ঢাকা সোমবার, ৭ই এপ্রিল ২০২৫, ২৫শে চৈত্র ১৪৩১


ডানা ছেঁটে দেয়া হতে পারে সালমানের


১৯ নভেম্বর ২০১৮ ১৭:০৫

ফাইল ফটো

তুরস্কের ইস্তাম্বুলে সৌদি কলস্যুলেট এ নিখোঁজ সাংবাদিক জামাল খাশোগিকে হত্যার নেপথ্যে সৌদি রাজপরিবারের সম্পৃক্ততা রয়েছে। ঘটনার পর থেকেই এমন জোরালো গুঞ্জন বিশ্বব্যাপি। বিশেষ করে দেশটির যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের দিকেই এ হত্যাকাণ্ডের তীর। এ নিয়ে সংশয় আরো পরিস্কার করে দিল মার্কিন গুপ্তচর সংস্থা সিআইএ । এই সংস্থাটির হাতে থাকা বিভিন্ন তথ্য-উপাত্তগুলো বিচার-বিশ্লেষণ করেই তারা অনেকটা নিশ্চিত যে সালমানের নির্দেশেই খাশোগিকে হত্যা করা হয়। তবে এ হত্যাকাণ্ডে সালমানের জড়িত থাকার বিষয়টি পুরোপুরি নিশ্চিত হতে আরো কিছু অজানা প্রশ্নের উত্তর খুজে বের করতে হবে। তাহলেই প্রমাণ হবে খাশোগি হত্যার নির্দেশ দাতা কে? যদি এই নিদের্শদাতা সালমান হন তাহলে তার পরিণতি কি হবে?

ওয়াশিংটন পোস্ট বলছে, মার্কিন কর্মকর্তারা এখন বলছেন খাশোগি হত্যার ব্যাপারে বহু প্রশ্নেরই উত্তর এখনো অজানা। সৌদি আরবও এ ঘটনার একটি তদন্ত করছে।

বিবিসির বিশ্লেষক ফ্রাংক গার্ডনার বলছেন, তদন্তের ফল যাই হোক - এ হত্যাকাণ্ডের পর যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের সুনামের ওপর এরইমধ্যে গুরুতর প্রতিক্রিয়া পড়েছে। এর ফলে এমবিএস খ্যাতি পাওয়া যুবরাজ সালমানের কি পরিণতি হতে পারে? সেটাও দেখা দরকার যে খাশোগি খুনের ঘটনা কি ভাবে সৌদি আরবের ভেতরে যুবরাজের অবস্থানকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে।

মাত্র ৩৩ বছর বয়সী যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানকে দেখা হয় লাখ লাখ তরুণ সৌদির ভবিষ্যতের আশার প্রতীক হিসেবে। মনে করা হয় তিনি প্রযুক্তি, কর্মসংস্থান, এবং সার্বিক প্রগতির মাধ্যমে সৌদি আরবকে একবিংশ শতাব্দীতে পৌঁছে দেবেন। কিন্তু খাশোগি খুনের ঘটনার পর যুবরাজ সালমানের সেই অবস্থান কি আর থাকবে? পশ্চিমা দেশগুলোর নেতা থেকে শুরু করে হলিউড পর্যন্ত প্রিন্স মোহাম্মদ বন্দনা চলছিল - কিন্তু এখন অনেকেই গভীরভাবে সন্দেহ করছেন যে এ হত্যাকাণ্ডের পেছনে হয়তো তার হাত ছিল। এর ফলে সৌদি আরবের নেতৃত্ব ২০০১ সালের ১১ই সেপ্টেম্বরের সন্ত্রাসী হামলার পর সবচাইতে গুরুতর রাজনৈতিক সংকটের মধ্যে পড়েছে।

