ঢাকা শুক্রবার, ২৬শে এপ্রিল ২০২৪, ১৪ই বৈশাখ ১৪৩১


দেশের অর্থনীতি এখন খারাপ অবস্থায় : অর্থমন্ত্রী


৮ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ০০:৪৪

দেশের অর্থনীতি এখন খারাপ অবস্থায় রয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। তিনি বলেছেন, এ অবস্থা শুধু বাংলাদেশে নয়, সারা বিশ্বের কোনো দেশেই আমদানি-রপ্তানি সঠিকভাবে হচ্ছে না। বাংলাদেশের কিছু খাতেও এর প্রভাব পড়েছে। বছর শেষে দেশে আমদানি-রপ্তানির অবস্থা ভালো হয়ে যাবে। ব্যাংকিং সেক্টরের অবস্থাও খুব ভালো না বলে তিনি মন্তব্য করেছেন।

গতকাল বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক লিমিটেডের (বিডিবিএল) প্রধান কার্যালয়ে ‘ব্রাঞ্চ ম্যানেজারদের বার্ষিক কার্যক্রম প্রণয়ন সম্মেলন ২০২০’-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী এ কথা বলেন। ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কাজী আলমগীরের সভাপতিত্বে সম্মেলনে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির, বিডিবিএলের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মেসবাহউদ্দিন বক্তব্য দেন।

অর্থমন্ত্রী বলেন, দেশের অর্থনীতি এখন খারাপ অবস্থায় রয়েছে। তবে বছর শেষে এ অবস্থা থেকে উত্তরণ সম্ভব। ব্যাংকিং সেক্টরের অবস্থাও খুব ভালো না। ব্যাংকগুলো যদি ভালো চলত, তবে ব্যাংকগুলোকে মার্জ করতে হতো না। ব্যাংক খাতে অনেক গরমিল রয়েছে। আর এ কারণে খেলাপি ঋণ বেড়ে গেছে। তিনি ব্যাংক কর্মকর্তাদের উদ্দেশে বলেন, ‘আপনাদের কারণে সংসদে আমাকে গালি শুনতে হচ্ছে। আপনারা ঋণ দিচ্ছেন, খেলাপি হচ্ছে। আর খেলাপি হওয়ার কারণে সংসদে গালি শুনতে হয় আমাকে।’

এরপর বিকেলে অর্থমন্ত্রী সহজে ব্যবসা করার সূচক নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন, যদিও ব্রিফিংয়ে তিনি এ সম্পর্কে কোনো কথা বলেননি। বরং ব্রিফিংয়ের বড় অংশজুড়ে বুধবার জাতীয় সংসদে স্বায়ত্তশাসিত, আধাস্বায়ত্তশাসিত সংস্থাগুলোর উদ্বৃত্ত তহবিলের একাংশ রাষ্ট্রীয় কোষাগারে নেওয়ার ব্যাপারে উত্থাপিত বিলের ওপর বিরোধী দলের সংসদ সদস্যদের সমালোচনার জবাব দেন তিনি।

অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘স্বায়ত্তশাসিত, আধাস্বায়ত্তশাসিত, স্বশাসিত প্রতিষ্ঠানগুলো যখন সৃষ্টি হয় তখন সরকার অর্থায়ন করে থাকে। লাভবান হলে প্রতিষ্ঠানগুলো নিজেদের মতো (অর্থ) ব্যবহার করে। সে জন্য দীর্ঘদিন থেকে কাজ হয়ে আসছে। এটা আমরা এক দিনে করিনি। এর আগেও সংসদে দুটি বিল পাস হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের সব কাজ করার পর যে অর্থ বাকি থাকবে সেখান থেকে ২৫ শতাংশ সরকারের কাছে থাকবে। এটা অনেকটা নিরাপত্তার মতো। তারা যখন বিপদে পড়বে তখন আবার সরকারের কাছে আসবে। সরকার অবশ্যই তাদের সাহায্য করবে। আমরা মাত্র ৬১টি স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের টাকা আনব।’

