ঢাকা রবিবার, ৮ই সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৫শে ভাদ্র ১৪৩১


ইরানের নতুন প্রেসিডেন্ট সংস্কারপন্থী মাসুদ পেজেশকিয়ান


৬ জুলাই ২০২৪ ১০:০৩

ছবি: সংগৃহীত

ইরানের প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন সংস্কারপন্থী মাসুদ পেজেশকিয়ান। তিনি ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির আশীর্বাদপুষ্ট রক্ষণশীল সাঈদ জালিলিকে বিশাল ব্যবধানে হারিয়ে ইরানের ১৪ তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন। ইরানের রাষ্ট্রায়ত্ত সংবাদ সংস্থার বরাত দিয়ে এ তথ্য জানিয়েছে বার্তা সংস্থা এএফপি। 

 

গত সপ্তাহে অনুষ্ঠিত ইরানের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রথম দফায় কোনো প্রার্থীই ৫০ শতাংশের বেশি ভোট নিশ্চিত করতে পারেননি। তাই নিয়ম অনুসারে নির্বাচন গড়ায় দ্বিতীয় দফায় তথা রান-অফে। এই রান-অফে অংশ নেন প্রথম দফার নির্বাচনে সবচেয়ে বেশি ভোট পাওয়া দুই প্রার্থী মাসুদ পেজেশকিয়ান ও সাঈদ জালিলি। 

 

প্রথম দফার নির্বাচনেও মাসুদ পেজেশকিয়ান এগিয়েছিলেন সাঈদ জালিলির চেয়ে। ইরানের নির্বাচন কমিশনের দেওয়া তথ্যানুসারে, প্রথম দফার নির্বাচনে সংস্কারপন্থী হিসেবে পরিচিত মাসুদ পেজেশকিয়ান ১ কোটি ৪ লাখ ১৫ হাজারে বেশি ভোট পেয়ে এগিয়েছিলেন। প্রতিদ্বন্দ্বী খামেনি সমর্থিত কট্টরপন্থী সাঈদ জালিলি পেয়েছিলেন ৯৪ লাখ ৭৩ হাজার ২৯৮ ভোট। 

 

ইরানের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রকাশিত তথ্য অনুসারে, দ্বিতীয় দফার ভোটে মাসুদ পেজেশকিয়ান পেয়েছেন প্রায় ১ কোটি ৬৩ লাখ ভোট। বিপরীতে তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী সাঈদ জালিলি পেয়েছেন মাত্র ১ কোটি ৩০ লাখের বেশি ভোট। অর্থাৎ মাসুদ পেজেশকিয়ান প্রায় ৩৩ লাখ ভোটের ব্যবধানে খামেনি সমর্থিত প্রার্থী সাঈদ জালিলিকে হারিয়েছেন। 

কট্টরপন্থীদের ব্যাপক নির্বাচনী প্রচারণার মাঝে নারীর অধিকার, অধিক সামাজিক স্বাধীনতা, পশ্চিমের সঙ্গে বৈরিতায় সতর্কতা ও অর্থনৈতিক সংস্কারের প্রতি সমর্থন জানিয়ে ইরানের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলেন মধ্যপন্থী মাসুদ পেজেশকিয়ান। 

দেশে সংস্কারের পক্ষে থাকলেও ইরানের শক্তিশালী নিরাপত্তাব্যবস্থা ও শাসকদের মোকাবিলা করার কোনো উদ্দেশ্যের কথা জানাননি পেজেশকিয়ান। এ ছাড়া ইরানের ধর্মতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার প্রতি বিশ্বাস রয়েছে মধ্যপন্থী এই সাবেক আইনপ্রণেতার। তাঁর সঙ্গে সাবেক প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসির দৃষ্টিভঙ্গির বৈপরীত্য আছে। 

কয়েক বছর আগেও ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির অনুগত থাকলেও সাম্প্রতিক সময়ে তাঁর সমালোচক বনে যান পেজেশকিয়ান। তিনি টেলিভিশন বিতর্ক ও সাক্ষাৎকারে খামেনির নীতির বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতা না করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। বিশ্লেষকদের মতে, তাঁর এমন অবস্থানে শহুরে মধ্যবিত্ত ও তরুণ ভোটারদের আরও বিচ্ছিন্ন করে তোলার ঝুঁকি রয়েছে। এসব গোষ্ঠী আর নিছক সংস্কার চায় না, বরং তারা এখন পুরো ইসলামিক প্রজাতন্ত্রকে সরাসরি চ্যালেঞ্জ জানায়। 

 ২০০৮ সাল থেকে ইরানের পার্লামেন্ট সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন পেজেশকিয়ান; যিনি জাতিগত সংখ্যালঘু আজেরি ও নৃতাত্ত্বিক সংখ্যালঘুদের অধিকারের প্রতি সমর্থন জানান। একই সঙ্গে তিনি রাজনৈতিক ও সামাজিক ভিন্নমতাবলম্বীদের দমনে সরকারি সংস্থার ভূমিকার তীব্র সমালোচনা করেন। 

 ২০২২ সালে হিজাব পরার বিধান লঙ্ঘনের অভিযোগে ইরানের নৈতিকতা পুলিশের হেফাজতে মারা যান মাহসা আমিনি নামের এক তরুণী। তাঁর মৃত্যুর ঘটনায় কর্তৃপক্ষের কাছে ব্যাখ্যা চেয়েছিলেন পেজেশকিয়ান। মাহসা আমিনির মৃত্যু ঘিরে ইরানজুড়ে কয়েক মাস ধরে টানা অস্থিরতা তৈরি হয়। 

কিন্তু চলতি মাসের শুরুর দিকে তেহরান বিশ্ববিদ্যালয়ের এক বৈঠকে সরকারবিরোধী বিক্ষোভের সঙ্গে জড়িত অভিযোগে আটক শিক্ষার্থীদের বিষয়ে প্রশ্নের জবাবে পেজেশকিয়ান বলেছেন, ‘রাজনৈতিক বন্দীদের নিয়ে আমার কিছুই করার সুযোগ নেই। আমি যদি কিছু করতে চাই, তাহলে দেখব আমার কোনো কর্তৃত্ব নেই।’ 

আশির দশকে ইরান-ইরাক যুদ্ধের সময় পেজেশকিয়ান সরাসরি যুদ্ধের ময়দানে যোগ দিয়েছিলেন। সেই সময় তিনি আহত সেনাদের চিকিৎসা করেছিলেন। খামেনির দ্বিতীয় মেয়াদে ২০০১ থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত ইরানের স্বাস্থ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছিলেন তিনি। ১৯৯৪ সালে এক গাড়ি দুর্ঘটনায় স্ত্রী ও এক সন্তানকে হারিয়েছিলেন পেজেশকিয়ান। এরপর তাঁর দুই ছেলে ও এক মেয়েকে একাই বড় করেছেন। সেই সময় তিনি বলেছিলেন, আর কখনোই বিয়ে করবেন না।