ঢাকা শুক্রবার, ২৯শে মার্চ ২০২৪, ১৫ই চৈত্র ১৪৩০


শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধে মাদক আর ভিডিও গেমে আসক্ত  শিক্ষার্থীরা !


২০ এপ্রিল ২০২১ ২৩:৩৪

ছবি- নতুনসময়

মহামারী করোনা ভাইরাসের কারণে দেশব্যাপী বন্ধ রয়েছে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এদিক থেকে রাজশাহীর সীমান্তবর্তী বাঘা উপজেলার চিত্র একটু ভিন্ন। এ অঞ্চলের লোকজন বলছেন,দীর্ঘ সময় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় বর্তমানে স্কুল-কলেজ গ্রামী অসংখ্য শিক্ষার্থী বইয়ের পাতার বাইরে মাদক এবং স্মাট ফোনের মাধ্যমে ভিডিও গেমস খেলায় আসক্ত হচ্ছে।

সরেজমিন বাঘা উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে এসব চিত্র লক্ষ করা গেছে। এর মধ্যে উপজেলার সীমান্তবর্তী গ্রাম গুলোতে গিয়ে দেখা গেছে স্কুল-কলেজ গ্রামী শিক্ষার্থীদের আনাগনা আগের যে কোন সময়ের চেয়ে দ্বিগুন। এদের বেশির ভাগ শিক্ষার্থী ইয়াবা, ফেন্সিডিল,সিগারেট এবং গাঁজা সেবনের সাথে সম্পৃক্ত।

নাম প্রকাশ না করার সর্তে উপজেলার আলাইপুর এবং মীরগঞ্জ বিজিবি ক্যাম্পের পাশে অবস্থিত দু’জন স্কুল শিক্ষক এবং একজন পল্লী চিকিৎসক জানান, অনেক দামি মোটর সাইকেল যোগে নামি-দামি ঘরের স্কুল-কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা বর্তমানে সীমান্ত এলাকায় এসে নেশা সেবন করে যাচ্ছে। যা দেখার কেউ নেই।

অপর দিকে বাঘা সদর সহ বেশ কিছু এলাকা ঘুরে এবং সাধারণ লোকজনের সাথে কথা বলে জানা গেছে, স্মাট ফোন এবং কম্পিউটারে ইন্টারনেট ব্যবহারের মাধ্যমে ভিডিও গেম খেলার হিড়িক পড়েছে এলাকায়। এ খেলায় শুধু শিক্ষার্থী নয়, বড়দের-দেখা-দিখি গ্রামের শিশু শিক্ষার্থীরাও ফ্রি ফায়ার নামক গেমের নেশায় জড়িয়ে পড়ছে।

লোকজন আরা জানান, এখন এলাকা ভিত্তিক বিভিন্ন মোড়ে মোবাইল ফোন ,সিম কাড, এবং গান রেকডিং এর দোকান গজেছে। এ সব ব্যবসায়ীরা বাঘা ক্যাবল নেটওয়ার্ক এর কাছ থেকে মাস চুক্তি ৫ শ টাকার ওয়াইফাই কিনে ২০-২৫ জন স্কুল-কলেজগ্রামী শিক্ষার্থীদের কাছে ১ শ টাকা করে মাসচুক্তি সংযোগ দিয়ে এখানেও ব্যবসা করে নিচ্ছেন। এতে করে উভয় পক্ষ আর্থিক ভাবে লাভবান হচ্ছে।

উপজেলার আমোদপুর গ্রামের নবম শ্রেনী পড়ুয়া শিক্ষার্থী তনময় জানায়, ফ্রি ফায়ার গেম আগে তেমন একটা ভালোলাগত না। বর্তমানে একদিন যদি এই গেম না খেলি তাহলে মাথায় কাজ করে না। এ পর্যন্ত আমি অনেক লেভেল পার করেছি এবং এ খেলায় আমার অনেক অর্থও ব্যয় হয়। একই কথা বলে অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী আল-মামুন ।

বাঘা শাহদৌল্লা সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী প্রত্যয় জানায়, ভিডিও গেম বিনোদনের জন্য একটি জনপ্রিয় মাধ্যম এবং আধুনিক সংস্কৃতির অঙ্গ। বর্তমানে যে সব গেমস সাধারণত কম্পিউটারে খেলা হয়ে থাকে সেগুলোকে আমরা কম্পিউটার গেমস বলে থাকি। তবে বর্তমান প্রেক্ষা পটে বাসায় কম্পিউটারে গেমস খেলতে গেলে বাবা-মা দেখলে ঝামেলা করে । তাই স্মাট ফোনে এম্বি কিনে ইন্টারনেট থেকে ডাউনলোড করে অথবা কিনে গেমস খেলে সময় পার করি। সে জানায়, দীর্ঘ এক বছর শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় শুধু আমি নয়, আমার মতো অনেকেই এখন গেমস খেলে সময় পার করে।

এ বিষয়ে বাঘা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মহাম্মদ আলী বলেন, করোনা সংকটের কারণে দীর্ঘ সময় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ। এ সময় শিক্ষার্থীরা ব্যস্ত থাকবে পড়ালেখা-সহ পাঠ্য বই এবং খেলার মাঠ নিয়ে। কিন্তু বাস্তবে আমরা এচিত্র খুব বেশি লক্ষ করছি না। প্রতিদিন বিকেলে যৎ সামান্য শিক্ষার্থীকে খেলার মাঠে দেখা গেলেও অধিকাংশরা বর্তমানে মাদকে আসক্ত হওয়া সহ স্মাট ফোনে গেমস খেলায় সম্পৃক্ত হচ্ছে। তিনি এ বিষয়ে সরকারের উর্ধতন কতৃপক্ষের সু-দৃষ্টি কামনা করেন।

সার্বিক বিষয়ে বাঘা উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার আবুল কাশেম বলেন, শিক্ষার্থীরা বর্তমানে ফ্রি ফায়ার নামক গেমটিতে খুব বেশি আসক্ত হয়ে পড়েছে। আবার অনেকেই মাদকে আসক্ত হচ্ছে বলে লোকমুখে খবর পাচ্ছি। এ গুলো থেকে ওদের পরিত্রান ঘটাতে হবে। এ জন্য সবার আগে প্রয়োজন সামাজিক ভাবে জনসচেতনতা সৃষ্টি। এ ক্ষেত্রে পরিবার-পরিজন এবং অভিভাবকদের বাড়তি নজর দারি একান্ত আবশ্যক বলেও তিনি মন্তব্য করেন।