ঢাকা শুক্রবার, ২৯শে মার্চ ২০২৪, ১৬ই চৈত্র ১৪৩০

মাদক ব্যবসায় জড়িত না হওয়ায় ছাত্রীকে পুড়িয়ে হত্যা


১৭ জুন ২০১৯ ০৩:৩২

মাদক ব্যবসায় জড়িত না হওয়ায় নরসিংদীর হাজিপুরে জান্নাতি নামে এক স্কুলছাত্রীকে পেট্রোল ঢেলে আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করা হয়েছে। এ ঘটনায় ৬ জন গ্রেফতার হয়েছেন। শনিবার রাতে নিহত জান্নাতির বাবা বাদি হয়ে শাশুরি শান্তি বেগমকে প্রধান আসামি করে ৪ জনের বিরুদ্ধে সদর মডেল থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। এর আগে, একই ঘটনায় আদালতেও মামলা দায়ের করা হয়।

নিউজ পড়তে এখানে ক্লিক করুন: যেভাবে গ্রেফতার হলেন ওসি মোয়াজ্জেম

মামলার আসামিরা হলেন- নিহত জান্নাতির শাশুরি শান্তি বেগম (৪৫), স্বামী শিপলু ওরফে শিবু (২৩), ফাল্গুনী বেগম (২০) ও শ্বশুর হুমায়ন মিয়া (৫০)। সকলেই চর হাজিপুরের খাসেরচর গ্রামের বাসিন্দা।

শনিবার রাত থেকেই পুলিশ বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে ৬ জনকে গ্রেফতার করেছে। তারা হলেন- মাদক ব্যবসায়ী শান্তি বেগমের বোন সাথী আক্তার, দেবর নওসের মিয়া, খালা পারুল বেগম, খালাতো ভাই টিউলিপ, মামা রতন মিয়া ও খালাত ভাই জাহাঙ্গীর।

মামলার এজাহার ও নিহতের পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, প্রায় ১ বছর আগে নরসিংদী সদর উপজেলার হাজিপুর গ্রামের শরীফুল ইসলাম খানের ১০ শ্রেণিতে পড়ুয়া মেয়ে জান্নাতি আক্তারের (১৬) সাথে পার্শ্ববর্তী খাসেরচর গ্রামের হুমায়ুন মিয়ার ছেলে শিপলু মিয়ার প্রেম হয়। কিছুদিন পরই পরিবারের অমতে তারা পালিয়ে বিয়ে করেন। বিয়ের কিছুদিন যেতে না যেতেই স্বামীর আসল রুপ বেরিয়ে আসে। স্ত্রী জান্নাতিকে পারিবারিক মাদক ব্যবসায় সম্পৃক্ত করতে মাদক ব্যবসায়ী শাশুরি শান্তি বেগম ও স্বামী শিপলু চাপ প্রয়োগ করতে থাকেন। এতে রাজি হয়নি জান্নাতি। ফলে জান্নাতির উপর নেমে আসে কঠোর নির্যাতন। যৌতুকের টাকা না দেয়া ও মাদক ব্যবসায় জড়িত না হওয়াসহ বিভিন্ন কারণে চলতি বছরের ২১ এপ্রিল রাতে ঘুমন্ত অবস্থায় শাশুরি শান্তি বেগম ও তার মেয়ে ফাল্গুনী বেগম ও স্বামী শিপলু জান্নাতির শরীরে পেট্রোল ঢেলে আগুন লাগিয়ে দেয়। দগ্ধ হয়ে ছটফট করলেও তাকে হাসপাতালে নিয়ে যায়নি। পরে এলাকাবাসীর চাপে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অবস্থার অবনতি হলে তাকে ঢাকা মেডিকেলের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করানো হয়।

ঘটনার পর ২৫ এপ্রিল নিহতের দাদা মুক্তিযোদ্ধা সিরাজুল ইসলাম খান আদালতে মামলা দায়ের করেন। আদালত পুলিশ ব্যুরো-অব-ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) ৭ দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ প্রদান করে। কিন্তু পৌনে দুই মাসেও আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেনি পিবিআই। এরই মধ্যে দীর্ঘ ৪০ দিন মৃত্যু যন্ত্রণার পর গত ৩০ মে ঢামেকের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। ঘটনার পৌনে দুই মাস পার হলেও আসামিরা গ্রেফতার হয়নি।

সর্বশেষ শনিবার রাতে জান্নাতিকে যৌতুকের জন্য নির্যাতন ও মাদক ব্যবসায় সম্পৃক্ত না হওয়ায় পুড়িয়ে হত্যার অভিযোগে শাশুরি শান্তি বেগম, স্বামী শিপলু ওরফে শিবু, ফাল্গুনী বেগম ও শ্বশুর হুমায়ন মিয়াকে আসামি করে সদর মডেল থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন।

সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সৈয়দুজ্জামান বলেন, থানায় মামলা দায়েরের পর পরই আসামি গ্রেফতারে পুলিশের চিরুনি অভিযান শুরু হয়। তাদের গ্রেফতার করতে বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে ৬ জনকে আটক করা হয়। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তদন্তের স্বার্থে এখনই সব বলা যাচ্ছে না। তবে অচিরেই এজাহার নামীয় আসামিদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনা হবে।


নতুনসময়/এনএইচ