ঢাকা বৃহঃস্পতিবার, ২৫শে এপ্রিল ২০২৪, ১৩ই বৈশাখ ১৪৩১


মালয়েশিয়া প্রবাসী বকুলের বাচাঁর আকুতি


১১ জুলাই ২০২০ ২৩:৪৫

ছবি সংগৃহীত

মালয়েশিয়া কুয়ালালামপুর হাসপাতালের বেডে অচেতন অবস্থায় দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসাধীন আছেন কিডনি রোগে আক্রান্ত হওয়া পাবনার বকুল।
বিদেশ মানেই যেন সোনার হরিণ, আর এই হরিণকে ধরতেই মারিয়া হয়ে পরে বিদেশগামী কিছু বাংলাদেশীরা। এই জন্য বসত বাড়ি, ভিটা মাটি গরু ছাগল বিক্রয় করে কেউ বা চড়া সুদে বিভিন্ন এনজিও থেকে লোন নিয়ে পাড়ি জমান এই স্বপ্নের দেশগুলোতে। প্রবাসে গেলেও অনেকের কপাল ভালো হলে হয়তো মিলে ভাল কোম্পানী। আর কপাল খারাপ হলে পড়তে হয় বিভিন্ন বিড়োম্বনাই এবং পিছু ছাড়ে না ঋণের চিন্তা ও পারিবারিক দুশ্চিন্তা।
প্রবাসে এসে পারিবারিক ও আর্থিক দুশ্চিন্তা এবং অনিয়মতান্ত্রিক চলাফেরার কারনে অনেকেই পড়ছেন দুরারোগ্যের কবলে।
জানা যায় পাবনা জেলার আতাইকুলা থানার শ্রীকোল গ্রামের মৃত মোজাম্মেল মোল্লার প্রবাসী ছেলে বকুল হোসেন গত ২০০৭ সালের কলিং ভিসায় মালয়েশিয়া যান তিনি। প্রাথমিক আবস্থায় কোম্পানী ভালো হলেও স্বল্প বেতনের কারনে বাড়ি থেকে জমি বিক্রয় ও চড়া সুধে ঋন করে আসা টাকা পরিশোধ ও পারিবারিক চাহিদা মেটাতে ভিসার মেয়াদ শেষ হলেও ফেরা হয় নি আর দেশে।
পরবর্তিতে মালয়েশিয়া সরকার রি-হিয়ারিং প্রগ্রাম চালু করলে অনেক অবৈধ প্রবাসীদের মতো বকুলও মাইজির মাধ্যমে বৈধ হবার জন্যে আবেদন করে কিন্তু অনেকেই ভিসা পাইলেও দুর্ভাগ্যের কারনে বকুলের কপালে আর মেলে নাই মালয়েশিয়ায় থাকার বৈধ পারমিট। আর এই অবৈধ থাকার দুঃশ্চিন্তা এবং অনিয়মতান্ত্রিক চলাফেরার কারনে আস্থে আস্থে অসুস্থ হয়ে পড়েন বকুল।
গত ফ্রেব্রুয়ারি মাসের প্রথম দিকে হঠাৎ করে অসুস্থ হয়ে যান বকুল হোসেন, প্রাথমিক ভাবে কিছু চিকিৎসা নিলেও তার কোন উন্নতি হয় না, পরে উপায়ন্ত না দেখে মালয়েশিয়া কুয়ালালামপুর হাসপাতালে ভর্তি হন তিনি। ভর্তি হলে কর্তব্যরত ডাক্তার বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার পর জানান, তার দুইটা কিডনিই আস্থে আস্থে ডেমেজ হয়ে যাচ্ছে।
এভাবে কিছুদিন চিকিৎসা নেবার পর একটু সুস্থ হলেই আবার চলে আসতেন বাসায়। একবার হাসপাতালে ভর্তি হলেই খরচ গুণতে হয় মিনিমাম ৫ থেকে ৬ হাজার মালয়েশিয়ান রিংগিত যা বাংলাদেশী টাকায় ১ থেকে দেড় লক্ষ টাকা ।
মালয়েশিয়ায় থাকা বকুলের আত্বীয় আসলাম ও লোকমান হসেন জানান আমার মামা বকুল হোসেনকে আজ পর্যন্ত প্রায় ৭/৮ বার হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়ছে এতে প্রায় খরচ হয়েছে ৫০/৬০ হাজার রিংগিত যা ১০/১২ লক্ষ্য টাকাএ। আর এই টাকার যোগান দিতে দেশ থেকে জমিজমা বিক্রয় এবং ধার দেনা করে আনা হয়ছে। আজ গত এক সাপ্তাহ হলো মামার কোন জ্ঞান নাই অচেতন অবস্থায় আছে। জানিনা আবার হাসপাতালের বিল কতো হয়ছে।
এ বিষয়ে লোকমান ও আসলাম বলেন আমরা বকুল হোসেনকে দেশে পাঠানোর জন্যে মালয়েশিস্থ বাংলাদেশ দুতাবাসে অনেকবার যোগাযোগ করেছি কিন্তু নরমাল ফ্লাইট না থাকার জন্যে তাকে দেশে পাঠানো সম্ভব হয় নাই। তাই মালয়েশিস্থ বাংলাদেশ দুতাবাস ও বাংলাদেশ সরকারের কাছে অনুরোধ করবো যেনো তাকে উন্নত চিকিৎসা এবং স্পেশাল ফ্লাইটের মাধ্যমে খুব দ্রুত দেশে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়।

এ দিকে বাংলাদেশে থাকা বকুলের মা বলেন আমার ছেলে মালয়েশীয়া হাসপাতালে ভর্তি আছে আমি আমার ছেলের উন্নত চিকিৎসা ও দেশে ফেরত চাই।
বকুলের স্ত্রী বলেন আমার কোন ছেলে সন্ত্রান নাই শুধু তিনটা মেয়ে এবং পরিবারের একমাত্র উপার্জন ব্যাক্তি আমার স্বামী । সে আজ ৫/৬ মাস অসুস্থ জমি জমা ও ঋন করে তার চিকিতসার জন্য মালয়েশিয়ায় টাকা পাঠাচ্ছি । এখন মেয়েদের মুখে তিন বেলা ভাত তুলে দিতেই আমি হিমসিম খাচ্ছি ।

বকুলের মেয়েরা ও বাবার উন্নত চিকিতসার জন্যে বাংলাদেশ সরকারের কাছে অনুরোধ করেন এবং তাকে স্পেশাল ফ্লাইটের মাধ্যমে দেশে প্ররনের জন্যে অনুরোধ করেন।

দেশে থাকা তার আত্বীয় ও প্রবাসে থাকা সবাই রেমিটেন্স যোদ্ধা বকুল হসেনের জন্য প্রধানমন্ত্রী, এমপি, জেলা প্রশাসন, সমাজের বিত্তবান, অর্থশালী, ব্যবসায়ী ও সমাজসেবীদের কাছে আর্থিক সাহায্যের আবেদন করেন।