ঢাকা শুক্রবার, ২৯শে মার্চ ২০২৪, ১৬ই চৈত্র ১৪৩০


কোনরকম বলয় তৈরি করে কাজ করায় বিশ্বাসী নই : শিক্ষামন্ত্রী


১১ এপ্রিল ২০১৯ ২২:২৯

ছবি সংগৃহীত

দায়িত্ব গ্রহণের তিন মাসের মাথায় বুধবার (১০ এপ্রিল) সচিবালয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে শিক্ষা বিটের সাংবাদিকদের সঙ্গে একান্তেই কথা বলেন শিক্ষামন্ত্রী। প্রায় দেড় ঘণ্টার আলাপচারিতায় শিক্ষাখাতকে এগিয়ে নিতে নিজের উদ্যোগের কথা তুলে ধরেছেন, পরামর্শ নিয়েছেন এ খাতের গণমাধ্যমকর্মীদের কাছ থেকেও। সচরাচর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নিয়ে মন্ত্রীরা সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। সেই রেওয়াজ ভেঙে কেবল দুই বিভাগের দুজন জনসংযোগ কর্মকর্তাকে পাশে রেখে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বললেন, আমি কোনরকম বলয় তৈরি করে কাজ করায় বিশ্বাস করি না।

দেশের সবচেয়ে বেশি জনগোষ্ঠীর সম্পৃক্ততায় থাকা শিক্ষাখাত নিয়ে স্বভাবতই আগ্রহ সবার। আলোচনায় এ খাত নিয়ে অনেক পরামর্শও পেয়েছেন দীপু মনি। সেসবের একটি ছিল—শিক্ষা প্রশাসন সিন্ডিকেট মুক্ত রাখা।

একজন সাংবাদিক বলেন, মন্ত্রণালয়, অধিদপ্তর এবং বোর্ডে একটা সিন্ডিকেট তৈরি হয়। মন্ত্রীর আশপাশ ঘিরে একটা সিন্ডিকেট থাকে, মহাপরিচালক বা বোর্ডে। তারা বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়-কলেজে বদলি-নিয়োগ নিয়ন্ত্রণ করতে চায় এবং করে। আমরা আশা করব আপনার মন্ত্রণালয়ে এ রকম সিন্ডিকেট তৈরি হবে না, যারা বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় বা কলেজে বদলি বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণ করবে।

আধা ঘণ্টার বেশি সময় প্রশ্ন নিয়ে একের পর এক উত্তর দেন এক সময়ের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে দায়িত্ব চালিয়ে আসা দীপু মনি।

প্রশাসনে সিন্ডিকেটের প্রশ্নে দীপু মনি বলেন, আগে কথা উঠতো মন্ত্রী বা মহাপরিচালক, তাদের ঘিরে একটা সিন্ডিকেট। আপনারা আশা প্রকাশ করেছেন যে, বর্তমান সময়ে সেটি না হয়। আমিও আপনাদের বলব, আপনাদেরও সেক্ষেত্রে সহযোগিতা চাই। অনেকে আছেন তারা হয়তো একটা প্রভাব বিস্তার করার চেষ্টা করতে পারে। অনেকে আছেন তারা মনে করতে পারেন আমরাও একটা বলয় তৈরি করব।

আমি খুব খোলামেলাভাবে বলি, আমি আমার রাজনীতিতেও কোনো বলয় তৈরি করে চলি না, এটা আপনারা সবাই খুব ভালো করেই জানেন। আমি আমার কাজের ক্ষেত্রেও, আমি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়েও কাজ করেছি। আমি কোনো বলয় তৈরি করে কাজ করিনি, এখানেও কোনরকম বলয় তৈরি করে কাজ করা আমি বিশ্বাসই করি না।’

শিক্ষামন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু কন্যা অনেক বিশ্বাস এবং আস্থা নিয়ে আমার ওপর এ দায়িত্ব দিয়েছেন। দায়িত্বটি যেন আমি সঠিকভাবে পালন করতে পারি, সেটিতে আমার দিক থেকে যেমন চেষ্টা থাকবে আপনাদেরও সহযোগিতা প্রয়োজন।

সিন্ডিকেট ভাঙতে সম্প্রতি শিক্ষা প্রশাসনে ১৮ জনকে সরিয়ে দিয়ে ২৬ জনকে পোস্টিং করা হয়েছে। অভিযোগ, তারা বছরের পর বছর ঘুরে ফিরে বিভিন্ন দপ্তরে ছিলেন।

আতঙ্কিত হবার কারণ নেই
শিক্ষা প্রশাসনে বদলি খুব স্বাভাবিক ব্যাপার জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, আতঙ্ক তাদের- এমন এক জায়গায় তিনি আছেন যেখানে অন্যায় সুবিধা নিচ্ছেন এবং সেখান থেকে বদলি হয়ে গেলে আর সেই অন্যায় সুবিধা নিতে পারবেন না। আর একটি হতে পারে- কেউ চরম দুর্নীতিবাজ, তিনি বদলি হয়ে গেলে যদি ধরা পড়ে যান, সেই আতঙ্ক হতে পারে। কিংবা দীর্ঘদিন এক জায়গায় বসে আছেন সেখান থেকে নড়তে চান না। বদলি নিয়ে অসন্তোষ, আতঙ্ক—তাহলে তো মুশকিল!

বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ
পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ নিয়ে মন্ত্রী বলেন, কয়েকটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ইদানিং সমস্যা দেখেছি, সেই সমস্যাগুলো সাথে সাথেই অ্যাড্রেস করার চেষ্টা করছি।

ভিসি ক্যাম্পাসের বাইরে!
এক প্রশ্নে মন্ত্রী বলেন, কেউ ক্যাম্পাসের বাইরে থাকেন— এ অভিযোগগুলো আছে এবং সত্যতাও আছে। সেই বিষয়গুলো আমরা দেখছি। যার যে দায়িত্ব তার সে দায়িত্ব পালন করাটাই বাঞ্ছনীয় এবং সেটি যদি না করেন তাহলে সে বিষয়ে আমাদের নিশ্চয় কিছু করণীয় রয়েছে।

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়
দীপু মনি বলেন, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে আমরা আরো নিবিড় পর্যবেক্ষণের মধ্যে নিয়ে আসবার চেষ্টা করছি। আইন যেন তারা মেনে চলে। তারা যেন ব্যবসায়ী মনোভাব নিয়ে শুধুমাত্র কাজ না করে, সেক্ষেত্রে সরকারের সহযোগিতা থাকবে।

স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদ্রাসা
স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদ্রাসার সরকারিকরণ বা এমপিওভুক্তি নিয়ে সিদ্ধান্ত হয়নি জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, শিক্ষকরা খুব সামান্য একটা মাসোহারা পান, এটি নিয়ে আলোচনা চলছে।

শিক্ষা আইন
আইনটি একটি পর্যায় পর্যন্ত গিয়েছিল জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, দেখা গেছে অনেক আইনে শিক্ষা বিষয়ে কিছু কথা আছে। এর কোনটির সঙ্গে যাতে সাংঘর্ষিক না হয়, সেজন্য একজন পরামর্শকের সহযোগিতা নিয়ে দেখছি। আশা করছি মন্ত্রণালয় থেকে এই বছরের শেষ নাগাদ পরবর্তী পর্যায়ে পৌঁছে দিতে পারব।

শিক্ষানীতি
মন্ত্রী বলেন, শিক্ষানীতি বাস্তবায়নের কাজ চলছে। শিক্ষানীতিতে একটি কমিশন গঠন করার কথা আছে, আমরা শিক্ষা কমিশন করতে চাই।

স্তরভেদে কোচিং ভিন্ন হবে
মন্ত্রী বলেন, কোচিংয়ের সঙ্গে যখন বাণিজ্যজুড়ে দেওয়া হয় সেটি ভালো নয়। একজন শিক্ষক ক্লাসে পাঠদান না করে শিক্ষার্থীদের প্রাইভেট-কোচিং করলেন এবং কেউ যদি না করেন তাহলে পরীক্ষায় ফেল করিয়ে দিচ্ছেন বা খারাপ নম্বর দিচ্ছেন। এটি অনৈতিক এবং সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য, কোনভাবেই এটাকে বরদাস্ত করা উচিত নয়।

কোচিং সেক্টরে নিয়ম-কানুনের কোনো বালাই নেই। আমরা চেষ্টা করব, এই সেক্টরটাকে একটু বেটার অর্গানাইজ করতে যাতে বিভিন্ন স্তরের কোচিং ভিন্ন করা যায়। একটা চেষ্টা করে দেখতে পারি। আমি জানি না কত ভালো কাজ করবে।

তিন প্রকল্পের শিক্ষকদের আত্মীকরণ!
মন্ত্রী বলেন, আমাদের অনেক শিক্ষক দরকার। যারা স্টেপ প্রকল্পে ছিলেন, রিসোর্স টিচার (আরটি) ছিলেন, এডিশনাল ক্লাস টিচার (এসিটি)ছিলেন—তারা চাকরি নিয়েছিলেন প্রকল্পে। তারা আন্দোলন করছেন, তারা মনে করছেন তাদের নেওয়া উচিত। এই তিন প্রকল্পের শিক্ষকদের কাজের কারণে আমাদের শিক্ষার মান বৃদ্ধি পেয়েছে; মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এবং তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রীও বলেছিলেন সেকথা।

এদেরকে সাধারণ কোনো নিয়মের মধ্যে আত্মীকরণের কোন সুযোগ নাই বা তাদের নতুন কোনো প্রকল্পে নেবার সুযোগ নেই। আমরা একেবারে ভিন্নভাবে চেষ্টা করছি কীভাবে অভিজ্ঞ-যোগ্য শিক্ষকদের ধরে রাখতে পারি। আমি এই মুহূর্তে নিশ্চয়তা দিতে পারছি না, কিন্তু আমরা চেষ্টা করছি।

বেসরকারি শিক্ষকদের বেতন
বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বেতন-কাঠামো তারা নিজেরা ঠিক করেন। আমরা আহ্বান জানাতে পারি যে একজন ভাল শিক্ষক, কেন ভালো বেতন দেবেন না?

অতিরিক্ত ফি
মন্ত্রী বলেন, যে সব প্রতিষ্ঠান অতিরিক্ত ফি আদায় করে অধিকাংশ সময় তার কোন তথ্য-প্রমাণ পাই না। প্রমাণ না পেলে ব্যবস্থা গ্রহণ করা সমস্যা হয়ে যায়। এক্ষেত্রে অভিভাবকদের একটা শক্ত অবস্থান চাই, আমাদের দিক থেকে চেষ্টা করছি।

নতুনসময় / আইআর