স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের অর্থ কোষাগারে নিয়ে গেলে তারল্য সংকট হবে কি না—এই প্রশ্নে অর্থমন্ত্রী বলেন, ব্যাংকে অতিরিক্ত তারল্য আছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য মতে, ব্যাংক খাতে এক লাখ ১৬ হাজার কোটি টাকা অলস আছে। ব্যাংকে অতিরিক্ত টাকা থাকলে লস। ব্যাংকে যে পরিমাণ টাকা থাকা দরকার সে পরিমাণ টাকা থাকলেই ভালো। তাই তারল্য সংকট হবে না। এতে আর্থিক শৃঙ্খলা আসবে।

মন্ত্রী বলেন, ‘যাঁরা জাতীয় সংসদে এই বিলের বিরোধিতা করেছেন তাঁরা বলছেন, আমরা এসব প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে জোর করে টাকা নিয়ে যাচ্ছি। আমি যা বুঝতে পেরেছি সেটি হলো, আমাদের ভালো কাজগুলো তাঁরা পছন্দ করেন না। সামান্য কিছু পেলেই তাঁরা হৈচৈ করেন। তাঁরা যেভাবে কথা বলেন এগুলো কোনো গণতান্ত্রিক ভাষা না। সভ্য সমাজে এমনভাবে কেউ কথা বলে না। অথচ তাঁরা একবারও বলেননি, আমি বিশ্বের এক নম্বর অর্থমন্ত্রী। একজন আমাকে ব্যবসায়ী মন্ত্রী বলেছেন। ব্যবসা করা তো অপরাধ না। আর আমি ব্যবসা করেছি ১২ বছর আগে। এখন আমি মন্ত্রী। এখন আর কোনো ব্যবসা নেই।’

তিনি আরো বলেন, ‘সংসদ সদস্যরা বলেছেন, ব্যাংকের দুর্বল অবস্থা। লক্ষ কোটি টাকা পাচার হয়ে যাচ্ছে। একজন মাননীয় সংসদ সদস্য এ কথা কিভাবে বলেন?’ অর্থনীতিকে ভালো অবস্থানে আনতে মন্ত্রী কাজ করছেন মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘আমরা উন্নতি করার চেষ্টা করছি। আমাকে এক বছর সময় দিতে হবে। তারপর দেখব কতটা উন্নতি করতে পেরেছি। বাজেটের সাত মাস হয়েছে, আরো পাঁচ মাস বাকি। তারপর আমরা বুঝতে পারব কোথায় অর্জন হয়েছে, কোথায় হয়নি।’

তিনি বলেন, ‘ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়ার যে লক্ষ্যমাত্রা তা আমরা নিয়ে ফেলেছি—এমন অভিযোগ আসছে। আমরা গত অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে ব্যাংক এবং সঞ্চয়পত্র থেকে ৬১ হাজার ৮৯১ কোটি টাকা ঋণ করেছিলাম। আর এই বছর একই সময়ে ৫৪ হাজার ৭৪২ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছি। সেই তুলনায় সাত হাজার ১০০ কোটি টাকা কম নিয়েছি। রাজস্ব আয় নিয়ে কথা উঠেছে। রাজস্ব আয় নেই। তাই সরকার ঋণ করছে। রাজস্ব আয় নেতিবাচক পাবেন যদি লক্ষ্যমাত্রা দিয়ে মূল্যায়ন করেন। লক্ষ্যমাত্রা আমরা সব সময় বেশি ধরি। লক্ষ্যমাত্রা বেশি না দিলে কর্মকর্তারা মনে করেন, অর্জন শেষ হয়ে গেছে। তাই আমরা বাড়তি টার্গেট দিই। গত বছর আমরা প্রথম ছয় মাসে ৯১ হাজার কোটি টাকা অর্জন করেছিলাম, এ বছর আমরা একই সময়ে ৯৭ হাজার কোটি টাকা পেয়েছি।’

মন্ত্রী বলেন, ‘রপ্তানিতে আমাদের ঘাটতি আছে। প্রথম সাত মাসে ৫ শতাংশের মতো নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি আছে। তবে বছর শেষে নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি থাকবে না। কোনো খাত বিপদে থাকলে আমরা সাহায্য করব।’

করোনাভাইরাসে কোনো প্রভাব পড়বে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা চাই না কোনো প্রভাব পড়ুক। পৃথিবীর অর্থনীতিটা এমন জায়গায় আছে যে এক দেশে কিছু হলে সারা বিশ্বে তার প্রভাব পড়ে।’