রত্যক্ষদর্শী জানান, চালক আবুল খায়ের গাড়ি থেকে নেমে এসে ওই রিকশাচালককে লাঠি দিয়ে মারধর করেন। এ সময় ওই রিকশাচালক চিৎকার করে কাঁদতে থাকে। পুলিশের ওই গাড়িচালক তাকে কোনো শান্তনা বা সহানুভুতি না দেখিয়ে চলে যান। পুলিশের গাড়ি চালককের ওই মারধরের ঘটনাটি সাংবাদিক নওশাদ রানা সানভী মুঠোফোনে ধারণ করেন। যা পরবর্তীতে অনলাইনে ভাইরাল হয়ে যায়।

রিকশাচালক সেলিম মিয়া আরো বলেন, আমি ২০০৩ সালে বিদেশে চাকরি করার জন্য গিয়েছিলাম। কিন্তু সেখানে সুবিধা করতে না পারায় ২০০৯ সালে দেশে এসে আমি রিকশা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করছি। বর্তমানে আমার ৩ ছেলে রয়েছে।

তিনি আরো বলেন, আমাকে এসপি স্যার নগদ টাকা দিয়েছেন। আমি এতে খুশি হয়েছি। আমি এ ঘটনায় সুষ্ঠু বিচার চাই। এ ব্যাপারে সেলিম মিয়ার ছোট ভাই শরিফ বলেন, সেহরী করে আমার ভাই কোনো কিছু না বলেই রিকশা নিয়ে বের হয়। পরে জানতে পারি আমার ভাইকে পুলিশ মেরেছে।

পুলিশ সুপার সঞ্জিত কুমার রায় বলেন, এ ঘটনায় রাতেই ওই পুলিশ সদস্যকে ক্লোজ করা হয়েছে। এছাড়া ওই রিকশাচালককে একজন ডাক্তার সার্বক্ষণিক খোঁজ খবর নিবেন। সেখান তার চিকিৎসা প্রয়োজন সেখানেই তার চিকিৎসা করানো হবে। এছাড়া তিনি যে যতদিন রিকশা চালাতে পারবে না, ততদিন তার পরিবারের খবর খরচ বহন করা হবে।

এ সময় পুলিশর অন্যন্য ঊদ্ধর্তন কর্মকর্তাসহ ওই রিকশাচালকের ভাই এবং সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মাসুদ মুনীরকে প্রধান করে এক সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর পুলিশের গাড়ি চালকের বিষয়ে স্থায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে পরিবর্তন ডটকমকে জানান অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএসবি) শফিকুল ইসলাম।

তিনি বলেন, আশা করছি দুই একদিনের মধ্যেই তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়া যাবে। পুলিশ লাইন্সের ওই ড্রাইভাকে সব ধরনের কাজ থেকে বিরত রাখা হয়েছে।'

নতুনসময়/আল-্েম