ঢাকা শুক্রবার, ২৬শে এপ্রিল ২০২৪, ১৪ই বৈশাখ ১৪৩১


রমজানকে ঘিরে তৎপর অসাধু ব্যবসায়ীরা


১৩ মার্চ ২০২১ ১৭:২৩

প্রতিকি

প্রতিদিনই চাল ও ভোজ্যতেলসহ বিভিন্ন নিত্যপণ্যের দাম বাড়ায় নাভিশ্বাস উঠেছে সাধারণ মানুষের। এবার আসন্ন রমজানকে সামনে রেখে নিত্যপণ্যের দাম আরো বাড়ানোর পাশাপাশি মজুতের চেষ্টায় তৎপর হয়ে উঠেছে এক শ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ী। যেহেতু রমজানকে ঘিরে ওই মাসজুড়ে প্রশাসনের তৎপরতা বেশি থাকে, তাই এক মাস আগেই দাম বাড়াতে অপতৎপরতা চালাচ্ছে এই অসাধু চক্রটি।

দেশের সবচেয়ে বড় পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জে নিত্যপণ্যের দামের খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রমজানে বেশি ব্যবহূত হয় এমনসব পণ্যের দাম প্রতিদিনই বাড়ছে। এর মধ্যে রয়েছে-ছোলা, মটর, মসুর ও খেসারি ডালের পাশাপাশি ভোজ্যতেল ও চিনি। খাতুনগঞ্জে বর্তমানে পাইকারি পর্যায়ে প্রতি মণ বিদেশি ছোলা মানভেদে বিক্রি হচ্ছে ২৩০০-২৫৫০ টাকার দরে। অথচ গত মাসেও এসব ছোলা ২২০০ টাকার নিচে বিক্রি হয়। মিয়ানমারের ছোলা বিক্রি হচ্ছে ২৪০০ টাকায়। সবচেয়ে বেশি বেড়েছে খেসারি ডালের দাম। এক মাসে প্রায় ৭৫০ টাকা বেড়ে বর্তমানে প্রতি মণ খেসারি ডাল বিক্রি হচ্ছে ২৮০০ টাকা (কেজি ৭৫ টাকা) দামে। অথচ এক মাস আগেও প্রতি মণ খেসারি ডাল বিক্রি হয়েছে ২০৫০ টাকার (কেজি ৫৫ টাকা) নিচে। আর কয়েক দফায় ৪৫০ টাকা পর্যন্ত বেড়ে প্রতি মণ মটর ডাল ১৪০০-১৪৫০ টাকায় (কেজি ৩৮-৩৯ টাকা) বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া গত এক মাসে প্রতি মণ মসুর ডালে ৪০০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

বাংলাদেশ ডাল ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ শফিকুল ইসলামকে ডালের দাম বৃদ্ধির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি ব্যস্ততার অজুহাত দেখিয়ে পরে কথা বলবেন বলে জানান।

এদিকে সয়াবিন তেল এবং চিনির দাম বৃদ্ধিও অব্যাহত রয়েছে। মৌলভীবাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি হাজি মোহাম্মদ গোলাম মাওলা বলেন, ‘প্রতিদিনই তেল ও চিনির দাম বাড়ছে। তবে এটি অন্য সময় যেভাবে দাম ওঠানামা করে সেভাবেই হচ্ছে। এখানে রমজানকে সামনে রেখে দাম বাড়ছে এটি সঠিক না’।

তিনি তেলের দাম বৃদ্ধির জন্য আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বৃদ্ধির কারণকে দায়ী করেন। তবে চিনির দাম বৃদ্ধির কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে ব্যস্ততার কথা বলে এ বিষয়ে পরে কথা বলবেন বলে জানান তিনি।

মাস দেড়েক আগেও প্রতি মণ চিনি বিক্রি হতো ২১০০ টাকার নিচে। কিন্তু বর্তমানে ২৩৫০ টাকা ছাড়িয়ে গেছে। সবচেয়ে বেশি বেড়েছে বাংলাদেশ চিনিশিল্প করপোরেশনের সরকারি প্যাকেটজাত লাল চিনির দাম। প্রতি কেজি ৮৫ টাকা দরে হচ্ছে খুচরা পর্যায়ে। এ ছাড়া সয়াবিন এবং পামঅয়েলের দাম যথারীতি বাড়তি দামেই বিক্রি হচ্ছে।

এদিকে বাড়তে শুরু করেছে পেঁয়াজের দামও। খুচরা ব্যবসায়ীরা পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধির যৌক্তিক কোনো কারণই বলতে পারছেন না।
বাজার পরিস্থিতি এবং বাংলাদেশ ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি)-এর তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, প্রতি কেজি ভালো মানের দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকায়। সপ্তাহখানেক আগেও এই দাম ছিল ৪০-৪৫ টাকায়। আমদানি করা পেঁয়াজের দামও এক মাসের ব্যবধানে ১৫ টাকা বেড়ে গেছে। টিসিবির বাজার বিশ্লেষণের তথ্য বলছে, গত এক মাসের ব্যবধানে দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৩৫.৭১ শতাংশ বেশি দামে। ঢাকার খুচরা ও পাইকারি বাজারে পেঁয়াজের কোনো প্রকার ঘাটতি নেই বলে জানা গেছে। এ ছাড়া গত ২ সপ্তাহে ব্রয়লার মুরগির দাম বেড়েছে কেজিতে ২৫-৩০ টাকা। ১৩০-১৩৫ টাকা কেজি দরের মুরগির দাম এখন ১৫৫-১৬০ টাকা।

আসন্ন রমজানে দেশের বাজার পরিস্থিতি নিয়ে শঙ্কিত খোদ ব্যবসায়ীরা। জিনিসপত্রের দাম বৃদ্ধির জন্য তারা আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বৃদ্ধি, পণ্য পরিবহন খরচ বৃদ্ধি এবং সরকারের বিভিন্ন ট্যাক্স আদায়কে দায়ী করেছেন।

এ ব্যাপারে বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি ও এফবিসিসিআই’র সাবেক সহসভাপতি মোহাম্মদ হেলালউদ্দিন বলেন, ‘এবারের রোজা আরো বেশি খারাপ হবে। কারণ হচ্ছে, প্রথমত আন্তর্জাতিক বাজারে সব জিনিসের দামই বেড়েছে। এমনকি ভাড়াও বেড়েছে। আগে যেটা ভাড়া ছিল ৫ হাজার থেকে ৬ হাজার ডলার, এখন সেটা ১৪ হাজার ডলারে পৌঁছেছে। সব মিলে আমি খুবই শঙ্কিত, এবারের রমজান কীভাবে যাবে। এখন সরকারকেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে, বাজারটা কীভাবে সহনীয় রাখা যায়। কারণ সরকার কয়েক ধাপে ভ্যাট নিচ্ছে। পোর্টে পণ্য এলেই ভ্যাটের সার্টিফিকেট আনতে বলে। সার্টিফিকেট নিতে গিয়ে লেনদেন করতে হয়, ঢাকায় আসা-যাওয়ার ফাঁকে ততদিন শিপিং এবং পোর্ট ডেমারেজ দিতে হয়, আবার কোন মেথডে ট্যাক্স নেওয়া যায় সেভাবেই ট্যাক্স আদায় করা হয় ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে। তাতে করে মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা।’

তিনি রমজানে জিনিসপত্রের দাম সহনীয় রাখতে অন্তত রোজার মাসটা সরকারকে ব্যবসায়ীদের প্রতি নমনীয় হওয়ার পরামর্শ দেন।