ঢাকা বৃহঃস্পতিবার, ২৫শে এপ্রিল ২০২৪, ১৩ই বৈশাখ ১৪৩১


যুক্তরাষ্ট্রে করোনা ত্রাণের লাইনে উপচে পড়া ভিড়


১২ এপ্রিল ২০২০ ২০:১৫

সংগৃহিত

যুক্তরাষ্ট্রে করোনাভাইরাসজনিত মহামারি পরিস্থিতির কারণে কর্মহীন হয়ে পড়েছে লাখ লাখ মানুষ। কাজকর্ম না থাকায় খাদ্য সংকটও দেখা দিয়েছে এসব পরিবারে। ত্রাণ বিতরণের লাইনেও দেখা গেছে উপচে পড়া ভিড়। গত বৃহস্পতিবার সাউদার্ন ক্যালিফোর্নিয়াতে খাদ্য সামগ্রীর জন্য এতো বেশি মানুষ ভিড় জমিয়েছিল যে অপেক্ষমাণ গাড়ির লাইন প্রায় ১.৬ কিলোমিটার দীর্ঘ হতে দেখা গেছে। মার্কিন সংবাদমাধ্যম বাংলা প্রেস এ খবর জানিয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যের হাজার হাজার শ্রমজীবী মানুষ নতুন করে সরকারি খাদ্য সহায়তা চেয়ে আবেদন করছেন। আপাতত তাদের মাঝে বিনামূল্যে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য সামগ্রী বিতরণের জন্য বেশ কিছু উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে। সেখানে উপচে পড়ছে মানুষ। দীর্ঘক্ষণ ধরে লাইনে দাঁড়িয়ে খাদ্যদ্রব্য সংগ্রহ করতে দেখা যাচ্ছে তাদের। লস অ্যাঞ্জেলেসের মধ্য স্যান ফার্নান্দো ভ্যালি অঞ্চলের ভ্যান নুইস এলাকায় দেখা গেছে বৃষ্টির মধ্যে আবর্জনা ফেলার ব্যাগ গায়ে জড়িয়ে খাদ্যসামগ্রী সংগ্রহ করছে মানুষ।

কোভিড-১৯ মহামারির কারণে যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে অনত্যাবশ্যকীয় কার্যক্রমগুলো বন্ধ রাখা হয়েছে। স্টে অ্যাট হোম আদেশের আওতায় রয়েছেন ৯০ শতাংশের বেশি মানুষ। এতে সবচেয়ে বেশি বেকায়দায় পড়েছে লস অ্যাঞ্জেলেসের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় অংশের শ্রমজীবী দরিদ্র ল্যাটিনো পরিবারগুলো। লস অ্যাঞ্জেলেস রিজিওনাল ফুড ব্যাংক বিনামূল্যে খাদ্য বিতরণের কাজ করছে। এর প্রেসিডেন্ট মাইকেল ফ্লুড জানান, তাদের এ ভ্রাম্যমাণ খাদ্য বিতরণ কর্মসূচি সংকটে থাকা মানুষদের সহায়তা করার একটি ভালো উপায়। লস অ্যাঞ্জেলেস কাউন্টির বিভিন্ন জায়গায় তারা এ কার্যক্রম পরিচালনা করেন। প্রতিদিন এক-দুইবার এ কর্মসূচি চালানো হয়।

আয়োজকরা জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার তাদের সংগ্রহে যে পরিমাণ খাদ্য সামগ্রী আছে তা দিয়ে আড়াই হাজারের বেশি পরিবারকে সহযোগিতা করা যাবে। প্রত্যেক পরিবারকে দেওয়া হয়েছে ১৬ কেজি চাল, ডাল, ফ্রোজেন মুরগী, কমলা ও অন্য খাদ্য সামগ্রী দেওয়া হয়েছে।

নর্থ হলিউডের বাসিন্দা ৫০ বছর বয়সী জুয়ানা গোমেজ খাবার সংগ্রহ করতে লাইনে অপেক্ষা করছিলেন। তিনি বলেন, ‘আমার ছয় সন্তান। সবার খাবারের চাহিদা পূরণ করা কঠিন হয়ে পড়ে। আমার স্বামী নির্মাণ প্রতিষ্ঠানে কাজ করতো, তবে এখন আর আমরা বাড়ি ভাড়া দিতে পারি না।’

লস অ্যাঞ্জেলেস ফেডারেশন অব লেবার, এএফএল-সিআইও, লস অ্যাঞ্জেলেস রিজিওনাল ফুড ব্যাংক ও লেবার কমিউনিটি সার্ভিসের সহযোগিতায় এ খাদ্য বিতরণ কর্মসূচি সমন্বয় করেছেন লস অ্যাঞ্জেলেস সিটি কাউন্সিল প্রেসিডেন্ট নুরি মার্টিনেজ। খাদ্যাভাবে থাকা যেকোনও মানুষের জন্য তা উন্মুক্ত ছিল।

গলফ টুর্নামেন্টগুলোতে স্বাধীন কন্ট্রাক্টর হিসেবে কাজ করেন ৪০ বছর বয়সী ডেনিয়েল জিমিনেজ। বৃহস্পতিবার সন্তানদের নিয়ে তিনিও এসেছিলেন খাবার সংগ্রহের জন্য। রয়টার্সকে ড্যানিয়েল বলেন,‘‘এ খাবারগুলো পাওয়ায় আমার টাকা বেঁচে যাচ্ছে। কারণ, আমার এ অল্প আয়ের টাকা বাড়ি ভাড়া দিতেই চলে যাবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘তিন সপ্তাহ ধরে আমি কাজে যাচ্ছি না। অল্প কিছু টাকা যা জমানো ছিল তাও বাড়ি ভাড়া, গ্যাস বিল ও সেলফোন বিল দিতেই চলে যাচ্ছে। জানি না আমরা আবার কবে কাজে ফিরতে পারব।’
ড্যানিয়েল যখন কথা বলছিলেন তখন স্বেচ্ছাসেবীদেরকে দেখা গেছে সবাইকে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে চলার বিষয়টি স্মরণ করিয়ে দিতে।
লস অ্যাঞ্জেলেস রিজিওনাল ফুড ব্যাংক এর প্রেসিডেন্ট মাইকেল ফ্লুড বলেন, ‘আরও অনেক মানুষ নতুন করে খাদ্যাভাবের মধ্যে পড়ছে। তারা জানে না পরিস্থিতি কোথায় গিয়ে ঠেকবে।’ তিনি জানান, আরও অনেক মানুষ এখন হঠাৎ করে বেকার ভাতা ও সরকারি খাদ্য সহায়তা চেয়ে আবেদন করছে।

মাইকেল ফ্লুড বলেন, ‘তাদের ওইসব সুবিধা পেতে আরও কিছুটা সময় লাগবে। আমরা আমাদের সাধ্যমতো চেষ্টা করছি যেন আমরা পরিবারগুলোর হাতে খাবার তুলে দিতে পারি, যেন তারা খেতে পারে।’