পুঁজিবাজারে বিদেশি বিনিয়োগ অস্থিতিশীল করতে অপপ্রচার

পুঁজিবাজার ও বিদেশি বিনিয়োগে অস্থিতিশীল সৃষ্টিতে একটি মহল কাজ করছে বলে অভিযোগ উঠেছে। প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপের পর পুঁজিবাজার নতুন করে যখন স্থিতিশীলতার দিকে যাচ্ছে তখনই ওই চক্র তৎপর হয়ে উঠেছে। নিজেদের স্বার্থ হাসিলের জন্য কয়েকটি কোম্পানির বিরুদ্ধে মিথ্যা গুজব ছড়াচ্ছে তারা। এমনকি বাজার যাতে স্থিতিশীল না হতে পারে সেজন্য তালিকাভুক্ত কোম্পানির বিদেশি বিনিয়োগকারীদের দেশ থেকে বিতাড়িত করতে পর্যন্ত তৎপর হয়েছে ওই চক্র।
তালিকাভুক্ত শক্ত মৌলভিত্তির রিং সাইন টেক্সটাইল যে কোম্পানির বার্ষিক টার্টওভার বছরে ১ হাজার কোটি টাকা। ইপিজেডে ৬০টি প্লটে কোম্পানির কার্যক্রম চলছে। কোম্পানিটি বাংলাদেশে ২২ বছর ধরে কাজ করছে। কোম্পানিটির দীর্ঘ মেয়াদী কোনো ব্যাংক লোন নেই। আর কর্মীদের বেতন ৭ তারিখের মধ্যে হয়। এ কোম্পানি নিয়ে সম্প্রতি গুজব ছড়ানো হয়। বলা হয় ওই কোম্পানির বিদেশি পরিচালক ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সুং ওয়ে মিন আর বাংলাদেশে ফিরবেন না এবং রিং সাইন বন্ধ হয়ে যাবে। অথচ সব গুজব মিথ্যা প্রমাণ করে দিয়ে বাংলাদেশে কাজে যোগদান দিয়েছেন তিনি। অভিযোগ পাওয়া গেছে, রিং সাইন টেক্সটাইলের বিদেশি পরিচালক ও এমডিকে সম্প্রতি দেশের একটি মহল হুমকি দেয়। এমনকি জোর করে খালি কাগজে ওই বিদেশির স্বাক্ষর নেয়। এতে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের মধ্যে এক ধরনের আতঙ্ক সৃষ্টি হয়। এ কারণে দেশের ব্যাংকগুলো এখন রিং সাইন কোম্পানির সঙ্গে লেনদেন করতে অনীহা প্রকাশ করছে।
বাজার সংশ্লিষ্টরা বলেন, এভাবেই দেশের বাজারে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা আসতে চায় না। তার ওপর এ ধরনের কর্মকাণ্ড হলে যারা আছেন তারাও চলে যাবেন। এতে ভয়াবহ সংকটে পড়বে দেশের শেয়ারবাজার। তারা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে এ বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে বলেন।
কোম্পানি সূত্রে জানা যায়, গত ২৯ জানুয়ারি রিং সাইনের এমডি বাংলাদেশে ফিরেছেন। আর গত বৃহস্পতিবার কারখানায় কাজে যোগ দেন।
গত ৯ জানুয়ারি এমডিসহ ৩ পরিচালক- ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সুং ওয়ে মিন এবং পরিচালক ও এমডির বোন সুং ওয়েন লি অ্যাঞ্জেলা এবং পরিচালক ও এমডির মামী হাসিয়ো লিউ ই চাই নিজেদের দেশে যান। এমডির শাশুড়ি মারা যাওয়ায় তারা সেখানে যান। এর মধ্যেই চায়না নববর্ষ হওয়ার কারণে কিছু দিন বেশি নিজের দেশে অবস্থান করেন তারা।
