ঢাকা বৃহঃস্পতিবার, ২৮শে মার্চ ২০২৪, ১৫ই চৈত্র ১৪৩০


মাদকে সয়লাব রাজশাহী, একাধিক পুলিশ সদস্যদের ছত্রছায়ায় মাদক কারবারিরা


৩০ জুলাই ২০২০ ০০:১৪

ছবি সংগৃহীত

রাজশাহী মহানগরীর বোয়ালিয়া থানার বিভিন্ন এলাকা এখন মাদকে সয়লাব। মাদকের কারণে উঠতি বয়সের যুবকরা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। অনেক মাদক ব্যবসায়ী দীর্ঘদিন ধরে মাদক ব্যবসা করলেও পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়না বলে অভিযোগ রয়েছে স্থানীয় বাসিন্দাদের পক্ষ থেকে। মাদক ব্যবসায়ীরা বাইরে ঘোরাফেরার অন্যতম কারণ হিসেবে স্থানীয়রা বলছেন, বোয়ালিয়া থানার তিন এসআই ও বোসপাড়া পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জের ছত্রছাত্রায় চলছে মাদকের রমরমা ব্যবসা। 

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নগরীর বোয়ালিয়া থানাধিন পাচানীমাঠ, পঞ্চবটি, খরবোনা, কেদুর মোড় নদীর পাড়, হাদির মোড় নদীর পাড়, শহিদ মিনার এলাকায় মাদকের ব্যবসা হয়। পাশাপাশি লুকু ও কালুর জুয়ার আসর চলছে। এই এলাকার মাদক ব্যবসায়ীরা হলো, পাচানী মাঠ এলাকার কলি, ডলার, রাসেল। পঞ্চবটি এলাকার

মাদক সম্রাজ্ঞী কাননী। খরবোনা নদীর পাড় এলাকার কুখ্যাত মাদক ব্যবসায়ীরা হলো, আলীর স্ত্রী শেফালী, হারুর স্ত্রী শেফালী, জনি স্ত্রী মুন্নি, বিলকিস, সাহিদ, আখলি, আলিফ, জিয়ারুল, লুকু, জার্মান ও তার ভাই আরমান, নয়ন, চোর সিন্ডিকেট সর্দার ও মাদক ব্যবসায়ী বাচ্চু, তসলি ও তার জামাই ড্যানি। কেদুর মোড়ের ফেন্সিডিলের ডিলার সাত্তার। হাদির মোড় মাজারের দক্ষিনে নদীর পাড় এলাকার মাদক ব্যবসায়ীরা হলো: মোমীন ও তার ভাই কালু, নয়ন, সবুজ, জিবন, জিল্লু। তালাইমারী শহিদ মিনার এলাকার গাঁজা ব্যবসায়ী কমেলা একাই পুরো এলাকার ঝামিলা। ২৭ বছরের মাদকের ব্যবসা তার কিন্তু একটি মাত্র মাদকের মামলা তার নামে। স্থানীয়রা বলছে, কৌশলী কমেলা ম্যানেজ করে চলায়, তার নামে মাদকের মামলা ১টি। অবাককরা ঘটনা হলো বোসপাড়া পুলিশ ফাঁড়ির বয়স ২৮ আর কমেলার মাদকের ব্যবসার বয়স ২৭। পুলিশের দেয়া মামলা ১টি, আর পাবলিক ধরে দেয়া মামলা ১টি।
এসব মাদক ব্যবসায়ীদের যেসব পুলিশ অফিসাররা ছত্রছায়া দেন তাদের মধ্যে অন্যতম হলো, বোসপাড়া পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ টিএসআই মনিরুল ইসলাম (নিঃ)/৬৪, বিপি নং-৬৬৮৬০৬৫০৯২,

