ঢাকা বুধবার, ২৩শে এপ্রিল ২০২৫, ১০ই বৈশাখ ১৪৩২


হুজুরদের আপত্তি কেন?


১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ২২:৪৮

‘জান্নাত’ সিনেমার দৃশ

সাতক্ষীরার মুসল্লি ও মসজিদের ইমামদের আপত্তির কারণে ‘জান্নাত’ সিনেমা প্রেক্ষাগৃহে প্রদর্শনী বাতিল হয়েছে। ঈদে সিনেমাটি মুক্তির পর গত শুক্রবার সাতক্ষীরা শহরের সঙ্গীতা সিনেমা হলে সিনেমাটির প্রদর্শনী শুরু হবার কথা ছিল। সেজন্য সিনেমার প্রচারণা চালিয়ে এলাকায় পোস্টার-ব্যানারও লাগানো হয়েছিল।

সাতক্ষীরা জেলার পুলিশ সুপার সাজ্জাদুর রহমান বলছেন, ‘কিছু লোকজন বলেছে জান্নাত একটি পবিত্র নাম। এ নামে সিনেমা চালানো হলে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত লাগতে পারে বলে তারা মনে করেছে। এজন্য আমরা মালিককে বিষয়টি কমিউনিকেট করেছি।" এ কিছু লোক কারা? তাদের পরিচয় কী? এমন প্রশ্নে পুলিশ সুপার বলেন, "অনেকে ব্যক্তিগতভাবে আপত্তি করেছে। আবার মসজিদের ইমামরা বলেছে।’

ইমামদের আপত্তির বিষয়টি হল কর্তৃপক্ষকে জানানো হলে তারা আর ওই সিনেমাটি হলে প্রদর্শন করেনি বলেনি জানান পুলিশ সুপার। পুলিশ বলছে, যারা আপত্তি জানিয়েছে তারা সিনেমাটি দেখেনি। শুধু সিনেমার নাম নিয়ে তারা আপত্তি তুলেছে।

সাতক্ষীরায় সঙ্গীতা সিনেমা হলের অন্যতম মালিক মো: আব্দুল হক বলেন, ‘সিনেমার নাম নিয়ে মুসল্লিরা পুলিশের কাছে অভিযোগ করেছে। বিষয়টা এসপি (পুলিশ সুপার) সাহেব আমাদের জানিয়েছে। পরে আমরা ভাবলাম সামান্য একটা বিষয় নিয়ে ঝামেলার দরকার কী? সামনে নির্বাচন।’

সাতক্ষীরার সদর থানার ওসি বলেছেন, এলাকাটি রাজনৈতিকভাবে স্পর্শকাতর হওয়ায় মুসল্লিদের আপত্তির বিষয়টি তারা হল মালিককে জানিয়েছেন।

জান্নাত সিনেমার কাহিনী কেমন?

জান্নাত চলচ্চিত্রের মূল ভূমিকায় রয়েছেন চিত্র নায়িকা মাহিয়া মাহি এবং চিত্র নায়ক সাইমন সাদিক। চলচ্চিত্রে নায়িকা মাহিয়া মাহির নাম ‘জান্নাত’। তিনি একটি মাজারের খাদেমের মেয়ের ভূমিকায় অভিনয় করেছেন। জান্নাত চরিত্রটিকে একজন ধর্মপরায়ণ নারী হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে। অন্যদিকে নায়ক সায়মন সাদিকের দুটো চরিত্র ছিল। একটি চরিত্রে তাঁর নাম ছিল ইফতেখার এবং অপর চরিত্রে তাঁর নাম আসলাম।

পরিচালক জানান, চলচ্চিত্রে আসলাম একজন ধর্মপরায়ণ ছেলে যিনি মাজারের খাদেমের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন। খাদেমের মেয়ে অর্থাৎ জান্নাতের সাথে তার প্রেমের সম্পর্ক তৈরি হয়।

একপর্যায়ে জান্নাত জানতে পারে, সে যে ছেলেকে পছন্দ করে তার আসল নাম ইফতেখার, যিনি ভয়ঙ্কর এক জঙ্গি। পরিচালক মি: মানিক বলেন, ‘পরিণতিতে দেখানো হয়েছে যে ইফতেখার জান্নাতের হাতে কিল (হত্যা) হয়। জান্নাত নিজেকে সেভ (রক্ষা) করতে গিয়ে ছেলেটাকে কিল করে। যখন জান্নাত ও তাঁর বাবা জানতে পারে যে ইফতেখার একজন জঙ্গি তখন তাঁর সাথে রিলেশনশিপ (সম্পর্ক) নষ্ট করে।’

‘তখন জান্নাতের বাবাকে হত্যা করে এ ছেলেটা এবং জান্নাতকে জোর করে তুলে নিতে চায়। তখন ইফতেখারকে হত্যা করে জান্নাত। এটাই সিনেমার পরিণতি।’ সাতক্ষীরায় সিনেমার প্রদর্শনী বন্ধ করাকে দু:খজনক হিসেবে বর্ণনা করেন পরিচালক মানিক।

তিনি বলেন, ‘যারা ধর্মপরায়ণ লোক, ইসলামের পক্ষের লোক, তাদের জন্য এই সিনেমাটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ ছবিটাতে ইসলামের মাহাত্ম্য তুলে ধরা হয়েছে।’

এ সিনেমার পরিচালক মুস্তাফিজুর রহমান মানিক বলেন, বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সেন্সর বোর্ড কোন রকম আপত্তি ছাড়াই সিনেমাটিকে ছাড়পত্র দিয়েছে। সাতক্ষীরার আগে দেশের প্রায় ৭০টি সিনেমা হলে জান্নাত সিনেমার প্রদর্শনী হয়েছে। কিন্তু কোথাও কোন আপত্তি উঠেনি বলে পরিচালক মানিক দাবি করেন।

সিনেমা প্রদর্শনী বন্ধের দাবি প্রশাসন কেন মেনে নিল?

সাতক্ষীরা জেলার পুলিশ প্রশাসনের কর্মকর্তা জানিয়েছেন, সেখানে ইসলামপন্থীদের শক্ত অবস্থান রয়েছে। সে বিবেচনায় সাতক্ষীরা একটি স্পর্শকাতর এলাকা বলে মনে করে পুলিশ প্রশাসন।

‘বুঝেন তো বিষয়টিকে কেন্দ্র করে জামায়াতে ইসলামী মুসল্লিদের ইন্ধন দিতে পারে’, বলেন সদর থানার ওসি।

তাছাড়া নির্বাচনের আগে কোন সিনেমাকে কেন্দ্র করে ইসলামপন্থীরা রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ করুক সেটি চায় না প্রশাসন। এমনটাই জানালেন কর্মকর্তারা। এ সিনেমাকে কেন্দ্র করে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানার অভিযোগ এনে অস্থিরতা তৈরি হতে পারে বলে পুলিশের আশংকা ছিল। পুলিশ সুপার সাজ্জাদুর রহমান বলেন, ‘যত স্থিতিশীলতা বজায় রাখা যায়, ততই ভালো।’