ঢাকা শনিবার, ২০শে এপ্রিল ২০২৪, ৮ই বৈশাখ ১৪৩১


এবারের বাজেট যেন কেয়ারটেকার না হয়


১২ জুন ২০১৯ ০৩:২৩

নতুনসময় ছবি

‘নিজের ক্ষেতের সবজি নিয়ে এক কৃষক গেলেন বঙ্গবন্ধুর বাসভবনে। বাড়ির কেয়ারটেকার তাকে বসিয়ে সবজি গুলো নিয়ে গেলেন দোতলায়। বঙ্গবন্ধু টেলিফোনে কথা বলছিলেন। কথা বলা অবস্থায় কেয়ারটেকার তাঁকে সবজির কথা বললেন। বঙ্গবন্ধু পাঞ্জাবীর পকেট থেকে ২০ টাকা বের করে দিলেন।

সিঁড়ি দিয়ে নামার সময় কেয়ারটেকার ভাবলো সামান্য কিছু সবজির জন্য ২০ টাকা দেয়ার কী দরকার? সে ১০ টাকা রেখে দিয়ে বাকী ১০ টাকা দিলো কৃষকের হাতে। টাকা পেয়ে কৃষক অবাক হলো এবং দৌড়ে দোতলায় উঠে গেলো। ততোক্ষণে টেলিফোন রাখলেন বঙ্গবন্ধু।’কৃষক বঙ্গবন্ধুর কাছে ১০ টাকা ফেরত দিয়ে বললেন।’

"এগুলো আমার ক্ষেতের সবজি,আমি আপনার জন্য এমনি এনেছি, টাকা লাগবেনা।" জবাবে বঙ্গবন্ধু বললেন," কিন্তু আমিতো ২০ টাকা দিয়েছিলাম।" কৃষক জবাব দিলো, "উনি তো আমাকে ১০ টাকা দিলেন।"

একথা শুনে বঙ্গবন্ধু বললেন, "যে দেশে দোতলা থেকে নিচতলায় নামতেই ২০ টাকা ১০ টাকা হয়ে যায়, সে দেশে কত টাকার বাজেট প্রনয়ণ করলে তা জনগণের নিকট পৌঁছুবে?" বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, ফায়জুল হক এর ফেসবুক থেকে নেয়া।’

উল্লেখ্য, ১৩ জুন ২০১৯-২০ অর্থবছরের নতুন বাজেট পেশ করার চূড়ান্ত প্রস্তুতি নিচ্ছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।

১০ বছর টানা বাজেট দিয়েছেন সাবেক অর্থমন্ত্রী এ এম এ মুহিত। ব্যয়ের গুণগত মান নিশ্চিত নয়, তাঁর মূল লক্ষ্য ছিল ব্যয় বাড়ানো, বড় আকারের বাজেট করা। উদারহস্তে অর্থ ব্যয় করেছেন তিনি। বড় প্রকল্পগুলোর ব্যয় শেষ পর্যন্ত কোথায় থামবে, তা-ও অজানা। প্রায় সব ধরনের সংস্কার থেকে দূরে থেকেছেন। স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির অভাবে ছোট ছোট সমস্যা জমতে জমতে এখন বিস্ফোরণের পর্যায়ে চলে গেছে। ব্যাংকিং খাত এর বড় উদাহরণ।

বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর প্রথম আলোকে বলেন, অর্থনীতির বিভিন্ন সূচকের সঙ্গে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধির তথ্য-উপাত্তের বেশ অসংগতি আছে। প্রথমত, বলা হচ্ছে উৎপাদন খাতের পারফরম্যান্সের কারণে এবার বেশি প্রবৃদ্ধি হয়েছে। কিন্তু উৎপাদন খাতে বেশি প্রবৃদ্ধি হলে তো কর আহরণ বেশি হওয়ার কথা। রাজস্ব আদায়ে প্রবৃদ্ধি মাত্র ৭ শতাংশ। দ্বিতীয়ত, ৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হলে সামগ্রিক অর্থনীতি আরও চাঙা থাকার থাকা। ব্যাংকে খেলাপি ঋণের পরিমাণ বৃদ্ধির কথা নয়। অর্থনীতি চাঙা থাকলে ঋণখেলাপিরা কেন টাকা পরিশোধ করতে পারছেন না? তৃতীয়ত, ব্যবসা হলো প্রবৃদ্ধির উৎস। ব্যবসা বাড়লে ব্যাংকের আয় বৃদ্ধির কথা। কিন্তু ব্যাংকের আয় অর্ধেকে নেমে এসেছে।

আ হ ম মুস্তফা কামাল এর আগে পরিকল্পনামন্ত্রী ছিলেন। পরিসংখ্যানের মান নিয়ে সন্দেহ তাঁর জন্য নতুন নয়। নাজুক ব্যাংক ও শেয়ারবাজার তিনি উত্তরাধিকার সূত্রে পেয়েছেন। কৃষকেরা দর পাচ্ছেন না এটিও নতুন কিছু নয়। তবে এটি এখন মহাবিপদ হয়ে এসেছে। ঋণখেলাপিদের বিশেষ ছাড় দিয়ে এরই মধ্যে তিনি নিজেকে ঋণখেলাপিবান্ধব হিসেবে পরিচিত করেছেন।

এ অবস্থায় দর না পাওয়া কৃষকদের কৃষিকাজে ধরে রাখা, ব্যাংক খাত ও শেয়ারবাজারের ওপর আস্থা ফিরিয়ে আনা, বিনিয়োগের স্থবিরতা কাটানো, ব্যবসায়ীদের ছাড় দিয়েও রাজস্ব আদায় বৃদ্ধি, কর ফাঁকি রোধ, আয়বৈষম্য কমানো-অর্থমন্ত্রীর জন্য কাজের তালিকা অনেক লম্বা। প্রথম বাজেটে এর প্রতিফলন কতটা থাকবে, এটাই এখন দেখার বিষয়। সুতরাং বড় বাজেট দেওয়ার কৃতিত্বের চেয়েও ব্যয় সামাল দেওয়া, গুণমান বাড়ানো, স্বচ্ছতা তৈরি, প্রয়োজনীয় সংস্কার করা এবং আয়ের পথ বৃদ্ধিই হবে নতুন অর্থমন্ত্রীর জন্য বড় চ্যালেঞ্জ।’

নতুনসময়/আল-এম