শিক্ষাগত যোগ্যতা: ৮ম শ্রেণী, কন্সটেবল ভর্তিও তারিখ-৩১-৩-১৯৮৬, আরএমপিতে যোগদান-১০-৯-১৮, টিএসআই পদে পদোন্নতি পায়-২১-৫-১৭। বোসপাড়া ফাঁড়িতে যোগদান করেন-১৯-৯-২০১৮, নিজ বাড়ি রাজশাহী কোর্ট স্টেশন। পূর্বে দীর্ঘদিন ধরে হাবিলদার হিসেবে মহানগরীর কাশিয়াডাঙ্গাসহ গুরুত্বপূর্ণ ফাঁড়ির ইনচার্জ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। মাঝখানে তিনি পদোন্নতি নিয়ে চলে যান। বর্তমানে তিনি আবারো আরএমপিতে যোগদান করেন। এই কর্মকর্তা যোগদানের পর থেকে আরো বেপরোয়া হয়ে উঠেন। স্থানীয় একাধিক মাদক ব্যবসায়ী নাম না প্রকাশ করার শর্তে অভিযোগ করে বলেন, মাদক ব্যবসা ছাড়লেও সমস্যা হয়। কারণ কোনকিছু হলেই এসব পুলিশ আমাদের ধরেন। আবার মাসোয়ারাও নেন। তাহলে আমরা কোনদিকে যাবো। ফাঁড়ির ইনচার্জকে মাসোয়ারা দিয়েই ব্যবসা করতে হয়।
একই ফাঁড়ির এএসআই ইউসুফ আলীর বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ রয়েছে। মাদক ব্যবসায়ীদের সাথে সখ্যতা গড়ে তুলে অর্থেও বিনিময়ে মাদক কেনাবেচায় সহায়তা করছেন বলে স্থানীয়দের পক্ষ থেকে অভিযোগ উঠেছে। এএসআই ইউসুফ আলীর বিরুদ্ধে চলতি বছরের ১৯ জুলাই বাংলাদেশ পুলিশ হেডকোয়াটার্স (এআইজি) জালাল উদ্দিন স্বাক্ষরিত আরএমপির কমিশনারকে মাদক সংশ্লিষ্ট বিষয়ে তদন্তের নির্দেশ দেন।
নগরীর বোয়ালিয়া মডেল থানার আরেক এসআই (নিঃ) মো. গোলাম মোস্তফা বিপি নম্বর-৮৪০৪০৮৩২৭৬। ২০০৪ সালে তিনি পুলিশ কন্সটেবল পদে যোগদান করেন। তিনি আরএমপিতে আসেন ২০০৭ সালের ২৪ মে। এএসআই পদে পদোন্নতি পান ২০১২ সালের ৭ জুলাই। ২০১৭ সালের ১ জানুয়ারী এসআই পদে পদোন্নতি পান। তিনি আরএমপির পিওএম বিভাগে ছিলেন ২০০৮ সাল পর্যন্ত। পুলিশ ট্রেনিং স্কুলে ছিলেন ২০১২ সাল পর্যন্ত। বোয়ালিয়া মডেল থানায় যোগদান করেন ২০১২ সালের ১৫ জুলাই। তিনি সেখানে থাকেন ২০১৪ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারী পর্যন্ত। ২০১৭ সালের ২ ফেব্রুয়ারী তিনি

আবার বোয়ালিয়া মডেল থানায় এসআই হিসেবে যোগদান করেন। এরপর থেকে তিনি বোয়ালিয়া থানায় কর্মরত রয়েছেন। চাকুরী জীবনের ১০ বছরই তিনি আরএমপিতে কর্মরত রয়েছেন। এ থানায় যোগদানের পর থেকেই তিনি বেপরোয়া হয়ে উঠেন। দীর্ঘদিন এক থানায় থাকার সুবাধে সিনিয়র কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে অর্থ বাণিজ্য শুরু করেন। তার বিরুদ্ধে আরো অভিযোগ রয়েছে তিনি দীর্ঘদিন আরএমপিতে থাকার সুবাধে স্থানীয় মাদক ব্যবসায়ীদের সাথে সখ্যতা গড়ে তোলাসহ মাদক কেনাবেচায় সহায়তা ও ওয়ারেন্ট তামিল করতে উৎকোচ গ্রহণ করে। এরপরও তিনি স্বপদে বহাল। অনেক মাদক ব্যবসায়ী নাম না প্রকাশ করার শর্তে বলেন, মাসোয়ারা ছাড়া ব্যবসা করা যায়না। টাকা না দিলেই তারা এসে ঝামেলা করে।

এছাড়াও এদের ছত্রছায়া দেন ও মাসোয়ারা নেন বোয়ালিয়া মডেল থানার আরেক এসআই (নিঃ) উত্তম কুমার রায়, বিপি নং-৮৬০৫০৯৯১৪৯ । তিনি পুলিশ কন্সটেবল পদে ২০০৫ সালের ৭ আগস্ট চাকুরীতে যোগদান করেন। তিনি প্রথম আরএমপিতে যোগদান করেন ২০০৫ সালের ৭ আগস্ট। তিনি এএসআই পদে পদোন্নতি পান ২০১৩ সালের ৩০ ডিসেম্বর। এসআই পদে পদোন্নতি পান ২০১৯ সালের ২০ নভেম্বর। আরএমপির বিভিন্ন দপ্তরে কর্মরত ছিলেন। এ ছাড়াও তিনি বোয়ালিয়া মডেল থানায় ২০১৫ সালের ১৪

জানুয়ারী থেকে এ পর্যন্ত কর্মরত রয়েছেন। এএসআই থেকে এসআই পর্যন্ত তিনি এ থানায় কর্মরত। প্রায় ১৩ বছর ধরে তিনি আরএমপিতে রয়েছেন। মাঝখানে বদলি হয়ে গেলেও তিনি অল্প সময়ের মধ্যে আরএমপিতে ফেরেন। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ তিনি দীর্ঘদিন একই কর্মস্থলে থাকার কারণে সমাজের খারাপ লোকজনের সাথে সখ্যতা গড়ে তোলাসহ থানার সিভিল টিমে অবৈধ অপারেশনাল কাজ, ওয়ারেন্ট তামিলে উৎকোচ গ্রহণ ও মাদকদ্রব্য ক্রয়-বিক্রয়কারীদের সাথে জড়িত। এএসআই থাকাকালে তিনি সিনিয়র অফিসারদের ছত্রছায়ায় বেপরোয়া হয়ে উঠেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে উঠা অভিযোগ অস্বীকার করেছেন উল্লেখিত পুলিশ কর্মকর্তারা। তারা বলেন, আমাদের বিরুদ্ধে উঠা অভিযোগ সত্য নয়।

নগর পুলিশের মুখপাত্র গোলাম রুহুল কুদ্দুস বলেন, যদি কারো বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পাওয়া যায় তাহলে তদন্ত করে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।