ঢাকা শুক্রবার, ২৯শে মার্চ ২০২৪, ১৬ই চৈত্র ১৪৩০


পুড়ছে কাঠ,ধোয়ায় বিপন্ন পরিবেশ ও ফসলের মাঠ


১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০৪:৫৮

ইটভাটা নিয়ন্ত্রন আইনের তোয়াক্কা না করে বরগুনার আমতলী ও তালতলী উপজেলায় চলছে একাধিক ইটভাটা। আইনে ড্রাম চিমনী ব্যবহার করে কাঠ দিয়ে ইট পোড়ানো সম্পুর্ণ নিষেধ থাকলেও বছরের পর বছর এসব ভাটা বহাল তবিয়তে ইট তৈরী অব্যহত রেখেছে। ভুক্তভোগী এলাকাবাসীর অভিযোগ, প্রশাসন সাময়িক জরিমানা করলে বা চিমনী ভেঙে দিলেও কয়েকদিনের মধ্যেই আবারও ভাটা প্রস্তত হয়ে যায়।

সরেজমিনে আমতলী এলাকার তালুকদার বাজার এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, সড়কের পাশে ফসলের মাঠ জুড়ে ড্রাম চিমনীর এইচআরটি ব্রিকস নামের একটি ভাটায় কাঠ পুড়িয়ে ইট তৈরী চলছে। পাশেই স্তপ করে রাখা হয়েছে আস্ত গাছের গুড়ি ও চেড়াই কাঠ। ওই এলাকার কয়েকজন বাসিন্দা জানান, ডিসেম্বর মাসের শুরুতে ভাটার প্রস্ততি শুরু হয়। এরপর টানা মার্চ মাস পর্যন্ত এ ভাটায় কাঠ ব্যবহার করে ইট তৈরী হয়। ইট পোড়ানো শুরু হলে ক্ষতিকর কালো ধোয়াঁয় আচ্ছন্ন হয় গোটা এলাকা। এছাড়াও ধূলোবালিতে পথ চলাই দায় হয়ে পড়ে। ভাটার মালিক রিপন তালুকদার বলেন, তিনি জেলা প্রশাসন থেকে তার ভাটার অনুমোদন নিয়েছেন। তবে ড্রাম চিমনীর কারণে পরিবশে অধিদপ্তরের ছাড়পত্র নেই, তবে প্রতিবছর ভাটা শুরু আগে ‘ম্যানজ’ করতে হয় তাদের। বেশি চাপাচাপি হলে দর দামও বেশী হয়। একটু দূর এগুতেই তালতলা এলাকায়ও এইচবিএম (হিজবুল্লাহ ব্রিকস) নামের একই ধাঁচের অপর একটি ভাটা। এ ভাটার চেহারাও আগের ভাটার মতই। এখানেও ড্রাম চিমনী ও কাঠ দিয়েই পোড়ানো হয় ইট। আর অনুমোদন ও ম্যানেজ প্রকৃয়াও একইরকম বলে জানালেন ভাটার ব্যবস্থাপক। পরিবেশ অধিদপ্তরকে প্রতি বছর টাকা দিয়েই নিশ্চিন্তে ইট পোড়ানো হয় অবৈধ এসব ভাটায়। স্থানীয় একজন বাসিন্দা আবদুল মালেক বলেন, মাঝে মাঝে অভিযান পরিচালনা করে স্থানীয় প্রশাসন। গুড়িয়ে দেয়া হয় চিমনী, পানি ঢালা হয় চুল্লিতে। কিন্ত ভাটা মালিকগন দমার পাত্র নন, ফের চিমনী তৈরী করে সপ্তাহখানেকের মধ্যেই ভাটা প্রস্তত করে আবারো ইট পোড়ানোর ধুম হয় এসব ভাটায়। চালিতাবুনিয়া এলাকার হারুন মিয়া ও সাহেব বাড়ি এলাকার আবুল মিয়ার মালিকানাধীন দুটি ভাটাও ঠিক একইরকম ড্রাম চিমনীর। দিনভর ওই এলাকা ঘুরে দেখা মেলে আরও কয়েকটি ভাটার। মহিষডাঙা এলাকার এমসিকে বিকসের মালিক সোবাহান কাজী। তিনিও ভাটা গড়েছেন ড্রাম চিমনীর, আর বরাবরের মতই কাঠ পুড়িয়েই ইট তৈরী করা হয় এখানে। গুলশাখালী খেকুয়ানী এলাকায় গিয়ে দেখা মেলে মুন্সি ব্রিকস নামের অপর একটি ভাটার। এ ভাটার বিষাক্ত কালো ধোঁয়া নিষ্কাশন পদ্ধতিও ড্রামের।

