ঢাকা রবিবার, ৮ই সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৫শে ভাদ্র ১৪৩১


সময়ের আগেই কেন নির্বাচন ঘোষণা করলেন ঋষি সুনাক?


৩ জুলাই ২০২৪ ১৪:৫৬

ছবি: সংগৃহীত

যুক্তরাজ্যের জাতীয় নির্বাচনের শেষ সময়ের প্রচারণায় ব্যস্ত সময় পার করছেন প্রার্থীরা। আগামীকাল বৃহস্পতিবার হাউস অব কমন্স হিসেবে পরিচিত ব্রিটিশ পার্লামেন্টের ৬৫০ সদস্যের ভাগ্য নির্ধারণ করবেন ভোটাররা। এর ভিত্তিতে নতুন সরকার গঠন হবে।

 

প্রত্যাশিত সময়ের আগেই অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া এই নির্বাচনের ফল কী হতে পারে এ নিয়ে নানা জরিপ ও অনুমান দেখা যাচ্ছে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলোতে।

 

নিয়ম মাফিক পরবর্তী সাধারণ নির্বাচন ২০২৫ সালের জানুয়ারির মধ্যে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। অনেকে শরতে নির্বাচন হতে পারে এমন অনুমান করলেও বাস্তবে তা হয়নি। যুক্তরাজ্য ৬৫০টি নির্বাচনি কেন্দ্র বা এলাকায় বিভক্ত। এই প্রত্যেক নির্বাচনি এলাকার ভোটাররা একজন সাংসদ নির্বাচন করেন যারা তাদের হয়ে 'হাউস অফ কমন্স'-এ প্রতিনিধিত্ব করেন।

 

নির্বাচনি ময়দানে লড়াই করতে নামা প্রার্থীদের মধ্যে অধিকাংশ কোনো না কোনো রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি। তবে কেউ কেউ আবার স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবেও ভোটে লড়েন। আপাতত ভোটের ময়দানে লড়তে আসা সব প্রতিদ্বন্দ্বীরাই প্রচারে ব্যস্ত। এরইমধ্যে আসন্ন নির্বাচন ঘিরে জনতার জরিপে উঠে এসেছে বিভিন্ন ট্রেন্ডও।

 

গত ১৪ বছর ধরে যুক্তরাজ্যের ক্ষমতায় রয়েছে সুনাকের কনজারভেটিভ পার্টি। তবে জনমত জরিপ অনুযায়ী, ২০২১ সাল থেকে ঋষি সুনাকের কনজারভেটিভ পার্টির জনপ্রিয়তা কমছে।

 

দলের কিছু রাজনীতিবিদ মনে করেন, পরিস্থিতির খুব একটা উন্নতি হবে না এবং ভোটারদের মত প্রকাশের যে প্রবণতা দেখা যাচ্ছে তাতে নির্বাচন পিছিয়ে দিলে কনজারভেটিভ পার্টির পরাজয় আরো খারাপভাবে হওয়ার ঝুঁকি তৈরি হতে পারে। এক কথায় বলতে গেলে পরিস্থিতি এমন যে যা করার (নির্বাচন) তা এখনই করতে হবে নয়তো অবস্থা আরো বিরূপ হতে পারে।

 

কেন এখন ভোট হওয়ার বিষয়ে উদ্যোগী ঋষি সুনাক, সে প্রসঙ্গে কথা বলতে গিয়ে একটা উল্লেখযোগ্য বিষয় তুলে ধরেছেন ক্রিস ম্যাসন। তার কথায়, এখন প্রধানমন্ত্রী অবশ্য দেখাতে পারবেন তার কোনো একটা উদ্দেশ্য অন্তত পূরণ হয়েছে বা আপাতদৃষ্টিতে সেটা হওয়ার পথে।

 

মুদ্রাস্ফীতির নিরিখে বর্তমান অবস্থাকে তার (ঋষি সুনাকের) সাফল্য হিসাবে চিহ্নিত করা যেতে পারে। তবে এটা যে সরকারের কর্মকাণ্ডের উপর নির্ভর করে এমনটা নয়। তবে সাধারণত মুদ্রাস্ফীতি আকাশছোঁয়া হলে সরকারকেই দোষারোপ করা হয়ে থাকে। তাই আশা করা যেতে পারে যে যখন মুদ্রাস্ফীতির হার কমের দিকে তখন সেই সফলতার ভাগ নেয়ার চেষ্টা তারা (কনজারভেটিভ পার্টি) করবে। এবং ইতিমধ্যে তাই হয়েছে।

 

একই সঙ্গে তিনি বলেছেন, বৃহত্তর অর্থনৈতিক চিত্রটাও কিছুটা উজ্জ্বল বলে মনে হচ্ছে।

 

কোন দল কোথায় দাঁড়িয়ে?

