ঢাকা বৃহঃস্পতিবার, ২৮শে মার্চ ২০২৪, ১৫ই চৈত্র ১৪৩০


পুলিশ সদস্য বাহাউদ্দিনের করোনাযুদ্ধ !


৬ মে ২০২০ ০৭:২৯

সংগৃহিত

করোনার বিষাক্ত ছোবলে দিশেহারা-বিপর্যস্ত মানুষ যখন অসুস্থ স্বজনের কাছ থেকেও নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে চলছেন, ঠিক সেই মুহূর্তে এক অকুতোভয় পুলিশ সদস্য নিজের জীবনের মায়া তুচ্ছ করে সহকর্মীদের সেবায় বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করে যাচ্ছেন।

মানবপ্রেমী এই পুলিশ সদস্যের নাম মো. বাহাউদ্দিন। তিনি ডিএমপির পাবলিক অর্ডার ম্যানেজমেন্ট (পিওএম-উত্তর) বিভাগের মেডিকেল সহকারী।

রাত-দিন ২৪ ঘন্টা তিনি করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত পুলিশ সদস্যদের হাসপাতালে আনা নেয়াসহ তাদের সার্বিক দেখভালের দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন হাসিমুখে।

এ পর্যন্ত প্রায় ৮০ জন করোনা রোগীকে নিজের হাতে এ্যাম্বুলেন্সে তুলে হাসপাতালে ভর্তি করেছেন ভয়কে জয় করা মানবপ্রেমী এই পুলিশ সদস্য।

ভাইরাস জনিত কারণে বেশি দূর্বল হয়ে পড়া পুলিশ সদস্যদের তিনি নিজের কাঁধে তুলে নামিয়েছেন বহুতল ভবন থেকে, এরপর এ্যাম্বুলেন্সে তুলে হাসপাতালে নিয়ে গেছেন।

আলাপকালে বাহাউদ্দিন বলেন, “প্রথমদিকে খুব ভয় পেতাম করোনা আক্রান্ত পুলিশ সদস্যদের কাছে যেতে কিন্তু দেশের এই চরম সংকটে আমার পক্ষে আর বসে থাকা সম্ভব হয়নি।”

“আমি বাংলাদেশ পুলিশের একজন গর্বিত সদস্য। করোনার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে গিয়ে আমার পুলিশের লোকজন যখন ব্যাপকহারে ভাইরাসে আক্রান্ত হচ্ছিলেন, তখন আমার মন থেকে সব ভয় দূর হয়ে যায়। আমি হাত গুটিয়ে বসে থাকতে পারিনি।”

করোনা আক্রান্ত পুলিশের সেবায় নিজের আত্মনিয়োগের কারণ ব্যখ্যা করলেন পুলিশ কনস্টবল মো: বাহাউদ্দিন।

তিনি বলেন, “আমি একজন বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান। আমার বাবা মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে জীবন বাঁজি রেখে যুদ্ধ করেছেন। আমিও দেশের ডাকে যুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়েছি।”

বাহাউদ্দিন জানান, তিনি যথারীতি স্বাস্থ্যবিধি মেনে, পিপিই ও মাস্ক পরিধান করেই আক্রান্তদের সেবা করে যাচ্ছেন।

করোনা রোগীর সংস্পর্শে যাওয়ার তাঁর নিজের শারীরিক পরিস্থিতি জানতে চাইলে স্বস্তি ফুটে ওঠে ২০১৫ সালে কনস্টবল পদে যোগদান করা বাহাউদ্দিনের চোখেমুখে। জানালেন তিনি টেস্ট করেছেন। তাঁর করোনা নেগেটিভ এসেছে।

বাহাউদ্দিন আরো বলেন, “মানবসেবা শ্রেষ্ঠতম কাজ। পুলিশ সদস্যদের সেবায় মারা গেলে আমি শহীদের মর্যাদা পাবো।”

পিওএম (উত্তর) এর অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার রহিমা আখতার লাকি বাহাউদ্দিনের ভূয়সী প্রশংসা করে বলেন, বাহাউদ্দিনের সাহসিকতা ও দায়িত্বশীলতার প্রশংসা করে শেষ করা যাবেনা। একটা বাচ্চা ছেলে হয়েও সে যে মাপের সাহসিকতা প্রদর্শন করে করোনা আক্রান্ত পুলিশের সেবায় আত্মনিয়োগ করেছেন, তা বর্ণনাতীত।

তিনি জানান, হোটেলে করোনা উপসর্গ নিয়ে যারা রয়েছেন সেসব পুলিশ সদস্যদেরও হাসপাতালে আনা নেওয়া, ওষুধ পথ্য দিয়ে সেবা করা, নিয়মিত খোঁজখবর রাখা সহ সার্বিক দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন নীরবে, সযত্নে।