রাশিয়ায় উড়োজাহাজ বিধ্বস্তে প্রিগোজিন নিহত

মস্কোর দক্ষিণাঞ্চলে বিধ্বস্ত একটি উড়োজাহাজের যাত্রীদের তালিকায় নাম রয়েছে রাশিয়ার ভাড়াটে বাহিনী ওয়াগনার গ্রুপের প্রধান ইয়েভজেনি প্রিগোজিনের। বুধবার মস্কো থেকে সেন্ট পিটার্সবার্গ যাওয়ার সময় টাভার অঞ্চলে বেসরকারি মালিকানাধীন উড়োজাহাজটি বিধ্বস্ত হয়। এতে ৩ ক্রুসহ দশ জন নিহত হয়েছেন। তবে প্রিগোজিন নিহত হওয়ার বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যায়নি। ধারণা করা হচ্ছে তিনি উড়োজাহাজে ছিলেন।
রুশ সংবাদমাধ্যম স্পুটনিক নিউজ রাশিয়ার জরুরি পরিস্থিতি মন্ত্রণালয়কে উদ্ধৃত করে বলেছে, মস্কো থেকে সেন্ট পিটার্সবাগু যাওয়ার পথে টাভার অঞ্চলে বুধবার একটি বেসরকারি মালিকানাধীন উড়োজাহাজ বিধ্বস্ত হয়েছে। এতে উড়োজাহাজে থাকা দশ জন নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে ক্রু ছিলেন তিন জন।
রুশ বার্তা সংস্থা তাসকে উদ্ধৃত করে রয়টার্স বলেছে, রাশিয়ার বেসামরিক বিমান কর্তৃপক্ষ (রোসাভিয়াতসিয়া) বলেছে, দুর্ঘটনার শিকার উড়োজাহাজের যাত্রীদের তালিকায় প্রিগোজিনের নাম রয়েছে।
রোসাভিয়াতসিয়াকে উদ্ধৃত করে স্পুটনিকও বলেছে, ওয়াগনার প্রধান ইয়েভজেনি প্রিগোজিনের নাম যাত্রীদের তালিকায় রয়েছে।
এর আগে একটি ওয়াগনারপন্থি টেলিগ্রাম চ্যানেল গ্রে জোন জানিয়েছে, উড়োজাহাজটিকে টাভার অঞ্চলে আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা দ্বারা গুলি করা হয়েছে।
জুন মাসের শেষের দিকে রাশিয়ার সামরিক নেতৃত্বের বিরুদ্ধে সশস্ত্র বিদ্রোহ করে ওয়াগনার বাহিনী। বেলারুশের প্রেসিডেন্ট আলেক্সান্ডার লুকাশেঙ্কোর মধ্যস্থতায় ক্রেমলিনের সঙ্গে সমঝোতার পর তার সংক্ষিপ্ত বিদ্রোহের অবসান হয়। সমঝোতা অনুসারে তার বেলারুশে নির্বাসনে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তিনি কোথায় অবস্থান করছেন তা নিয়ে ধোঁয়াশা ছিল।
এই সপ্তাহের শুরুতে প্রিগোজিন একটি ভিডিও প্রকাশ করেছেন। এতে তিনি আফ্রিকায় থাকার দাবি করেছেন। বিদ্রোহের পর তার বাহিনীর অনেক যোদ্ধাকে আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে পাঠিয়েছেন তিনি। তবে ভিডিওটি কবে ধারণ করা হয়েছিল এবং রেকর্ডের পর রাশিয়ায় ফিরে এসেছিলেন কি না তা স্পষ্ট নয়।
ইউক্রেন যুদ্ধের আগ পর্যন্ত আড়ালে থেকে বাহিনী পরিচালনা করে আসছিলেন প্রিগোজিন। কিন্তু ইউক্রেনে রাশিয়ার যুদ্ধে তিনি ও তার বাহিনী আড়াল থেকে প্রকাশ্যে আলোচনায় আসে। যুদ্ধে প্রিগোজিনের যোদ্ধারা রাশিয়ার হয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
সেন্ট পিটার্সবুর্গে বেড়ে ওঠা প্রিগোজিনের। ১৯৮০’র দশকে চুরি ও রাস্তায় ছিনতাইয়ের অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হয়ে ৯ বছর কারাগারে কাটিয়েছেন প্রিগোজিন।
১৯৯০ দশক থেকে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে তার পরিচয়। ক্রেমলিনের বিভিন্ন খাবারের চুক্তি পাওয়ার মাধ্যমে ধনকুবের হয়ে ওঠেন তিনি। একসময় তিনি ‘পুতিনের শেফ’ হিসেবে পরিচিত পান।
২০১৪ সালে ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চল ডনবাসে রাশিয়াপন্থি বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলনের পর প্রিগোজিন একজন নির্মম সেনাপতি হিসেবে আবির্ভুত হন। তিনি গড়ে তুলেন ভাড়াটে বাহিনী ওয়াগনার গ্রুপ। এই বাহিনী ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলে লড়াই করে। বিশ্বজুড়ে রাশিয়ার স্বার্থের পক্ষে কাজ করেছে।
ওয়াগনার যোদ্ধারা সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিক, সুদান, লিবিয়া, মোজাম্বিক, ইউক্রেন ও সিরিয়াতে রয়েছে এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে সিএনএন। বেশ কয়েক বছর ধরে তিনি কুখ্যাতি অর্জন করেছেন, বিশেষ করে মানবাধিকার লঙ্ঘন করার ক্ষেত্রে।