ঢাকা শুক্রবার, ২৬শে এপ্রিল ২০২৪, ১৪ই বৈশাখ ১৪৩১


রাজস্ব নেই আমদানী করা ভারী বাহনে


৯ মার্চ ২০২১ ০৫:৪৩

ছবি-নতুনসময়

মুন্সিগঞ্জের গজারিয়া উপজেলার গুয়াগাছিয়া গ্রাম। ২০১৭ সালের সাত ডিসেম্বর এই গ্রামের সড়ক নির্মানের সময় এক রোড রোলারের চাপায় নিহত হয় সাহাবা নামের তিন বছরের এক শিশু। নিহত সাহাবার দাদা আব্দুল খালেক প্রধান জানান তার নাতনী নিহতের ঘটনায় মামলা করেনী তারা। তার ভাষ্যমতে সরকারের সাথে মামলায় যেহেতু তারা লড়ে পারবেনা তাই মামলা করা থেকে বিরত থাকতেই হয়েছে আব্দুল খালেক প্রধানদের।

বিভিন্ন গণমাধ্যমের তথ্য থেকে জানা যায়, সারাদেশের প্রতিবছর শুধু সহ সেতু নির্মান যন্ত্রবাহন বিশেষ করে রোড রোলার, এক্সেবেটরের দূর্ঘটনায় নিহত হয় প্রায় ২৫ জনের বেশী মানুষ। আহত হয় শতশত । এদের বেশীরভাগেরই মামলা হয়না। কারন যেসব যন্ত্রবাহনের আঘাতে দূর্ঘটনা ঘটে তাদের নিবন্ধন নেই তাই নজরদারীও নেই। এইসব যন্ত্রবাহন যারা ব্যবহার করে তাদেরকেও কৈফিয়ত দিতে হয়না কোথাও। তাছাড়া এসব যন্ত্রবাহন কেনাবেচা বা হাতবদলের সময়ও করের আওতায় পড়েনা।

খোঁজ নিয়ে জানা যায় শুধুমাত্র গত পাঁচ বছরে বাংলাদেশে মোট ১৫০১.৮৭ মিলিয়ন ডলারের রোডরোলার এস্কেবেটর মেশিনসহ অন্যন্যো ২৬ হাজার ২৬১ টি মেশিন আমদানী হয়েছে । যার বেশীর ভাগই চল্লিশ বছরের পুরোনো যা পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর । তাছাড়া এর আগে আমদানীর সংখ্যাও কয়েকলাখ যা ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে সারা দেশে।

এ্যাকসিডেন্ট রিসার্স ইন্সটিটিউটের পরিচালক হাদিউজ্জামান বলেন, এইসব ভারী যন্ত্রবাহনকে নিবন্ধন বা রেজিস্ট্রেশনের আওতায় আনতে হবে। তা না হলে এইসব যন্ত্রবাহনের কবলে পড়ে দূর্ঘটনার হার দিন দিন বাড়বে। সাধারন মানুষও কোনো প্রতিকার পাবেনা।

তিনি বলেন, রেজিস্ট্রেশন না থাকার কারনে সেফটি মেজারমেন্ট নিয়ে কাজ করেনা এইসব যন্ত্রবাহন ব্যবহারকারীরা। তাই দূর্ঘটনায় পড়তে হয় সাধারন মানুষকে। বিশেষ করে এস্কেবেটরের ব্যবহারের সময বেশী দূর্ঘটনা ঘটে।

অর্থনীতিবিদ হোসেন মনসুর বলেন, এইসব যন্ত্রবাহন ব্যবহার করে ঠিকাদাররা বছরে কোটি কোটি টাকা আয় করছে। তাছাড়া সরকারের উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখার জন্য আরো হাজার হাজার মেশিন কাজের স্বার্থেই আনতে হবে। এসব যন্ত্রবাহনকে করের আওতায় আনলে বছরে শতশত কোটি টাকা রাজস্ব আয় হতো সরকারের। তিনি বলেন এই দায়িত্ব জাতীয় রাজস্ববোর্ড কে নিতে হবেই।

