ঢাকা শুক্রবার, ২৯শে মার্চ ২০২৪, ১৬ই চৈত্র ১৪৩০


কাবুলে শিখ গুরুদুয়ারায় হামলায় নিহত ২৫


২৬ মার্চ ২০২০ ১৮:১১

আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলে শিখ ধর্মাবলম্বীদের একটি গুরুদুয়ারায় হামলায় অন্তত ২৫ জন নিহত ও আটজন আহত হয়েছেন। বুধবার সকালে উপাসকরা যখন প্রার্থনা করছিলেন, তখন এই হামলা চালানো হয়েছে। বার্তা সংস্থা রয়টার্স ও এএফপির খবরে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।

জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেট এই নৃশংসতার দায় স্বীকার করেছে। যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশটিতে চলমান সহিংতার বিষয়টিই সামনে নিয়ে এসেছে এই হামলা।

এর কয়েক ঘণ্টা আগে আফগান জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিল ঘোষণা করে যে বন্দি বিনিময়ে তালেবান ও সরকারের কর্মকর্তারা মুখোমুখি বৈঠকে বসতে যাচ্ছেন।

বিদ্রোহ বাড়ার পাশাপাশি বড় ধরনের মার্কিন সহায়তা কাটছাঁটে টলোমলো অবস্থায় অর্থনৈতিক সংকটে থাকা আফগানিস্তান। এছাড়া রাজনৈতিক অচলাবস্থা ও করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বৃদ্ধির ঘটনা সামাল দিতে গিয়ে বিপর্যয়ের মুখে দেশটি।

সাম্প্রতিক হামলার জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করেছে তালেবান। কিন্তু জঙ্গি গোষ্ঠী ইসলামিক স্টেট সেই দায় স্বীকার করেছে।

প্রত্যক্ষদর্শী রাজু সিং সোন্নি বলেন, মধ্যকাবুলের মন্দিরটিতে পুলিশের উর্দি পরা এক ব্যক্তি জোর করে প্রবেশ করে এক প্রহরীকে গুলি করে প্রধান হলের ভেতরে উপসনাকারীদের ওপর হামলা শুরু করে।

‘এরপর আরও কয়েকজন হামলাকারী ঢুকে রুমে রুমে ঢুকে লোকজনকে গুলি করে।’

মুসলিম অধ্যুষিত আফগানিস্তানে মাত্র কয়েক হাজার শিখ ও হিন্দু ধর্মাবলম্বী বসবাস করেন। তবে কতসংখ্যক বন্দুকধারী হামলায় অংশ নিয়েছে, তা নিয়ে সাংঘর্ষিক তথ্য রয়েছে।

নিরাপত্তা বাহিনীর সূত্র এক থেকে চারজন বন্দুকধারীর হামলার কথা বলছে। পুলিশের ঘণ্টাব্যাপী শুদ্ধি অভিযানে অন্তত এক হামলাকারী নিহত হন।

আফগান পার্লামেন্টের শিখ সদস্য আনাকলি খের অনারইয়ার বলেন, মন্দিরের ভেতরে দেড়শ উপসনাকারী ছিলেন। সেখানে কয়েকটি পরিবারের বসবাস। আর সকালের প্রার্থনার জন্য উপসনাকারীরা জড়ো হয়েছিলেন মন্দিরে।

আফগান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র তারিক আরিয়ান বলেন, ২৫ বেসামরিক লোক নিহত ও আটজন আহত হয়েছেন। আর সেখান থেকে অন্তত ৮০জনকে উদ্ধার করে নিরাপদ স্থানে নিয়ে আসা হয়েছে।

শিখ সম্প্রদায়ের লোকজনের ভাষ্যমতে, দিনটি অন্যান্য দিনের মতোই স্বাভাবিকভাবে শুরু হয়েছিল, মন্দিরেই বাস করা শতাধিক লোক ভোর ৬টা থেকে প্রার্থনা শুরু করে, বাইরে থেকেও অনেকে এসে যোগ দেয়।

ঘণ্টাখানেক পর মন্দিরের প্রবেশ পথে হামলাকারীরা এক প্রহরীকে খুন করায় প্রার্থনায় বাধা পড়ে, এরপরই তারা গুলি শুরু করে আর প্রার্থনাকারীরা আশ্রয়ের জন্য মন্দিরের এদিকে ওদিকে পালাতে শুরু করে।

৩০ বছর বয়সী প্রত্যক্ষদর্শী গুরনাম সিং বলেন, শিশুরা আতঙ্কিত হয়ে কান্না ও চিৎকার শুরু করে, এখনও কাঁদছে তারা। এ ঘটনা ভুলবে না তারা, তাদের মানসিক অবস্থা ভালো নেই।

এ হামলায় হরিন্দর সিংয়ের পরিবারের বেশ কয়েকজন সদস্য নিহত হন।

তিনি বলেন, হামলাকারীরা সিঁড়িতে এসেই নারীদের হত্যা করা শুরু করে। আমার ভাইপো চিৎকার করে আমাকে বলে, চাচা, নিচে চলে যান, আমি নিচে নামার চেষ্টা করতেই তারা আমার ভাইপোর মাথায় গুলি করে।

এ ঘটনায় হরিন্দরের স্ত্রী, বাবা ও যুবতী কন্যাও নিহত হন।

কাঁদতে কাঁদতে তিনি বলেন, আমার আদরের কন্যাটি আহত হয়েছিল, মারা যাওয়ার আগে সে বারবার বাবা, বাবা বলে ডাকছিল।

এর আগেও আইএস দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলে শিখদের ওপর হামলা চালিয়েছিল।

১৯৮০-র দশকের শেষ দিকে আফগানিস্তানের বিভিন্ন এলাকায় প্রায় পাঁচ লাখের মতো শিখ ছিল, কিন্তু দেশটিতে বছরের পর বছর ধরে চলা গৃহযুদ্ধে কারণে ও তালেবানের উত্থানের পর তাদের অধিকাংশই দেশ ছেড়ে চলে যায়।

নতুনসময়/আইকে