 

সাম্প্রতিক জনমত জরিপ বলছে নির্বাচনি প্রচারের শুরু থেকেই সুনাকের কনজারভেটিভ পার্টি তাদের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী লেবার পার্টির থেকে বেশ খানিকটা পিছিয়ে। জরিপ অনুযায়ী, লেবার পার্টি ধারাবাহিকভাবে ৪০% এর উপরে এর উপরে জনসমর্থন পেয়ে এসেছে। এখন এমনটা হতেই পারে যে জনমত জরিপ সঠিক নয়। ঋষি সুনাকও আশা করবেন নির্বাচনি প্রচার এগোনোর সঙ্গে সঙ্গে ক্ষমতায় থাকাকালীন তার সাম্প্রতিক সাফল্য এবং দলের বিষয়ক সিদ্ধান্ত কনজারভেটিভ পার্টির পক্ষে খেলা ঘুরিয়ে দিতে পারবে।

 

মুদ্রাস্ফীতির হারে হ্রাস ও তার দলের নীতির উপর মনোনিবেশের মতো ইস্যু নির্বাচনি ময়দানে প্রভাব ফেলবে বলে তিনি আশাবাদী। যদিও বিষয়টা আপাতত যা দাঁড়িয়েছে তাতে লেবার পার্টি উল্লেখযোগ্য 'লিড' নিয়েই তাদের প্রচার শুরু করেছে বলে মনে করা হচ্ছে৷

 

জরিপ অনুযায়ী, এখনো পর্যন্ত অভিবাসন বিরোধী ডানপন্থী দল রিফর্ম ইউকে তৃতীয় স্থানে রয়েছে। তবে তাদের সমর্থন সারা দেশে সমানভাবে ছড়িয়ে রয়েছে। ফলে সেই সমর্থনকে সংসদের আসনে পরিণত করা কঠিন হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।

 

অন্যদিকে, লিবারল ডেমোক্র্যাটস - যারা আগে দেশের তৃতীয় বৃহত্তম দল ছিল তারা জরিপ অনুযায়ী ভোটের নিরিখে গড়ে প্রায় ১০%-এ মোটামুটি ধারাবাহিকভাবে রয়েছে।

 

তাদের টার্গেট করা আসনে মনোনিবেশ করে আসন্ন নির্বাচনে ভাল ফলের বিষয়ে আশাবাদী লিবারল ডেমোক্র্যাটস।

 

মূল প্রতিদ্বন্দ্বী কারা?

 

বর্তমানে যে দুই দল সবচেয়ে বেশি ভোট পেতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে তারা হলো ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ পার্টি ও লেবার পার্টি।

 

৪৪ বছরের ঋষি সুনাক কনজারভেটিভ পার্টির নেতৃত্ব দিচ্ছেন। ২০২২ সালে যখন তিনি প্রধানমন্ত্রী হন তখন তার বয়স ছিল ৪২। আধুনিক সময়ে ব্রিটেনের সবচেয়ে কম বয়সের প্রধানমন্ত্রী সুনাক।

 

শুধু তাই নয়, তার হাত ধরেই এই প্রথমবার কোনো ব্রিটিশ-ভারতীয় ব্যক্তি প্রধানমন্ত্রীর পদে অধিষ্ঠিত হয়েছেন। অন্যদিকে, লেবার পার্টির নেতৃত্বে রয়েছেন স্যার কিয়ের স্টারমার। তার বয়স ৬১ বছর।

 

২০২০ সালে জেরেমি করবিনের পর দলের নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য নির্বাচিত হন তিনি। এর আগে ‘ক্রাউন প্রসিকিউশন সার্ভিস’-এর প্রধান ছিলেন স্টারমার। পাবলিক প্রসিকিউশনের পরিচালক হিসাবেও দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি।

 

নির্বাচনের আগে সংসদের চিত্র

 

নির্বাচনের আগে সংসদ 'ডিসলভ' করার বা 'ভেঙে দেওয়ার' জন্য রাজাকে আনুষ্ঠানিকভাবে আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। আগামী বৃহস্পতিবার সংসদ ভেঙে দেওয়া হবে। এর ফলে পদমর্যাদা হারাবেন এমপি বা সাংসদরা। পদে থাকতে চাইলে আবার নির্বাচিত হওয়ার জন্য প্রার্থী হিসাবে তাদের ভোটের প্রচার চালাতে হবে। শতাধিক সাংসদ ইতোমধ্যে আগামী নির্বাচনে সরে দাঁড়ানোর কথা জানিয়েছেন।

 

প্রসঙ্গত, এই সময় সরকার একটি প্রাক-নির্বাচনি অবস্থায় প্রবেশ করে, যা প্রচার চলাকালীন মন্ত্রী ও বিভাগীয় কার্যকলাপকে সীমাবদ্ধ করে দেয়।