৮ জনের কাছে বিক্রি, ধর্ষণ করতো ৩ জন

ইসলামিক স্টেট (আইএস) জঙ্গিদের হাতে দীর্ঘ ৪ বছর ধরে বন্দী থাকার পর মুক্তি পান মারিয়াম নামের এক নারী। ২০১৪ সালের দিকে ইরাকের ইয়াজিদি গ্রামগুলো দখল করে নেয় আইএস জঙ্গিরা। আর এরপরেই বন্দী হন মারিয়াম।
মারিয়াম বন্দী থাকা অবস্থায় বেশ কয়েকবার আত্মহত্যার চেষ্টা করলেও তার মায়ের দিকে চেয়ে আত্মবিসর্জন দিতে পারেননি।
মারিয়মের মাও বন্দী আইএস জঙ্গিদের কাছে। মারিয়ম সম্প্রতি পালিয়ে আসতে পারলেও তার মা পালাতে পারেননি। মারিয়ম এখন তার মায়ের কোন খোঁজ পাননা। তিনি জানেননা তার মা কোথায় আছে।
মায়ের কথা মনে করে মারিয়ম বলেন, বন্দী থাকা অবস্থায় মা’র সাথে একবার আমার দেখা করার সুযোগ হয়েছিল। তখন মা’কে প্রতিশ্রুতি দেই যে আত্মহত্যার চেষ্টা করব না। আর এ জন্যই আমি এখনও বেঁচে আছি।
এদিকে স্ত্রীকে ফিরে পেতে চান মারিয়ামের বাবা। তিনি আবেগ জড়িত কন্ঠে বলেন, এমন যদি হতো যে আমার মৃত্যু হলে মারিয়ামের মা ফিরে আসতো, তাহলে সে মৃত্যুই ভালো হতো আমার জন্য।
মারিয়ামের উদ্দেশ্যে তার বাবা বলেন, আমি বলি মারিয়াম যেন ঐ সময়ের (বন্দী থাকাকালীন সময়ের) স্মৃতি ভুলে যায়। সেসব স্মৃতি যত মনে করবে, ততই মানসিক কষ্ট বাড়বে।
তবে, বাবার সেসব কথা মারিয়ামের অতীতের দু:সহ স্মৃতি ভুলতে সাহায্য করে না।
বন্দী দুঃসময়ের কথা স্মরণ করে মারিয়াম বলেন, তারা আমার শরীরে বিস্ফোরক লাগানো একটি আত্মঘাতী পোশাক পড়ায়। তারপর বলে ট্রিগার চেপে দিতে। আইএস যখন আমাকে বন্দী করে তখন আমার বয়স ১২। আমাকে আটজনের কাছে বিক্রি করা হয়। কিন্তু তাদের মধ্যে তিনজন আমাকে ধর্ষণ করতো, বাকিরা আমাকে দাসী হিসেবে ব্যবহার করতো।
আইএস জঙ্গিদের হাতে বন্দী থাকা অবস্থাতে কথা বলায় সমস্যা তৈরি হয় মারিয়ামের। তাকে তার মায়ের কাছ থেকে আলাদা করে দেয়া হয়।
মারিয়ম আরও বলেন, ধরা পড়ার আগে আমার কথা বলতে কোনো সমস্যা হতো না। বন্দী থাকা অবস্থাতে এই সমস্যা শুরু হয়। আমি বহুবার আত্মহত্যা করার চেষ্টা করেছি।
কিন্তু পরে মা’র সাথে দেখা হওয়ার পর আত্মহত্যা করার সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করেন মারিয়াম।
প্রসঙ্গত, ইরাকে মারিয়ামের মত অনেক মানুষই মানসিকভাবে বিপর্যস্ত অবস্থায় জীবনযাপন করেন। গত ৪০ বছরে ইরাকে তিনটি বড় পরিসরের যুদ্ধ, একটি সামরিক অভ্যুত্থান ছাড়াও তথাকথিত ইসলামিক স্টেটের দু'টি অভ্যুত্থান এবং জঙ্গিবাদী মিলিশিয়াদের সাথে সরকার সমর্থিত বাহিনীর গৃহযুদ্ধ হয়েছে।
এছাড়াও ইরাকে প্রায় এক দশক ধরে চলেছে মার্কিন নেতৃত্বাধীন বাহিনীর বিমান হামলা।
প্রায় চার দশক ধরে এরকম একের পর এক সহিংস ঘটনার প্রভাব পড়েছে দেশটির মানুষের মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর।
ইরাকে প্রতি ৩ লক্ষ মানুষের জন্য মনোরোগবিদ বা মানসিক সমস্যার চিকিৎসক রয়েছে মাত্র একজন।
নতুনসময়/এনএইচ