বিশ্লেষক ফ্রাংক গার্ডনার বলছেন, সৌদি আবর হয়তো এটা প্রকাশ্যে স্বীকার করবে না। কিন্তু এটা খুবই সম্ভব যে কোনোভাবে সালমানের ডানা কেটে দেয়া হবে। অর্থৎ তার ক্ষমতা ও প্রভাব অন্তত কিছুটা খর্ব করা হবে। ২০১৭ সালের জুন মাসে বর্তমান বাদশার উত্তরাধিকারী হওয়া মোহাম্মদ বিন সালমানকে যদি তার পদ থেকে একেবারেই সরিয়ে দেয়া হয় - সেটা হবে খুবই নাটকীয় ও বিস্ময়কর। পিতা বাদশা সালমানের এই প্রিয় পুত্রের উপাধি ও মর্যাদা হয়তো অপরিবর্তিত রেখেই কিছু ক্ষমতা চুপিসারে অন্যদের হাতে তুলে দেয়া হবে। এর ফলে অনেকটা আগের মতোই ক্ষমতার ভাগাভাগির ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনা হবে। এতে হয়তো দেশটিতে একটা স্থিতিশীলতা আসবে বলে মনে করা হচ্ছে। হয়তো এর ফলে যুবরাজ সালমানের শত্রু-সমালোচকের সংখ্যাও কমে আসতে পারে। রাষ্ট্রের সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়ায় এমন আরো সৌদিদের নিয়ে আসা হবে। কারণ, গত বছর জুন মাস থেকে সৌদি আরবে কার্যত এক ব্যক্তির শাসন চলছে।

ওয়াশিংটন পোস্টের এক প্রতিবেদনে বলা হয় যে, সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানই আসলে সাংবাদিক জামাল খাশোগিকে হত্যার নির্দেশ দিয়েছিলেন। সৌদি যুবরাজের কাছ থেকে যে এ হত্যার নির্দেশ এসেছে, সেটি সিআইএ ধারণা করছে একটি ফোন কলের ভিত্তিতে।

যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের ভাই প্রিন্স খালেদ বিন সালমান, যিনি যুক্তরাষ্ট্রে সৌদি রাষ্ট্রদূত, তিনি নাকি জামাল খাশোগিকে ফোন করেছিলেন। যুবরাজের নির্দেশেই তিনি খাশোগিকে ফোন করে আশ্বাস দেন যে, ইস্তাম্বুলের সৌদি কনস্যুলেটে তিনি যেতে পারেন, তার কোন বিপদ হবে না।

সিআইএ'র ঘনিষ্ঠ সূত্রগুলো বলছে, তারা এর প্রমাণগুলো পরীক্ষা করে দেখেছে। মার্কিন কর্মকর্তাদের ধারণা, এমন একটি হত্যাকান্ড কেবলমাত্র যুবরাজের অনুমতি নিয়েই হতে পারে।

ফ্রাংক গার্ডনার বলছেন, হত্যাকাণ্ডের দিনে ঘাতক দলটি যুবরাজ সালমানের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ এক ব্যক্তিকে ফোন করেছিল বলে গোয়েন্দারা তথ্য পেয়েছেন। তিনি বলছেন, এসব তথ্য অত্যন্ত গুরুতর কিন্তু এতেও একেবারে নির্ভুলভাবে কিছু প্রমাণ হয় না।

তবে রাষ্ট্রদূত প্রিন্স খালেদ বিন সালমান দাবি করছেন, জামাল খাশোগির সঙ্গে এক বছর ধরে তার কোন যোগাযোগ হয়নি

তবে সৌদি আরব এরকম দাবিকে মিথ্যা বলে বর্ণনা করেছে। তারা বলছে, যুবরাজ এই হত্যা পরিকল্পনা সম্পর্কে কিছুই জানতেন না।

পররাষ্ট্র দফতরের মুখপাত্র হিদার নোয়ার্ট বলছেন, মার্কিন সরকার এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌছেছে এমন ইঙ্গিত দিয়ে যেসব খবর বেরুচ্ছে -সেগুলো নির্ভুল নয়। তিনি বলেন হোয়াইট হাউস এ ঘটনার ব্যাপারে দোষী ব্যক্তিদের বিচারের আওতায় আনা এবং 'প্রাসঙ্গিক তথ্য' বের করার জন্য কাজ করে যাবে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এ ব্যাপারে সিআইএ'র শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলেছেন বলে জানিয়েছে হোয়াইট হাউস। সূত্র: বিবিসি বাংলা


আরকেএইচ