ঢাকা মঙ্গলবার, ২২শে এপ্রিল ২০২৫, ১০ই বৈশাখ ১৪৩২


নাটক সাজিয়ে বিয়ের প্রস্তাব


১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০৪:৫৮

নতুন সময়

প্রেমিকের জন্য অপেক্ষা করছিলেন এক রুশ তরুণী।বিমান বন্দরে। কিন্তু কিছুক্ষণ পর তার মোবাইলে ওই প্রেমিক জানালেন গুরুত্বপূর্ণ একটা কাজের জন্য বিমানবন্দরে আসতে পারছেন না তিনি। তবে তার বদলে এক বন্ধু তাকে গাড়িতে করে বাড়ি পৌঁছে দেবেন।

ঠিক তখন পথ রোধ করে দাঁড়ালো কালো কাঁচ লাগানো একটি গাড়ি। মুখোশ পরা অস্ত্রধারী কয়েকজন গাড়িচালক ওই বন্ধুটিকে টেনে সরিয়ে নিয়ে গেল। আনাস্তাসিয়া নামের ওই তরুণীর সুটকেস খুলে পুরো উল্টে পাল্টে দেখতে শুরু করলেন অস্ত্রধারীরা। তল্লাশিতে সুটকেস থেকে বের হল একটি মোড়ক ভর্তি সাদা এক ধরনের গুড়ো।

কালো রঙের বিশেষ বাহিনীর মত পোশাক পরা লোকগুলোর মধ্যে থেকে একজন নারী তার দিকে তাকিয়ে বললেন, ‘আমাদের সন্দেহ আপনি নিষিদ্ধদ্রব্য বহন করছেন।’

রুশ তরুণী আনাস্তাসিয়ার মুখ রক্ত শূন্য হয়ে গেল। মুখে কাঁচুমাচু একরকম হাসি এনে তিনি বলার চেষ্টা করলেন, ‘আপনাদের কোথাও ভুল হচ্ছে। ওগুলো আমার নয়। পুরুষদের মধ্যে একজন চিৎকার করে ধমকে উঠলেন। "তাহলে এগুলো কার? অনেক নাটক হয়েছে।

হঠাৎ লোকটি আনাস্তাসিয়ার সামনে হাঁটু গেড়ে বসে পড়লেন। একটা গোলাপি রঙের ছোট বাক্স বের করলেন নিজের পকেট থেকে। এক টান দিয়ে নিজের মুখোশ খুলে বলে উঠলেন "আমাকে বিয়ে করো।" সে আর কেউ নয় আনাস্তাসিয়ার প্রেমিক সের্গেই।

সের্গেই নিজে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য। কিন্তু তার সঙ্গে যারা ছিলেন তারা সবাই "এক্সট্রিম প্রপোজাল" নামে একটি বিশেষ সেবা-দানকারী প্রতিষ্ঠানের সদস্য।

রাশিয়াতে রীতিমতো একটি ইন্ডাস্ট্রি গড়ে উঠেছে যাদের কাজই হল অভিনেতা পাঠিয়ে, নাটক সাজিয়ে বিয়ের প্রস্তাবকে চমকপ্রদ করতে প্রেমিক-প্রেমিকাদের সাহায্য করা। মাত্র ১০ ডলার থেকে ৯০০ ডলার খরচে এরকম নাটক সাজিয়ে বিয়ের চল শুরু হয়েছে রাশিয়ায়। অর্থাৎ, খরচ যত বেশি নাটকীয়তার মাত্রাও তত বেশি।

মনোবিজ্ঞানী পলিনা সলদাতোভা বলছেন, "এই ধরনের বিয়ের প্রস্তাব এক ধরনের ইঙ্গিত দেয় যে দৈনন্দিন জীবনে রাশিয়ার পুলিশের ভূমিকা কেমন। কৌতুক দিয়ে মানুষ তাদের জীবনে ঘটে যাওয়া বিষয়গুলোর প্রতি প্রতিক্রিয়া জানায়। এসব তামাশা দিয়ে হয়ত নিজেদের জীবনের অবস্থাকে গ্রহণ করে সাধারণ মানুষজন যে রাশিয়ার পুলিশ আপনার জন্য যেকোনো সময় এসে পরতে পারে।

এই বিশেষ বাহিনীর প্রতিষ্ঠাতা রডকিন বলছেন, ২০১০ সালের দিকে বন্ধুদের জন্য তিনি মজার ছলে এমন নাটক সাজাতেন। কিন্তু পরে সেটিই একটি কোম্পানি দাঁড়িয়ে গেলো চার বছর পর। এখন তারমত একই সেবা দিচ্ছে ১৩টি প্রতিযোগী কোম্পানি।

এ প্রতিষ্ঠানে কী ধরনের সেবা নিতে প্রেমিক প্রেমিকারা আসেন তার বর্ণনাও দিয়েছেন সের্গেই রডকিন। তিনি একটু আক্ষেপ করে বলেন, আমার কাছে সেবা নিতে আসা প্রেমিক-প্রেমিকাদের কোন কল্পনাশক্তি নেই। তারা সবাই ওই একই নাটক চায়। আর হল মাদক বিরোধী অভিযান, গ্রেফতার নাটক ইত্যাদি।

এ ধরনের প্রস্তাবের অভিজ্ঞতা নিয়ে তরুণী আনাস্তাসিয়া বলেছেন, শুরুতে মারাত্মক একটা ধাক্কা খেয়েছিলাম আমি, খুব ভয়ও পেয়েছিলাম।

তবে এমন প্রস্তাবের নানা প্রতিক্রিয়াও পাওয়া গেছে। পেনজা অঞ্চলের আলেকজান্ডার তার প্রেমিকা ক্ষেপে গিয়েছিলেন। তার অভিযোগ এটা ‘হার্ট অ্যাটাক’ পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছিল।

এদিকে দেশটির রেজান এলাকার ইউলিয়া এমন বিস্ময়কর বিয়ের প্রস্তাবের পর তার হাতে তুলে দেয়া ফুলের তোড়া দিয়ে রীতিমতো পিটিয়েছিলেন প্রেমিকাকে।