ঢাকা মঙ্গলবার, ২৩শে এপ্রিল ২০২৪, ১১ই বৈশাখ ১৪৩১


আমরা হয়তো ট্রেনটাই ফেল করবো : বাণিজ্যমন্ত্রী


২০ মে ২০২০ ২৩:০১

করোনার কারণে অনেক বড় বড় কোম্পানি অনেক দেশ থেকে তাদের বিনিয়োগ স্থানান্তর করবে। এ জন্য আমরা হয়তো সবই করবো। কিন্তু ততদিনে হয়তো আমরা সেই ট্রেনটাই ফেল করবো- এমনটাই মন্তব্য করেছেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি।

বুধবার (২০ মে) বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে বাণিজ্য সহায়ক পরামর্শক কমিটির সভা শেষে সাংবাদিকদের তিনি এ মন্তব্য করেন। সভায় স্বশরীরে উপস্থিত ছিলেন শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন। এছাড়াও অনলাইনে সংযুক্ত ছিলেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন, প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান ফজলুর রহমান প্রমুখ।

সভার আলোচনা বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘করোনার কারণে অনেক বড় বড় কোম্পানি অনেক দেশ থেকে তাদের বিনিয়োগ স্থানান্তর করবে। আমরা সেই সুযোগটা যদি নিতে পারি তাহলে করোনা পরিস্থিতি থেকে কিছু সুযোগও পেয়ে যাব। পাশাপাশি কর্মহীনতার ধাক্কাটাও আমাদের সামলাতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘আজকে এসব বিষয়গুলো সব মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও সংস্থার সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করলাম। আমরা বিভিন্ন আলোচনা করছি কিন্তু হয়তো মূল ট্রেনটাই আমরা ফেল করে দিব। সবকিছুই হয়তো আমরা করবো। কিন্তু দেখবো তখন ট্রেনটি হয়তো আমাদের স্টেশন ছেড়ে চলে গেছে, আমরা আর সেই ট্রেনে উঠতে পারবো না।’

টিপু মুনশি বলেন, ‘এ জন্য অত্যান্ত জরুরিভিত্তিতে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। আমাদের অনেক সমস্যা রয়েছে, অনেক আলোচনা হয়েছে, ইজ অব ডুয়িং বিজনেসে সূচকে দুর্বলতার কথা বলা হয়েছে। নতুন বিদেশি বিনিয়োগকারীরা কিন্তু দেশের বাইরে বসে বসেই ইজ অব ডুয়িং বিজনেসের সূচকের পরিস্থির কথা জানতে চায়। সেখানে যদি তারা নিগেটিভ চিত্র পায় তাহলে তারা নিরুৎসাহিত হয়।’

তিনি বলেন, ‘এ মুহূর্তে দরকার বিনিয়োগের ক্ষেত্রে স্থানান্তর হওয়া কোম্পানিগুলোকে কতটা ধরতে পারি। আমাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বিভিন্ন দেশের বড় বড় কোম্পানির সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলছেন। ব্যবসায়ীদেরও কথা বলতে বলেছেন। শিল্পমন্ত্রীও বলেছেন আমরা পজেটিভ রয়েছি।কিন্তু কাজটা কি?’

টিপু মুনশি বলেন, ‘আজকে এনবিআরের চেয়ারম্যান বলেছেন রাজস্বের কথা, আমরা রাজস্বের প্রশ্নে যেতে চাই না। কিন্তু আমরা বলতে চাই যারা আমাদের দেশে বিনিয়োগ করতে আসবে, আমাদের যেসব প্রতিযোগী দেশ আছে তাদের তুলনায় আমরা বিনিয়োগকারীদে সুযোগ-সুবিধা বেশি দেব না সমান সমান দেব। আমরা কী বিনিয়োগকারীদের অন্যান্য দেশের সমান সুযোগ-সুবিধা দিতে পারবো?

