ঢাকা শুক্রবার, ২৯শে মার্চ ২০২৪, ১৬ই চৈত্র ১৪৩০


গ্রামে শহরের ছোঁয়া, আত্ননির্ভরশীল হচ্ছে বেকার যুবকরা


৬ ডিসেম্বর ২০১৯ ২১:৩০

ছবি-নতুনসময়

আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহার ২০১৮-তে একটা গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গীকার ছিল। তা হলো, ‘আমার গ্রাম আমার শহর’: প্রতিটি গ্রামে আধুনিক নগরসুবিধা সম্প্রসারণ: গ্রামকে শহরে উন্নীত করার কর্মসূচি গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করার। শহরের সুবিধা গ্রামে পৌঁছে দেওয়া। এবং গ্রতিটি ঘরে বিদ্যুৎ, পাকা সড়কের মাধ্যমে সকল গ্রামকে জেলা-উপজেলা শহরের সঙ্গে সংযুক্ত করা। ছেলেমেয়েদের উন্নত পরিবেশে লেখাপড়ার সুযোগ তৈরি। সুপেয় পানি এবং উন্নত মানের পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থা নিশ্চিত, সুস্থ বিনোদন, খেলাধুলার জন্য অবকাঠামো গড়ে তোলা, কর্মসংস্থানের জন্য জেলা-উপজেলায় কলকারখানা গড়ে তোলা এবং ইন্টারনেট, তথ্যপ্রযুক্তি সর্বত্র পৌঁছে দেওয়ার ঘোষনা ছিল মাননীয় প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনার।

আর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সে ঘোষনা রাজশাহীর মোহনপুর উপজেলার প্রতিটি গ্রামে গ্রামে বাস্তবরুপ নিতে শুরু করেছে। মাত্র অল্প দিনের ব্যবধানে উপজেলার প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলের মোড়ে মোড়ে চোখে পড়ার মত পরিবর্তন লক্ষ্যনীয়।

গত বুধবার সন্ধ্যার পর উপজেলার নজুর মোড়, পরিজুনপাড়া, পাকুড়িয়া, জাহানাবাদ, মহব্বতপুর, বিষহরা, আরিচার মোড়, সাহাজি বাজার, মৌপাড়া বাজার, বাঘ বাজার, কুঠিবাড়ী বাজার, সইপাড়া মোড়, গোছা বাজারসহ বিভিন্ন এলাকা সরজমিনে ঘুরে উন্নয়নের এ চিত্র এবং পরিবর্তন দেখা যায়।

নজুর মোড়ের প্রথম একমাত্র মুদি ব্যবসায়ী নজরুল ইসলাম বলেন, গত কয়েক মাস পূর্বেও এই মোড়ে একটি ছোট মুদি দোকান ছিল আমার। আমি সারা দিন সংসারের অন্যান্য কাজ সেরে সন্ধ্যার সময় দোকানে বসতাম এবং খুব সামান্য কেনা বেচা হত। কিন্তু অল্প সময়ের ব্যবধানে এখানে প্রায় ৫০-৬০ টি বিভিন্ন সামগ্রীর দোকান গড়ে উঠেছে এবং বর্তমানে এই মোড়ে সব ধরনের দ্রব্যাদি ক্রয়-বিক্রয় হচ্ছে। একই মোড়ের শ্যালো মেশিন যন্ত্রাংশ ব্যবসায়ী আব্দুল আজিজ বলেন, এখানে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান দিয়ে আমি খুব লাভবান হয়েছি। তিনি আরো বলেন, মোড়টিতে দোকানপাট সৃষ্টি হওয়ায় অনেক বেকার যুবকরা তাদের কর্মসংস্থানের পথ খুজে পেয়েছে। কারন অতীতে একজন বেকার মানুষ উপজেলা সদরে একটি ঘরের লক্ষ লক্ষ টাকা জামানত দিয়ে ব্যবসা শুরুর সামর্থ ছিল না। কিন্তু এখানে অল্প পুজি দিয়ে ব্যবসা আরম্ভ করতে পারছে।

