দেশের ২ কোটি মানুষ মানসিক রোগে আক্রান্ত

দেশের প্রায় দুই কোটি মানুষ মানসিক রোগে আক্রান্ত। মোট জনসংখ্যার ১৬ দশমিক ১ শতাংশ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষই ভুগছেন মানসিক ব্যাধিতে। এর মধ্যে ৮ দশমিক ৪ শতাংশ স্নায়ুবিক পীড়ায়, ৪ দশমিক ৬ শতাংশ গভীর বিষণ্ণতায় এবং ১ দশমিক ১ শতাংশ সরাসরি মনোব্যাধিতে আক্রান্ত। এছাড়া ১৮ দশমিক ৪ শতাংশ শিশু মানসিক ব্যাধিতে আক্রান্ত এবং ৭৫ শতাংশ শিশু চিকিৎসা সেবার বাইরে থাকে।
জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের (এনআইএমএইচ) এক গবেষণায় এ তথ্য উঠে এসেছে। রোববার (৫ মে) রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় ইস্ট ওয়েস্ট মিডিয়া গ্রুপ লিমিটেড (ইডব্লিউএমজিএল) কমপ্লেক্সে দৈনিক কালের কণ্ঠ কার্যালয়ে ‘মানসিক স্বাস্থ্য ও বাংলাদেশ’ শীর্ষক এক গোলটেবিল বৈঠকে এ তথ্য তুলে ধরা হয়।
বৈঠকে বক্তারা বলেন, দেশে মানসিক স্বাস্থ্যে মাথাপিছু ব্যয় ২.৪ টাকা হলেও স্বাস্থ্যখাত থেকে এই অসুস্থতার জন্য বাজেট মাত্র ০.৫ শতাংশ। দেশে আত্মহত্যার হার প্রতি একলাখ লোকে ৫.৯ শতাংশ। এদিকে মোট জনসংখ্যার বিপরীতে মাত্র ২৫০ জন মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ও ৬০ জন ক্লিনিক্যাল মনোবিজ্ঞানী রয়েছেন। এছাড়া শিশু মনোবিজ্ঞানী একেবারে নেই বললেই চলে। মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ে প্রশিক্ষিত চিকিৎসক রয়েছেন ১০ হাজার জন এবং নার্স ১২ হাজার জন। এমন চিকিৎসা-সক্ষমতা দিয়েই এ বিরাট সমস্যা মোকাবেলা করতে হচ্ছে। লক্ষ্যণীয় বিষয় হচ্ছে ২০২০ সালের মধ্যে এ সমস্যা প্রকট আকার ধারণ করবে এবং ২০৩০ সালের মধ্যে এটি মারাত্মক ব্যাধিতে রুপান্তরিত হবে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে প্রতি ৪০ সেকেন্ডে ১ জন মানসিক রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যায়।
বক্তারা বলেন, ৫০ ভাগ মানসিক রোগ ১৪ থেকে ২৫ বছর বয়সের মধ্যে তৈরি হয়। এজন্য শিশু ও তরুণদের প্রতি বিশেষ নজর দিতে হবে। বেসরকারি চাকরিতে কাজের প্রচুর চাপ থাকায় তাদের সুযোগ-সুবিধা আরও বাড়িয়ে দিতে হবে। সদ্য পাস হওয়া মানসিক আইন বাস্তবায়নসহ এমবিএবিএস বা আন্ডারগ্রাজুয়েট লেভেলে মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ে পড়াশোনা করাতে হবে। শিশুদের স্নেহ ছাড়াও সম্মান প্রদর্শন করে মানসিকভাবে শক্তিশালী করে গড়ে তুলতে হবে এবং সর্বদা কাউন্সেলিংয়ের আওতায় রাখতে হবে। এজন্য বাবা-মা ও শিক্ষকদের আগে সচেতন হতে হবে। মাদকের করাল থাবার হাত থেকে সমাজকে মুক্তি দিতে হবে।
চিকিৎসার ক্ষেত্রে রেফারেল সিস্টেম চালু করতে হবে বা সব হাসপাতালে এ বিষয়ক সেবা চালু নিশ্চিত করতে হবে বলেও জানান বক্তারা। তারা বলেন, শারীরিক অসুস্থতার দিকেই সবার বেশি নজর ছিল এতোদিন, এমনকি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থারও। এখন এদিকে নজর বাড়ছে এবং আমাদের এ বিষয়ক পরিকল্পনা দরকার।
বৈঠকে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রী জাহিদ মালেক। কালের কণ্ঠ সম্পাদক ইমদাদুল হক মিলনের সভাপতিত্বে বৈঠকে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) মনোরোগবিদ্যা বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. সালাহউদ্দিন কাউসার বিপ্লব।
নতুনসময়/এনএইচ