ঘরে ফিরছেন বানভাসিরা

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ায় বন্যার পরিস্থিতি আরো উন্নতি হয়েছে। বাড়িঘর, পুকুর, ফসলি জমি থেকেও পানি সরে যাচ্ছে। ফলে আশ্রয়কেন্দ্র থেকে নিজ নিজ বাড়িতে ফিরতে শুরু করেছেন বানভাসিরা।
বানভাসিরা জানান, তাদের বসতঘর থেকে বন্যার পানি সরলেও এখন পুরো ঘর কার্দমাক্ত হয়ে আছে। অনেক ঘর আবার ভেঙে অনেক ক্ষতি হয়েছে। এই বন্যার ক্ষত দূর করতে কিছু সময় লাগবে। তবে ঘর থেকে পানি সরে যাওয়ায় খুশি তারা।
সরেজমিনে উপজেলার কালিকাপুর, বীরচন্দ্রপুর, আবদুল্লাহপুর, বঙ্গেরচর, রহিমপুর, রাজেন্দ্রপুরসহ বেশ কয়েকটি গ্রামে গিয়ে দেখা গেছে, বেশির ভাগ ঘর থেকে পানি সরে গেছে। পুকুর, ফসলি জমি থেকেও পানি সরে যাচ্ছে। তবে নিম্ন এলাকায় পানি রয়েছে। ঘর থেকে পানি সরে যাওয়ায় এখন যেন পুরো ঘর ময়লা-আবর্জনা আর কর্দমাক্ত হয়ে আছে। সেইসঙ্গে ছড়াচ্ছে দুর্গন্ধও। কেউবা ঘরের কাদা সরিয়ে বাড়ি ফেরার চেষ্টা করছেন।
মঙ্গলবার (২০ আগস্ট) ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও উপজেলার সীমান্তবর্তী হাওড়া বাঁধ ভেঙে আখাউড়া-আগরতলা সড়কের দুপাশের কালিকাপুর, বীরচন্দ্রপুর, আবদুল্লাহপুর, বঙ্গেরচর, রহিমপুর, সাহেবনগর এবং মোগড়া এলাকায় হাওড়া বাঁধ ভেঙে বাউতলা, উমেদপুর, নীলাখাত, নয়াদিল, টানোয়াপাড়া, নোয়াপাড়া, নুনাসার, বচিয়ারা, ধাতুর পহেলা, কুসুম বাড়ি, আদমপুরসহ অন্তত ৪০টি গ্রাম পানিতে তলিয়ে যায়। পানিবন্দি হয়ে পড়ে অন্তত এক হাজারেরও বেশি পরিবার। তাছাড়া বানের পানিতে তলিয়ে যায় ওইসব গ্রামের ফসলি জমি, সবজি ক্ষেত ও ছোট বড় অসংখ্য পুকুর। এতে দিশেহারা হয়ে পড়েছে স্থানীয় অসংখ্য কৃষক ও মৎস্যচাষিরা।
উপজেলার দক্ষিণ ইউনিয়নের নুরপুর গ্রামের বাসিন্দা মো: ফারুক মিয়া বলেন, বন্যায় আমার ঘরে কোমরসমান পানি ছিল। কোন উপায় না পেয়ে স্ত্রী সন্তানকে আশ্রয় কেন্দ্রে পাঠিয়েছি। ঘর থেকে পানি সরে যাওয়ায় সকালে বাড়িতে আসা হয়। পরিবারের সবাই মিলে ঘরে জমে থাকা কাদা সরানো হয়। ঘরে যে কাদা হয়েছে সেটা পরিষ্কার করে শুকিয়ে নিতে ভালো সময় লেগে যেতে পারে।
আব্দুল্লাহপুর গ্রামের জামিলা বেগম বলেন, আমাদের একটি টিনের ঘর ও একটি মাটির ঘর ছিল। বন্যায় বাড়িতে কোমরসমান পানি ওঠে। কোনো উপায় না পেয়ে সন্তান নিয়ে আশ্রয়কেন্দ্রে ওঠি। এরই মধ্যে মাটির ঘরটি ভেঙে পড়ে যায়। তাছাড়া টিনের ঘরের মধ্যে পানি ওঠায় পুরো ঘর কর্মমাক্ত হয়ে আছে। বর্তমানে ঘরের যে অবস্থা হয়ে আছে মনে হচ্ছে তা শুকাতে ৪-৫ দিন সময় লাগবে। তবে পানি কমে যাওয়ায় খুবই ভালো লাগছে।
একই গ্রামের সুরাইয়া বেগম বলেন, ঘরের মধ্যে কোমরসমান পানি ছিল। কোনো উপায় না পেয়ে আশ্রয়কেন্দ্রে গিয়ে ওঠি। এখন পানি কমেছে ঠিকই কিন্তু ঘরে যাওয়া খুবই কষ্টকর হয়ে উঠছে। ঘরে থাকা লেপ তোষক ভিজে নষ্ট হয়ে গেছে। ঘরে চুলা জালানোর মতো কোনো ব্যবস্থা নেই। পুরো ঘর এখন কর্দমাক্ত হয়ে আছে।
উমেদপুর গ্রামের মর্জিনা বেগম বলেন, ঘর থেকে পানি সরলেও ঘরের অবস্থা খুবই খারাপ। সারা ঘর কর্দমাক্ত হয়ে আছে। যে অবস্থা হয়ে আছে ঘরে উঠতে আরো ৩-৪ দিন সময় লাগবে।
মোগড়া গ্রামের হিরন মিয়া বলেন, বাড়ি থেকে পানি নেমে গেলেও থাকার উপযুক্ত করতে ২-৩ দিন সময় লাগবে। এই বন্যায় কয়েক দিন খুব কষ্ট করেছি। এখন একটু স্বস্তি লাগছে।
বাউতলা গ্রামের গৃহিণী আলেয়া আক্তার বলেন, এক ঘণ্টার মধ্যে বাড়িতে পানি ওঠে পড়ে। সন্তান আর অসুস্থ স্বামীকে নিয়ে ঘর থেকে কোনো রকমে আশ্রয়কেন্দ্রে গিয়ে ওঠি। এখন পানি কমেছে বাড়ি এসে দেখি বাড়ি আর বাড়ি নেই। ঘর মেরামত করে থাকার উপযুক্ত করতে ৪-৫ দিনের ওপর লেগে যেতে পারে।
আখাউড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) গাজালা পারভীন রুহি বলেন, বন্যা পরিস্থিতির অনেকটা উন্নতি হয়েছে। বন্যার পানি বেশ কমে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে চলেছে। বন্যার্তদের খাবারের কোনো সমস্যা হচ্ছে না। সরকারি-বেসরকারিভাবে ত্রাণ সহায়তা দেওয়া হচ্ছে।