ওইসব এলাকার একাধিক বাসিন্দাদের সাথে ভাটার বিষয় নিয়ে কথা হয়। তাঁরা বলেন, তাঁরা চরম ভুক্তভোগী ও ক্ষতিগ্রস্ত প্রতিনিয়ত, কিন্ত ভাটার মালিকদের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানানোর উপায় নেই। কেনোনা, এনারা প্রত্যেকেইে এলাকার প্রভাবশালী ব্যক্তি। এছাড়াও প্রশাসন তো দেখছে ভাটাগুলো অবৈধ ও ইট তৈরীর প্রকৃয়াও অবৈধ। এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে বরং সুবিধা নিয়ে ছেড়ে দিচ্ছে। যে কারণে দুর্ভোগ মেনে নিয়েই নিশ্চুপ তাঁরা।
ইটভাটা নিয়ন্ত্রন আইন ২০১৩’র ধারা ৪ এ লাইসেন্স ব্যাতিত ইট প্রস্তত সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। ধারা ৫ এর ১ ও ৪ উপধারায় ফসলের মাঠের মাটি ব্যবহার ও গ্রামীণ সড়কে ইট ভাটার ইট এবং কাাঁচাাল পরিবহনে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। এছাড়ও ৬ এ কাঠ পোড়ানো, ৮ এর ঘ ধারায় কৃষিজমি ব্যবহারে সম্পুর্ন নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। অর্থাৎ, ভাটা নিয়ন্ত্রন আইনানুসারে উল্লেখিত ভাটার কোনো বৈধতা নেই। আইন ও মাঠ পর্যায়ের বাস্তবতা নিয়ে মুঠোফোনে কথা হয় বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন’র সাধারণ সম্পাদক আবদুল মতিনের সাথে।

তিনি জানান, ভাটাগুলোর ক্ষতি ভয়াবহতা আপাতত দৃশ্যমান না হওয়ায় এর ভয়াবহতা সম্পর্কে মানুষ অবগত নয়। আইন প্রয়োগে মাঠ পর্যায়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত বা ক্ষমতাপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের গাফেলতিকে দায়ি করে তিনি বলেন, সরকারকে ইটভাটার ক্ষতির দিকগুলো তুলে ধরে যথাযথ আইন প্রনয়ন ও বাস্তবায়নে আমরা চেষ্টা করেছি এবং বিভিন্ন সময়ে সুপারিশমালা দিয়েছি। সরকার আন্তরিকতার সাথে কাজ না করলে ভাটার এসব অনিয়ম বন্ধ সম্ভব না।

জেলা প্রশাসন এ ব্যাপারে প্রতিবছর পদক্ষেপ নিয়ে আসছে, এবং নিয়মিত পরিদর্শনে অবৈধ ভাটা নজরে এলে সংক্ষিপ্ত আদালত পরিচালনা করে ভাটা স্থায়ীভাবে বন্ধ করা বলে ভাটা নিয়ে আলাপকালে জেলা প্রশাসক কবীর মাহমুদ জানানা। তিনি বলেন, খুব শীঘ্রই এসব ভাটা বন্ধে নিবাহী হাকিম অভিযান পরিচালনা করবেন।