তিনি বলেন, ‘যেমন- ইন্দোনেশিয়ায় ৭ মিলিয়ন ডালার বিনিয়োগ করলে পাঁচ বছরের জন্য ৫০ শতাংশ ট্যাক্স হলিডে দিচ্ছে। ৭ মিলিয়ন থেকে ৭০ মিলিয়ন বিনিয়োগে পাঁচ বছরের জন্য শতভাগ ট্যাক্স হলিডে দেবে। এছাড়া কেউ যদি ২১ বিলিয়ন ডলার বা তার বেশি বিনিয়োগ করে তাহলে তারা ২০ বছরের জন্য শতভাগ ট্যাক্স হলিডে দেবে। এমনি আরও অনেক সুবিধা। ইন্দোনেশিয়া আমাদের বড় প্রতিযোগী হয়ে দাঁড়িয়েছে। সেখানে ৬০ শতাংশ শ্রমিকের বয়স ৪০ বছরের নিচে। তাদের এটা একটা বড় সুযোগ। বেতনও মাত্র ৪০-৫০ শতাংশ বেশি। ইন্দোনেশিয়ায় বড় রকমের সুবিধা রয়েছে।’

বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা কি করছি? আমরা বলতে চাই যে, তাদের কাগজ-পত্র দেখে আমরা কাগজ তৈরি করবো। যাতে করে বিনিয়োগকারীরা চোখ ফিরিয়ে আমাদের দেশে চলে আসে। যে বাংলাদেশ ইজ বেটার, সেজন্য আমাদের কাজ করতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘আমরা উজবেকিস্তানের ডেপুটি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছি, তারাও কিন্তু আমাদের দেশের বিনিয়োগ করতে চায়। তবে তারা ডাবল ট্যাক্সেশনটা বাদ দিতে বলেছে। এমনি ছোট ছোট অনেক সমস্যা রয়েছে। যেমন-ভারতে নতুন লেবার আইন করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে আগামী তিন বছর লেবারের কোনো ঝামেলা করতে পারবে না কেউ। এটা বিনিয়োগকারীদের অনেক ভালো বিষয়। অন্তত তিন বছরে কোনো শ্রমিক সমস্যা হবে না। পাশাপাশি আমাদের দেশের শ্রমিকরা ফ্যাক্টরি ভাংচুর করছে, মালিককে ঘেরাও করছে। এটাতো খুব ভালো ছবি আমরা পাঠাতে পারছি না।’

তিনি আরও বলেন, ‘আগামীতে বিভিন্ন ফেয়ারে আমাদের নতুন নতুন পণ্য দেখাতে হবে। আমাদের কনক্রিট কিছু সিদ্ধান্ত নিতে হবে। প্রধামন্ত্রীর কার্যালয় এ বিষয়ে কাজ করছে। আমরাও আজকের বৈঠকের আলোকে এটা কার্যপত্র তৈরি করবো। কিন্তু বিনিয়োগকারীদের আমাদের পরিষ্কার কাগজ দেখাতে হবে যে আমরা এসব সুবিধা দেব। কাজ করতে এসে যখন তারা দেখবে যে একদিনের কাজ এক মাসেও হয় না। তখন তারা নেগেটিভ পিকচার নিয়ে ফিরে যায়। ফলে আর নতুন করে কেউ আসতে চায় না। ’

বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা যেটুকু পারবো সেটুকুই বলবো। আমরা ওয়ান স্টপ সার্ভিসের কথা বলছি, কিন্তু তারা এসে দেখছে কোনো ওয়ান স্টপ সার্ভিস নেই। ঈদের পরেই স্থানান্তর হতে যাওয়া বিনিয়োগগুলো আমাদের দেশে আনতে কি কি পদক্ষেপ গ্রহণ করা যায় সে বিষয়ে কাজ করবো। এ জন্য ব্যবসা-বাণিজ্যে গতি ফেরাতে সরকারকে একটি উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন টাস্কফোর্স গঠন করতে হবে।