ঢাকা সোমবার, ২১শে এপ্রিল ২০২৫, ৯ই বৈশাখ ১৪৩২


রাজ্যসভায়ও পাস হলো তিন তালাক বিল


৩১ জুলাই ২০১৯ ১৯:১৩

ছবি সংগৃহিত

ভারতের পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ লোকসভার পর এবার উচ্চকক্ষ রাজ্যসভায়ও পাস হলো তিন তালাক বিল। কংগ্রেস-সহ বিরোধী দলগুলির সমালোচনা সত্ত্বেও মঙ্গলবার (৩০ জুলাই) বিলটি পাস হয়। এবার তিন তালাক বিলটি পাঠানো হবে রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দের কাছে। তিনি তাতে সই করলেই সেটি আইনে পরিণত হবে। এরপর তাৎক্ষণিক তিন তালাক প্রথা অর্থাৎ তিন বার ‘তালাক’ শব্দটি উচ্চারণের মধ্য দিয়ে বিবাহ বিচ্ছেদ ফৌজদারি অপরাধ বলে গণ্য হবে। সে ক্ষেত্রে স্ত্রীকে তিন তালাক দিলে তিন বছরের কারাদণ্ড হতে পারে মুসলিম পুরুষদের।

তিন তালাক নিষিদ্ধ করে ভারতের লোকসভায় বিল পাস হয়েছিল ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে। তাতে বলা হয়েছিল, তিন তালাক একটি জামিন অযোগ্য অপরাধ। কোনও মুসলিম ব্যক্তি স্ত্রীকে তিন তালাক দিলে তার তিন বছরের কারাদণ্ড ও জরিমানা হবে। সেসময় ওই বিল নিয়ে তীব্র আপত্তি তোলেন বিরোধীরা। ওই আইনের অপব্যবহার হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন তারা। আর বিরোধীদের সমর্থন ছাড়া রাজ্যসভায় ওই বিল পাস করানো সম্ভব নয়। সে কথা মাথায় রেখে কেন্দ্রীয় সরকার ওই বিলে সংশোধনী আনে।

সংশোধিত বিলে বলা হয়, বিচারক ইচ্ছা করলে তিন তালাকের মামলায় অভিযুক্তকে জামিন দিতে পারবেন। এক্ষেত্রে অভিযোগ করতে পারবেন কেবল সংশ্লিষ্ট নারী ও তার পরিবারের লোকজন। সংশোধিত বিলটিও লোকসভায় বিরোধিতার মুখে পড়ে।

বিরোধীদের আপত্তি সত্ত্বেও লোকসভায় তিন তালাক বিল পাস হয়েছিল আগেই। মঙ্গলবার সকাল থেকে রাজ্যসভায় আলোচনা শুরু হয় এ বিল নিয়ে। এর আনুষ্ঠানিক নাম প্রোটেকশন অফ রাইটস অফ ম্যারেজ-২০১৯। বিলটি পেশ করে এদিন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী রবিশঙ্কর প্রসাদ বলেন, এই বিষয়টিকে কোনওভাবেই রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি বা ভোটব্যাঙ্ক রাজনীতির প্রেক্ষিতে দেখা ঠিক হবে না। এই ইস্যুটি মানবিক দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখা প্রয়োজন।

তিনটি আসন খালি পড়ে থাকায় এই মুহূর্তে রাজ্যসভার মোট আসন সংখ্যা ২৪২। তাই কোনও বিল পাস করাতে গেলে বর্তমানে ১২১ জন আইনপ্রণেতার সমর্থনের প্রয়োজন হয়। সেখানে বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোটের সদস্য সংখ্যা ১১৩। কিন্তু নীতীশ কুমারের সংযুক্ত জনতা দল (জেডিইউ) এবং অল ইন্ডিয়া আন্না দ্রাবিড় মুন্নেত্রা কাঝগম (এআইএডিএমকে)-এর মতো শরিক দল ওয়াক আউট করলে তাদের সদস্য সংখ্যা এসে দাঁড়ায় ১০৭-এ। অন্য দিকে, সমাজবাদী পার্টি, বহুজন সমাজ পার্টি এবং তেলঙ্গানা রাষ্ট্র সমিতির মতো বিরোধী দলে সাংসদরাও সভা ত্যাগ করলে, রাজ্যসভার মোট আসন সংখ্যা এসে ঠেকে ২৩৬-এ।

এ ছাড়াও এ দিনের অধিবেশনে বিজেপির অরুণ জেটলি, কংগ্রেসের অস্কার ফার্নান্দেজ, এনসিপির শরদ পাওয়ার এবং প্রফুল্ল প্যাটেলসহ মোট ১৪ জন সংসদ সদস্য অনুপস্থিত ছিলেন। তাতে ভোটাভুটির সময় মোট আসন সংখ্যা আরও কমে দাঁড়ায় ২১৬-। সে ক্ষেত্রে বিল পাশ করাতে মাত্র ১০৯টি ভোটের প্রয়োজন ছিল কেন্দ্রীয় সরকারের। সেইসসময় তাদের ত্রাতা হয়ে দাঁড়ায় নবীন পট্টনায়কের বিজু জনতা দল (বিজেডি)। এনডিএ-র শরিক না হওয়া সত্ত্বেও তিন তালাক বিলে সমর্থন দেন তাদের ৭ সংসদ সদস্য। তাতে এনডি-এর সমর্থন গিয়ে ঠেকে ১১৩-তে। তার পর আর বিলটি পাস করাতে সমস্যা হয়নি তাদের।