ঢাকা শুক্রবার, ২৬শে এপ্রিল ২০২৪, ১৩ই বৈশাখ ১৪৩১

নতুন প্রতারণা ‘অনলাইন টিকিট’


২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০৪:৪৬

প্রতীকি  ছবি

আর কষ্ট করে লাইনে দাঁড়িয়ে টিকিট কাটার দিন শেষ। ঘরে বসেই পাচ্ছেন স্বনামধন্য বিভিন্ন কোম্পানির বাসের টিকিট। ঘরে বসে ফেসবুকেই যদি পাওয়া যায় কাঙ্খিত টিকিট, তাহলে লম্বা লাইনে দাড়িয়ে, রোদ-ঝড়- বৃষ্টি উপেক্ষা করে কেন কাউন্টারে গিয়ে টিকিট কাটবেন?

ব্যাস এমন আকর্ষণীয় বিজ্ঞাপনে সাত-পাঁচ না ভেবেই ফেসবুক ম্যাসেঞ্জারে যোগাযোগ করে কেটে ফেলেন পুরো পরিবারের ভ্রমণ টিকিট। টিকিটের পুরো টাকাও পরিশোধ করলেন বিকাশ বা রকেটের মাধ্যমে। এরপর আসে যাত্রার সেই কাঙ্ক্ষিত দিন। কাউন্টারে গিয়ে দেখলেন আপনার নামে কোন টিকিট কাটা নেই। ব্যাস মাথায় হাত! বুঝতে আর বাকি নেই অনলাইনে টিকিট কিনে আপনি প্রতারিত হয়েছেন।

এমন প্রতারণার শিকার হয়েছিলেন দুই সন্তানের জননী তাসমিয়া নামের এক ভদ্রমহিলা। তিনি ঢাকার একটি বেসরকারী ব্যাংকে কাজ করেন। কক্সবাজার ভ্রমনে ছুটিতে যাবেন সপরিবারে। তার স্বামীও অফিস থেকে  নিয়েছিলেন ছুটি।

সমুদ্র বিহারের এই প্ল্যানে তার সবচেয়ে বড় দুঃশ্চিন্তা ছিল দীর্ঘ লাইনে দাড়িয়ে, রোদ-বৃষ্টি উপেক্ষা করে কাংক্ষিত সেই গন্তব্যস্থলের টিকিট সংগ্রহ করা। এ ধরনের কোনো বিড়ম্বনায় পড়তে চাননি তারা। হঠাৎ তাসমিয়ার চোখ আটকে যায় ফেসবুকের ঝকঝকে একটি পেজে।

এখন আর কষ্ট করে লাইনে দাঁড়িয়ে টিকিট কাটার দিন শেষ। ঘরে বসেই পাচ্ছেন স্বনামধন্য বিভিন্ন কোম্পানির বাসের টিকিট।

খুশিতে আত্মহারা হয়ে উঠেন তাসমিয়া। ফেসবুক ম্যাসেঞ্জারে যোগাযোগ করে তাসমিয়া কেটে ফেলেন পুরো পরিবারের ভ্রমণ টিকিট। বিকাশের মাধ্যমে পরিশোধ করেন ভাড়ার পুরো টাকা। এরপর আসে কক্সবাজার যাত্রার সেই কাঙ্ক্ষিত দিন। কিন্তু বাস কাউন্টারে গিয়ে যেন মাথায় বাজ পড়ে তাসমিয়ার। তার নামে কোনো টিকিটই বরাদ্দ নেই! অনলাইনে তিনি যে টিকিট কিনেছেন, তার পুরোটাই ভুয়া।

এমন প্রতারণার খপ্পরে পড়েছিলেন দিনাজপুরের শামিম। ঢাকায় অনুষঠিতব্য একটি চাকরির পরীক্ষায় অংশগ্রহনের জন্য অনলাইনে বাসের টিকিট করে বিকাশে মূল্য পরিশোধ করে শামীম।

নির্ধারিত দিনে শামিম বাস কাউন্টারে গিয়ে জানতে পারে তার নামে কোন সিট বিক্রি হয়নি। অনলাইনে সে প্রতারকের খপ্পরে পড়েছে।