আইপিওর টাকা আত্মসাৎ করার সুযোগ নেই এবং কোম্পানিটির ব্যাংক হিসাবেই ওই অর্থ রয়েছে। এছাড়া এমডি কাজেও যোগদান করেছেন। এর মাধ্যমে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে স্বস্তি ফিরে আসবে বলে মনে করছে রিং সাইন কর্তৃপক্ষ।
রিং সাইনের ব্যাংক স্টেটমেন্ট থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, কোম্পানিটির আইপিও ফান্ডের জন্য ব্র্যাক ব্যাংকে ৪টি হিসাব রয়েছে। এর মধ্যে আইপিওতে বাংলাদেশিদের আবেদনের জন্য ১টি, বিদেশিদের মধ্যে ডলারের জন্য ১টি, ইউরোর জন্য ১টি এবং পাউন্ডের জন্য ১টি হিসাব।
ব্যাংক হিসাব অনুযায়ী, রিং সাইনের আইপিও ফান্ডের ৪ হিসাবে ১৫০ কোটি টাকার মধ্যে ৯৭ কোটি ৩৯ লাখ ৪৯ হাজার টাকা রয়েছে। এছাড়া ৫০ কোটি টাকার ঋণ পরিশোধ করা হয়েছে ও আইপিও বাবদ ৩ কোটি ৬০ লাখ টাকা ব্যয় হয়েছে। আর ব্যাংকে আইপিও ফান্ড রাখায় সুদজনিত ৯৯ লাখ ৪৯ হাজার আয় হয়েছে।
আইপিও হিসাবের ৪টির মধ্যে বাংলাদেশিদের জন্য ১৫০১২০২৭৩৯৪২৬০০৩ নম্বর ব্যাংক হিসাবে ৮২ কোটি ১০ লাখ ৫৬ হাজার টাকা, ১৫০১২০২৭৩৯৪২৬০০৪ নম্বর হিসাবে ১৭ লাখ ৮৭ হাজার ডলার বা ১৫ কোটি ১৮ লাখ ৭৯ হাজার টাকা, ১৫০১২০২৭৩৯৪২৬০০৫ নম্বর হিসাবে ৬ হাজার ৮৪২ পাউন্ড বা ৭ লাখ ৫৭ হাজার টাকা এবং ১৫০১২০২৭৩৯৪২৬০০৬ নম্বর হিসাবে ২ হাজার ৭০৭ ইউরো বা ২ লাখ ৫৮ হাজার টাকা রয়েছে। অর্থাৎ রিং সাইনের আইপিও ব্যাংক হিসাবগুলোতে বর্তমানে ৯৭ কোটি ৩৯ লাখ ৪৯ হাজার টাকা রয়েছে।
রিং সাইন কর্তৃপক্ষ একাধিক ব্যাংকের মাধ্যমে লেনদেন করে। তবে সম্প্রতি একটি ব্যাংক থেকে ভয়-ভীতি দেখিয়ে ব্র্যাক ব্যাংকের হিসাবে থাকা আইপিও ফান্ডগুলো ওই ব্যাংকে স্থানান্তর করতে বলেন। একই সঙ্গে ওই ব্যাংকের মাধ্যমে এলসি কার্যক্রম পরিচালনা করতে হুমকি দেন। কিন্তু রিং সাইনের পর্ষদ অন্য ব্যাংকের মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালনা করতে চায়। এমন সিদ্ধান্তে ওই ব্যাংক কর্তৃপক্ষ রিং সাইনের বিদেশি পরিচালকদের সরাসরি হুমকি দিয়েছে। এতে অনেকটা ভীত হয়ে পড়েন রিং সাইনের বিদেশি পরিচালকেরা।
বিপর্যস্ত শেয়ারবাজার টেনে তুলতে খোদ সরকার নজর দিয়েছে। এ লক্ষ্যে ইতোমধ্যে সুনির্দিষ্ট বেশ কিছু উদ্যোগ নেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এছাড়াও রাষ্ট্রায়ত্ত ৪ ব্যাংক থেকে নতুন করে বিনিয়োগের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।
দেশের অর্থনীতিকে চাঙা করতে যখন সরকারের উচ্চ পর্যায়ের নীতি-নির্ধারকরা নানা সুবিধা দিয়ে বিদেশিদের আকৃষ্ট করছেন, তখন প্রতিষ্ঠিত বিদেশি বিনিয়োগকারীদের দেশ থেকে বিতাড়িত করতে কুচক্রী মহলটি উঠেপড়ে লেগেছে।
এভাবে প্রতিনিয়ত বিদেশি বিনিয়োগকারীদের বিভিন্নভাবে বাধা দিলে তারা এ দেশে ব্যবসা-বাণিজ্য করবে না বলে সংশ্লিষ্টরা জানান। যা পুঁজিবাজার ও দেশের অর্থনীতির জন্য অশনিসংকেত।