ঢাকা শনিবার, ২০শে এপ্রিল ২০২৪, ৭ই বৈশাখ ১৪৩১


ডেঙ্গু আক্রান্তের ৮৫ শতাংশই চিকিৎসা নেয় না


২৩ জুলাই ২০১৯ ২১:৩৫

ছবি সংগৃহিত

ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্তের সংখ্যা এরই মধ্যে সাড়ে তিন লাখ ছাড়িয়ে গেছে। আগামী মাসে বা ভরা মৌসুমে পরিস্থিতির আরও অবনতির আশঙ্কা রয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগনিয়ন্ত্রণ শাখার তথ্য বিশ্লেষণ করে আক্রান্তের এই অনুমিত সংখ্যা পাওয়া গেছে।

কয়েক বছরে ডেঙ্গুর প্রকোপ ও হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়া রোগীর তথ্য বিশ্লেষণ করে সরকারি দপ্তরটি বলছে, ডেঙ্গুতে আক্রান্ত সব রোগী সরকারি নজরদারির মধ্যে নেই। চিকিৎসা নিতে আসা মাত্র ২ শতাংশ রোগী সরকারি নজরদারির মধ্যে পড়ে। ৯৮ শতাংশের কোনো তথ্য থাকে না। আবার আক্রান্তদের মধ্যে ৮৫ শতাংশই চিকিৎসা নেয় না। এই অনুমিত হিসাব তৈরিতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে সহায়তা করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।

রোগতত্ত্ববিদ ও আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশের (আইসিডিডিআরবি) উপদেষ্টা অধ্যাপক মাহমুদুর রহমান বলেন, এ ধরনের একটি অনুমিত সংখ্যা খুবই জরুরি। এতে সমস্যা অনুধাবনে সুবিধা হয় এবং রোগ প্রতিরোধ ও ব্যবস্থাপনায় প্রয়োজনীয় সঠিক পদক্ষেপ নেওয়া সম্ভব হয়।

ডেঙ্গু এডিস মশাবাহিত রোগ। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগনিয়ন্ত্রণ শাখার জাতীয় ম্যালেরিয়া নির্মূল ও এডিসবাহিত রোগনিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি এই ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে কাজ করে। তাদের সঙ্গে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন, সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর), আইসিডিডিআরবি, পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়, রিহ্যাবসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান একসঙ্গে কাজ করে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন ও কন্ট্রোল রুম দেশের ডেঙ্গু পরিস্থিতির হাল নাগাদ তথ্য ও পরিসংখ্যান প্রতিদিন তাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করে। কিছু গণমাধ্যমকেও তারা তা সরবরাহ করে। কেন্দ্রের সহকারী পরিচালক ডা. আয়শা আক্তার বলেন, ‘ঢাকা শহরের সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালের তথ্য নিয়মিত সংগ্রহ করি। এ ছাড়া সারা দেশের সিভিল সার্জনরা ৬৪ জেলার তথ্য পাঠান। সরকারি মেডিকেল কলেজের কাছেও তথ্য চাওয়া হয়। সব তথ্য সংকলন করে আমরা প্রকাশ করি।’

হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন ও কন্ট্রোল রুম প্রতিদিন যে তথ্য পাঠায় তাতে দেখা যায়, ঢাকা শহরের ১২টি সরকারি, আধা সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত এবং ৩৫টি বেসরকারি হাসপাতালের তথ্য সংকলন করা হয়। সেই সংকলনের তথ্যই সরকার ব্যবহার করে।

হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন ও কন্ট্রোল রুমের সংকলন অনুযায়ী, এ বছর ৭ হাজার ১৭৯ ডেঙ্গু রোগী বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। সেই হিসাবে এ বছর ২২ জুলাই পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্তের অনুমিত সংখ্যা ৩ লাখ ৫৮ হাজার ৯৫০ জন।

রাজধানীর ঘরে ঘরে ডেঙ্গু। ডেঙ্গু এখন রাজধানীর অন্যতম আলোচনার বিষয়। অনেক পরিবারে একাধিক সদস্য ডেঙ্গুতে আক্রান্ত। রাস্তাঘাটে, বাসে, হোটেলে, মার্কেটে, স্কুল-কলেজে ডেঙ্গু নিয়ে আলোচনা শোনা যায়। মানুষের অভিযোগ, সিটি করপোরেশন মশা নিধনে বা ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়েছে। মশার অকার্যকর ওষুধ ব্যবহার নিয়েও মানুষের মধ্যে ক্ষোভ আছে।

ঢাকার সরকারি-বেসরকারি ৪৯টি হাসপাতালে গতকাল নতুন করে ৪০৩ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছে। এদিকে হবিগঞ্জের সিভিল সার্জন শাহাদাৎ হোসেন ডেঙ্গু রোগে গত রোববার রাতে ঢাকায় মারা গেছেন বলে সরকারি বার্তা সংস্থা জানিয়েছে। যদিও সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকেরা ডেঙ্গু আক্রান্তের বিষয়টি এখনো নিশ্চিত নন।

গত কয়েক বছরের তথ্যে দেখা যাচ্ছে, আগস্ট ও সেপ্টেম্বর মাসে ডেঙ্গুতে বেশি মানুষ আক্রান্ত হয়। সরকারি সংকলন অনুযায়ী, এ বছর জুলাই মাসেই আক্রান্ত হয়েছে ৫ হাজার ৫০ জন। গতকাল বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি ছিল ১ হাজার ৬৬৫ জন। তবে প্রকৃত সংখ্যা আরও অনেক বেশি। প্রথম আলোর অনুসন্ধানে দেখা গেছে, এ বছর ইতিমধ্যে ডেঙ্গুতে ২৬ জনের মৃত্যু হয়েছে।