অভিযোগ রয়েছে বিদেশী ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান বিশেষ করে চাইনীজ প্রতিষ্ঠানগুলো বাংলাদেশে কাজ করতে এসে রিটার্ন ব্যাক প্রক্রিয়ায় শুল্ক মওকুফ করে আমদানী করে কাজ শেষে দেশী ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের কাছে কোনো ধরনের শুল্কছাড়া বিক্রি করে। তাছাড়া অনেক প্রতিষ্ঠান স্পেয়ারপার্টসের তথ্য দিয়ে শুল্কফাকির মাধ্যমে এইসব যন্ত্রবাহন আমদানী করছে বছরের পর বছর।
সূত্র মতে, প্রায়শই সড়কে চোখে পড়ে নির্মান যন্ত্রবাহন রোড রোলার। রাজধানীসহ বাংলাদেশের প্রতিটা এলাকায় উন্নযন কর্মকান্ড যেখানে চলে সেখানেই চোখে পড়ে রোডরোলার, এস্কেবেটর, ড্রামটাক, পেভার,ডোজারসহ বিভিন্ন নির্মান যন্ত্রবাহন। তাদের কাজের সময় কাউকে তোয়াক্কা করার বিষয় নেই। এই সড়কে ভ্যানগাড়ী, ব্যাক্তিগত গাড়ী কিংবা রিকসা যেটিই চলছে সবাইর রেজিস্ট্রেশন রয়েছে কোথাও না কোথাও। কিন্তু এই রোড রোলার সড়ক ব্যবহার করলেও তার কোনো রেজিস্ট্রেশন নেই সেইসাথে সরকারী কোনো দফতরের কাছে কোনো জবাবদীহিতা নেই । তাই এসব যন্ত্রবাহন দূর্ঘটনা ঘটালেও অভিযোগ অনেকটা দায়সারা।
ঠিকাদারের রোড রোলার এস্কেবেটরস,হুইল লোডার,ডোজার,পেভার,ডামট্রাকসহ বিভিন্ন নির্মান যন্ত্রবাহন ব্যবহার করে কোটি কোটি টাকা আয় করলেও নিবন্ধনের আওতায় না আসায় সরকারকে কোনো ধরনের কর দিতে হচ্ছেনা ঠিকাদারদের। বছরের পর বছর যুগের পর এর কোনো সরকারী দফতরে নিবন্ধন বা রেজিস্ট্রেশন না করেই ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে ঠিকাদারসহ ব্যবসায়ীরা। আর এসব যন্ত্রবাহনের সাথে দূর্ঘটনায় নিহতদের স্বজনরাও কোনো সুবিচার আশা কররার চেস্টাও করেনা। তার প্রধান কারন রেজিষ্ট্রেশন না থাকার কারনে মূলত এইসব যন্ত্রবাহনের মালিক বা চালকদের আইনের আওতায় আনাও সম্বব নয় । যেহেতু রোড রোলার এস্কেবেটরস,হুইল লোডার,ডোজার, পেভার,ডামট্রাক বেশিরভাগই সরকারী কাজের সাথে সম্পৃক্ত তাই দূর্ঘটনায় কবলে পড়া ব্যাক্তিদের স্বজনরা মামলা করতেও ভয় পায়।

এসকল ভারী যন্ত্রপাতি চালানো ঠিকাদার ফজলুল হক বলেন, তিনি এক চাইনিজ কোম্পানি থেকে একটি এস্কেবেটরস কিনেছেন। তিনি যেহেতু ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করেন সেহেতু এটি তার প্রয়োজন। তিনি বলেন, এটার কোন সরকারী লাইসেন্স নেই। শুধুমাত্র চাইনিজ তাদের কাজের জন্য সেটি নিয়ে এসেছিল। কাজ শেষে তারা বিক্রি করে দিয়েছে।

তিনি বলেন, এটার সরকারী নিবন্ধন থাকলে অবশ্যই নিবন্ধন করে নিতেন। যেহেতু নাই সেহেতু তিনি এভাবেই পরিচালনা করছেন।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সারাদেশে এ বহু এ ধরনের বাহন আছে। সরকার যদি এগুলো নিবন্ধনের আওতায় নিয়ে আসে তাহলে কোটি কোটি টাকা রাজস্ব আয় হবে।

যদি কোন কারণে দূর্ঘটনা ঘটেই থাকে তবে এর দ্বায় আসলে তার চালক ও মালিকের। এটার রেজিষ্ট্রেশন না থাকার কারণে আইনী জটিলতা আছে। লোক মারা গেলে তো লোক আনা যাবেনা তবে অবশ্যই এর মালিকের ক্ষতিপূরণ দেয়া উচিৎ।
ফজলুল হক বলেন, তার এস্কেবেটরসের এখ নপর্যন্ত কোন দূর্ঘটনা ঘটেনি। এ বিষয়ে তিনি সচেতন রয়েছেন। এ ধরনের মেশিনারিজের করের আওতায় আনা প্রয়োজন বলেও তিনি মনে করেন।

বিআরটিএ’র চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মদ মজুমদার জানান, তারা এইসব যন্ত্রবাহনকে নিবন্ধেনের আওতায় আনার চেস্টা করবে। তবে সেজন্য সড়ক ও জনপথ মন্ত্রনালয়কে এগিয়ে আসতে হবে। খুব শীঘ্রই এসব যন্ত্রবাহনকে রেজিস্টেশনের আওতায় এনে রাজস্বখাতকে আরো শক্তিশালী করার ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে ।

তিনি বলেন এতদিন বিষয়টি নজরে না আসলেও এখন থেকে রাজস্ব বাড়ানোর স্বার্থে বিআরটিএ এসব যন্ত্রবাহনকে করের আওতায় আনার কাজ শুরু করবে।