পরিজুনপাড়া বাজারের ব্যবসায়ী ওবাইদুল রহমান বলেন, আমাদের এ বাজারে কিছুদিন আগেও ২-৩টি দোকান ছিল। কিন্তু উপজেলা সদর হতে ধোপাঘাটা বাজার পর্যন্ত রাস্তা কার্পেটিং হওয়ার কারনে এখানে অনেক দোকান নির্মাণ হয়েছে এবং সবার ভাল কেনা-বেচা হয়।

পাকুড়িয়া হাটের মুদি ব্যবসায়ী পলাশ আহমেদ বলেন, এখানে অতীতে একটি কলেজ প্রতিষ্ঠার লগ্ন হতে ৪-৫ টি দোকান ছিল। এক বছরের ব্যবধানে বর্তমানে এ হাটে দোকান সংখ্যা দুই শতাধিক। এবং পান কেনা বেচা হওয়ায় দেশের বিভিন্ন এলাকা হতে ক্রেতাদের আগমন ঘটায় এখানে মিনি শহরে পরিনত হয়েছে।

ধামিনপাকুড়িয়া গ্রামের প্রভাষক আকবর আলী বলেন, আমার বাড়ী নির্মাণ সামগ্রী সিমেন্ট, রড ১০ কি:মি: দুরত্বে কেশরহাট হতে আনা লাগত। কিন্তু বর্তমানে বাড়ীর নিকটে সব ধরনের উপকরণ পাওয়া যাচ্ছে। এতে একদিকে আমাদের সময় ও পরিবহন খরচ দুটোই সাশ্রয়ী হচ্ছে।

প্রবীন ব্যাক্তি সাবেক চেয়ারম্যান খোন্দকার মিজানুর রহমান মিজান এ প্রতিবেদককে জানান, উপজেলার বিভিন্ন মোড়ে মোড়ে জমজমাট বাজার সৃষ্টি হওয়ার ফলে স্থানীয় বেকার যুবকদের অনেকের কর্মসংস্থানের পথ সৃষ্টি হয়েছে। এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ঘোষনা গ্রাম হবে শহর, আর উনার ঘোষনার বাস্তব নিতে আরম্ভ হয়েছে। তবে একটি বিষয় খেয়াল রাখতে হবে সেটি হলো, গ্রামের মোড়ে দোকানপাট নির্মাণ করতে গিয়ে যেনো গ্রামের ঐতিহ্য নদীনালা, খাল-বিল, পুকুর, গাছপালা, খেলার মাঠ, খেতখামার বৃক্ষনিধন ও ভরাট না হয়।

শেখ হাসিনাও ‘স্মৃতির দখিন দুয়ার’ গ্রবন্ধে লিখেছেন, ‘আমার শৈশবের স্বপ্নরঙিন দিনগুলো কেটেছে গ্রামবাংলার নরম পলিমাটিতে, বর্ষার কাদা-পানিতে, শীতের মিষ্টি রোদ্দুরে, ঘাসফুল আর পাতায় পাতায় শিশিরের ঘ্রাণ নিয়ে, জোনাক-জ্বলা অন্ধকারে ঝিঁঝির ডাক শুনে...।’ তিনি লিখেছেন, ‘গ্রামকে তো আমি শৈশবের গ্রামের মতো করেই ফিরে পেতে চাই।’ ‘গ্রামীণ অর্থনৈতিক অবস্থা নিয়ে কিছু কথা’ প্রবন্ধে শেখ হাসিনা লিখেছেন, ‘গ্রামকেই করতে হবে অর্থনৈতিক কর্মকান্ডের কেন্দ্রবিন্দু’।

তাঁর এই কথাটাই হতে পারে আদর্শ শ্লোগান। ‘গ্রাম হবে শহর’ না বলে ‘গ্রামই প্রাণ’ বা ‘গ্রামই কেন্দ্রবিন্দু’ বা ‘শহরের সব সুবিধা যাবে গ্রামে’এ ধরনের কথা বলা যেতেই পারে।