রিটায়ার্ড সরকারী কর্মকর্তা আবদুস সালাম সাহেবও এই প্রতারকদের হাত থেকে রেহাই পাননি! সদ্য বিবাহিত মেয়ে ও মেয়ের জামাইকে হানিমুনে পাঠাবেন দার্জিলিং। অনলাইনে বিভিন্ন ট্যুরস এন্ড ট্রাভেলসের অফার ও এ্যাড দেখে অনলাইনে যোগাযোগ করলেন একটি প্রতিষ্ঠানের সাথে। দুজনের দার্জিলিং ট্যুরের জন্য ধার্যকৃত ফি’র এক তৃতীয়াংশ বিকাশের মাধ্যমে পরিশোধের পর বাকি টাকা ও পাসপোর্টসহ সালাম সাহেব, তার মেয়ে ও মেয়ের জামাইকে ডাকা হলো ঢাকার একটি ঠিকানায়।

নির্ধারিত দিনে আবদুস সালাম ঐ ঠিকানায় উপস্থিত হয়ে খুঁজে পেলেন সেই ট্যুরস এন্ড ট্রাভেলস প্রতিষ্ঠান। তবে সেখান থেকে জানানো হলো আবদুস সালাম তাদের সাথে যোগাযোগ করেননি বা বিকাশে অর্থ গ্রহনের কোন সিস্টেম তাদের প্রতিষ্ঠানে নেই। যে বিকাশ নম্বরে টাকা পাঠিয়েছেন আবদুস সালাম সেটা তো তাদের নয়ই বরং বিকাশ নম্বরটিও বন্ধ। পাশাপাশি যে ফেসবুক পেজে যোগাযোগ করেছিলেন সেটাও আর খুঁজে পাওয়া গেল না। বুঝতে আর বাকি রইলো না, অনলাইনে প্রতারকের খপ্পরে পড়েছেন তিনি।

কর্মব্যস্ত মানুষ খুব সহজেই আকৃষ্ট হতো অনলাইনে প্রতারক চক্রের এসব চটকদার বিজ্ঞাপন দেখে। বিকাশ রকেটে টাকা দিয়ে কেটেও ফেলতেন ভুয়া টিকিট। অসংখ্য মানুষ অনলাইনে এই ধরনের প্রতারণার শিকার হয়েছেন। তারা প্রতারিত হয়ে শুধু অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি, হারিয়েছেন মূল্যবান সময় ও মর্যাদা। মুখোমুখি হতে হয়েছে অনেক অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির।

গত ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ইং তারিখ এনা ট্রান্সপোর্ট তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানায় অভিযোগ করে যে, একটি প্রতারকচক্র এনা ট্রান্সপোর্টের আপডেটেড তথ্যাদি সংবলিত ভূয়া ফেসবুক পেজের মাধ্যমে বাংলাদেশের বিভিন্ন রুটে যাত্রীদের কাছ থেকে অনলাইনে এনা ট্রান্সপোর্টের টিকিট বিক্রির নাম করে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। পাশাপাশি ধ্বংস করছে এনা ট্রান্সপোর্টের সুনাম।

এমন অভিযোগের ভিত্তিতে তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল জোনের এসি সালমান হাসানের নেতৃত্বে একটি টীম ডেমরার সারুলিয়া এলাকা অভিযান চালিয়ে এই প্রতারক চক্রের মূল হোতা নোকরুজ্জামান নতুন (২৫) কে গ্রেফতার করে। উদ্ধার করা হয় ব্যবহৃত ২১ টি মোবাইল সিমকার্ড।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, নোকরুজ্জমানের বাড়ি কুষ্টিয়া জেলায়। ঢাকা ও ঢাকার পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন এলাকায় অবস্থান করে বেশ কিছুদিন থেকেই সে কিছু সুপ্রতিষ্ঠিত প্রতিষ্ঠানের নামে অনলাইনে প্রতারনা করে আসছিল। সে প্রতারণার কাজে ১৩০ টি মোবাইল সিম ব্যবহার করে বিকাশ ও রকেটের মাধ্যমে ভূক্তভোগীদের কাছ থেকে অর্থ গ্রহন করেছে। সে এনা ট্রান্সপোর্ট, হানিফ পরিবহন, শ্যামলী পরিবহন, শ্যামলী ট্যুরস এন্ড ট্রাভেলসসহ অনলাইনে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নাম, লোগো, সর্বশেষ আপডেটেড তথ্যাদি ব্যবহার করে ফেসবুক পেজে আকর্ষণীয় বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে গ্রাহকদের সাথে প্রতারনা করত।