ঢাকা মঙ্গলবার, ১৯শে মার্চ ২০২৪, ৬ই চৈত্র ১৪৩০


অর্থমন্ত্রীর নজর এবার সোনায়


১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ২২:১১

অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। ফাইল ফটো

এবার সোনা আমদানির ওপর মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) বসাতে চান অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। প্রতি ভরি সোনা আমদানির সোনার জন্য ১ হাজার টাকা ও বর্তমানে যাদের কাছে সোনা আছে, তাদের কাছ থেকেও প্রতি ভরিতে ১ হাজার টাকা করে নিতে চান।

৪ সেপ্টেম্বর বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদকে এসব কথা জানিয়ে অর্থমন্ত্রী একটি চিঠিও দিয়েছেন। অর্থমন্ত্রী তার চিঠিতে দেশে একটি সোনা নীতিমালা প্রণয়নেরও তাগিদ দিয়েছেন।

বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ ৯ সেপ্টেম্বর বলেন, সোনা নীতিমালা প্রণয়নের কাজ চলছে। শিগগিরই এটি করা হবে।

অর্থমন্ত্রী চিঠিটির অনুলিপি পাঠিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় এবং অর্থ মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ ও অর্থ বিভাগে।

চিঠিতে সোনা ব্যবসায়ের আন্তর্জাতিক বাজারে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ করা উচিত বলে মন্তব্য করেছেন অর্থমন্ত্রী। বলেছেন, দেশে কত সোনা আছে, তার কোনো হিসাব নেই, হিসাবটি করাও যাবে না। তাঁর মতে, এই হিসাব করতে গেলে সোনার বাজারমূল্য বিবেচনা করে একটি মূল্য নির্ধারণ করতে হবে। এই মূল্য নির্ধারণের ফলে যাঁদের কাছে সোনা আছে, তাঁরা রাতারাতি ধনী হয়ে যাবেন। এই বর্ধিত ধনের ওপর অবশ্য জুতসই লেভি নির্ধারণ করা যায়। তবে লেভি খুব বেশি ধরলে সোনার ব্যবসায়ের প্রসার হবে না।

অর্থমন্ত্রীর প্রস্তাব অনুযায়ী লেভি হতে পারে প্রতি ভরিতে ১ হাজার টাকা। বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি (বাজুস) লেভির পরিমাণ ৩০০ টাকা ধরার অনুরোধ জানালেও এত কমের পক্ষে নন অর্থমন্ত্রী।

দেশে সোনা কেনাবেচা হয় ভরি, আনা ও রতি হিসেবে। যেমন ১৬ আনায় ১ ভরি ও ৪ রতিতে ১ আনা। বাণিজ্যমন্ত্রীকে লেখা চিঠিতে অর্থমন্ত্রী জানান, আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে ভরির কোনো অস্তিত্ব নেই। আর দেশীয় হিসাবে ১১ দশমিক ৬৬৪ গ্রামে ১ ভরি হয়। সেই হিসাবে ১ কেজি সোনার ওজন হলো ৮৫ দশমিক ৭৩৩ ভরি। বিদেশ থেকে দেশে বেআইনিভাবে প্রচুর পরিমাণে সোনা আসে এবং সেগুলো আবার ভারতে পাচার হয় এবং এক হিসাবে ভারতের সোনা ব্যবসায়ের জন্য বড় একটি অংশ বাংলাদেশ থেকে যায় বলে অর্থমন্ত্রী উল্লেখ করেন।

অর্থমন্ত্রী চিঠিতে বলেন, ‘বাস্তবতা হলো আমাদের কোনো সোনা নীতিমালা নেই। এখানে সোনা আমদানি করা যায়। কিন্তু গত সাত থেকে আট বছরে এক ফোঁটা সোনাও আমদানি হয়নি। আমাদের স্বর্ণকারেরা খুবই গুণী এবং তাঁরা স্বর্ণালংকারের একটি সীমিত বাজার পরিচালনা করেন। এসব সোনাই আমাদের অভ্যন্তরীণ সংগ্রহের সোনা এবং সেগুলোকে প্রায়ই নতুন করে বানানো হয়।’

সোনার গহনা বিক্রির ফাইল ফটো

সোনা আমদানির ওপর ২০১১ সালে প্রতি আউন্সে (২৮ দশমিক ২৫ গ্রাম) ৩ হাজার টাকা ভ্যাট আরোপ করা হয়েছিল উল্লেখ করে বাণিজ্যমন্ত্রীকে অর্থমন্ত্রী জানান, আগে এই ভ্যাট ছিল ৭০০ টাকা। কিন্তু নতুন ভ্যাট হার আরোপের পর আর কোনো সোনা আইনগতভাবে দেশে আসেনি।

দেশের জন্মলগ্নে ১৯৭১ সালে প্রতি ভরি সোনার দাম ১৫০ টাকা ছিল বলে তথ্য দেন অর্থমন্ত্রী। জানান, প্রতি আউন্স (আড়াই ভরির মতো) সোনার দাম ছিল তখন ৪২ দশমিক ৫ মার্কিন ডলার। বাড়তে বাড়তে ১৯৮৪ সালে প্রতি ভরি সোনার দাম হয় ৪ হাজার ১০০ টাকা। বর্তমানে তা ১০ গুণের বেশি বেড়েছে।

বাণিজ্যমন্ত্রীকে অর্থমন্ত্রী জানান, এ অবস্থায় দুটি কাজ করা যেতে পারে। প্রথম কাজটি হবে, সোনার দাম আন্তর্জাতিক দামের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ করা ও যাদের কাছে সোনা আছে তাঁদের ‘দৈব ধন অর্জনের’ (উইন্ডফল গেইনস) ওপর প্রতি ভরিতে ১ হাজার টাকা করা। দ্বিতীয় কাজটি হবে, প্রতি ভরি সোনা আমদানির ওপর ১ হাজার টাকা ভ্যাট নির্ধারণ করা। ইনভেস্টপিডিয়ার মতে, উইন্ডফল গেইনস হচ্ছে অপ্রত্যাশিত কোনো অর্জন, যা আসে আকস্মিক কোনো পরিস্থিতির ফলে।

অর্থমন্ত্রীর প্রস্তাব হচ্ছে, উইন্ডফল গেইনসের ওপর যে টাকাটা আদায় করা হবে, সেটা হবে দুই বছরের মধ্যে এবং দুই কিস্তিতে। অর্থমন্ত্রী বলেন, একই সময়ে সোনা ব্যবসাকে বৈধ ঘোষণা করা হবে। কখন সেই বৈধতা ঘোষণা দেওয়া যায়, সেটা এখন ঠিক করতে হবে।

জানতে চাইলে বাজুসের সভাপতি গঙ্গাচরণ মালাকার গত শনিবার বলেন, ‘আগের নীতিমালাটি করা হয় শুধু রপ্তানিকে প্রাধান্য দিয়ে, যেটা করার সময় বাজুসের কোনো প্রতিনিধি জানতেনই না। এমনকি জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কাছেও নীতিমালাটি অজানা ছিল। আমরা চাই আমদানি-রপ্তানি মিলিয়ে সোনা নীতিমালা হওয়া উচিত।’

এমআর