ঢাকা শুক্রবার, ২৯শে মার্চ ২০২৪, ১৫ই চৈত্র ১৪৩০


রাজধানীতে বাড়ছে ডেঙ্গু রোগী


২০ জুলাই ২০১৯ ২০:২২

ছবি সংগৃহিত

বেড়েই চলছে ডেঙ্গুর প্রকোপ, সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে ডেঙ্গুতে আক্রান্তের সংখ্যাও। প্রতিদিন তাই বিপুল সংখ্যক রোগীর চিকিৎসা দিতে হিমশিম খাচ্ছে রাজধানীর সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। মিলছে না পর্যাপ্ত বেড, যে কারণে হাসপাতালের ফ্লোর ও বারান্দা এবং বেডের পাশে কোনো খালি জায়গা থাকলেই সেখানে রোগী ভর্তি করে চলছে ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসা। এতে বিপাকে পড়েছেন রোগী, চিকিৎসক, নার্স ও হাসপাতাল সংশ্লিষ্ট সবাই।

চিকিৎসকরা বলছেন, এবার অধিকাংশ রোগীই ডেঙ্গুর ৩নং প্যাটার্নে আক্রান্ত হচ্ছেন। আর এই প্যাটার্নের মূল ভূমিকা হলো আক্রান্ত রোগী আগেও আক্রান্ত হয়ে থাকলে সে এবার দ্রুত আক্রান্ত হবে। আগে ডেঙ্গু হলে সামান্য চিকিৎসাতেই ভালো হয়ে যেত, কিন্তু এবার আক্রান্ত অধিকাংশ রোগীদের রক্ত লাগছে। এজন্য জ্বর, ব্যথা, বমি বমি ভাব, শরীর দুর্বল বা নিস্তেজ হয়ে যাওয়ার মতো লক্ষণগুলো দেখা দিলেই দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তারা।

তবে ডেঙ্গু রোগীর চাপ বাড়লেও সে তুলনায় বাড়েনি চিকিৎসক কিংবা নার্স। ফলে ডেঙ্গু রোগীর পাশাপাশি অন্যান্য রোগীদের সেবা দিতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে তাদের। চিকিৎসা সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রতিদিন যে পরিমান রোগী ভর্তি হচ্ছেন হাসপাতালে, সে পরিমান রোগী কিংবা তার অর্ধেক রোগীও ছাড়পত্র নিয়ে হাসপাতাল ছাড়ছে না। যে কারণে পর্যাপ্ত বেড না থাকলেও ফ্লোরে রোগীদের ভর্তি নেওয়া হচ্ছে। এতে হাসপাতালের চাহিদার তুলনায় অতিরিক্ত রোগীর চিকিৎসা সেবা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার তথ্য অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় শুধুমাত্র রাজধানীতে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে শহরের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ২০১ জন রোগী। আর গত ১৯ দিনে ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন ৩ হাজার ৫২২ জন। তার মধ্যে ১ হাজার ১৭৪ জন এখনও হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। চলতি বছর এখন পর্যন্ত ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়েছে ৫ হাজার ৬১৭ জন। আর এ রোগে আক্রান্ত হয়ে এখন পর্যন্ত ৫ জন মারা গেছে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর।

সরেজমিনে রাজধানীর স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ (মিটফোর্ড) হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, হাসপাতালটির ২নং ভবনের ৬০১ নাম্বার ওয়ার্ডে ডেঙ্গু রোগে ভর্তি আছেন প্রায় দেড় শতাধিক। যার মধ্যে ৭০ জন রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন ফ্লোর ও বেডের পাশে খালি জায়গায় বিছানা করে। হাসপাতালটির ৩নং ভবনের মহিলা ও পুরুষ ওয়ার্ডেও একই অবস্থা। সেখানেও পর্যাপ্ত বেড না থাকায় ডেঙ্গু রোগীরা চিকিৎসা নিচ্ছেন ফ্লোর ও বেডের পাশে থাকা খালি জায়গায় বিছানা করে।

হাসপাতালটির প্রায় ৩০ জন রোগী ও তাদের স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, চিকিৎসাধীন অধিকাংশ রোগীর বসবাস কামরাঙ্গীর চর, কেরানীগঞ্জ ও সূত্রাপুরসহ আশপাশের এলাকায়। আর তাদের অধিকাংশই জ্বরে আক্রান্ত হওয়ার মাত্র কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।

গেন্ডারিয়া থেকে ডেঙ্গু আক্রান্ত শিশু কামরুজ্জামান রাজকে (১৩) মিটফোর্ড হাসপাতালে ভর্তি করেছেন স্বজনরা। শিশুটির মা রাজিয়া সারাবাংলাকে বলেন, ‘গতকাল সকালে তার জ্বর হয়। সঙ্গে শরীর খুব ব্যথা। বিকেলে রক্ত পরীক্ষার পর ডেঙ্গু ধরা পড়লে হাসপাতালে নিয়ে আসি। কিন্তু এখানে সিট নাই, তাই ফ্লোরে আছি। রাত থেকে ডাক্তাররা স্যালাইন দিয়ে রেখেছেন।’

মিটফোর্ড হাসপাতালের সহকারী পরিচালক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘অনেক সময় সিট না থাকার কারণে রোগী ভর্তি করানোর মতো অবস্থা থাকলেও ফিরিয়ে দিতে হয়। কিন্তু এখন তো সব হাসপাতালেই চাপ বেড়েছে। তাই যেখানেই একটু জায়গা আছে সেখানেই ফ্লোরে সিটের ব্যবস্থা করে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। গত এক সপ্তাহ ধরে হাসপাতালটিতে ৩০৯ জন চিকিৎসা নিচ্ছেন।’