ঢাকা বৃহঃস্পতিবার, ২৫শে এপ্রিল ২০২৪, ১৩ই বৈশাখ ১৪৩১

গাজীপুরে স্মার্ট কার্ড বিতরণে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ


৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০৯:২১

গাজীপুরে স্মার্ট কার্ড বিতরণে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ

গাজীপুরে ভাওয়াল মিজাপুরে স্মার্ট কার্ড বিতরণে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়া গেছে। যাদের জাতীয় পরিচয়পত্র হারিয়ে গেছে কিন্তু ফটোকপি আছে, কিংবা নতুন ভোটারদের ক্ষেত্রে স্লিপ হারিয়ে গেছে তাদের কাছ থেকে হাতিয়ে নেয়া হচ্ছে মোটা অংকের টাকা।

স্মার্ট কার্ড বিতরণের সময় সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, গাজীপুর সদর উপজেলার ভাওয়াল মিজাপুর বিশ্ব বিদ্যালয় কলেজ মাঠে স্মার্ট কার্ড বিতরণের কার্যক্রম চলছে। পুরুষ ও মহিলা দু’টি লাইনে সারিবদ্ধভাবে দাড়িয়ে স্মার্ট কার্ড নিচ্ছেন। কলেজ মাঠে কিছুক্ষণ দাড়িয়ে থাকলে নিচ তলায় বারান্দায় বেশ কিছু মানুষের ভিড় লক্ষ করা যায়। লাইন বাদ দিয়ে বারান্দায় মানুষের এতো ভিড় কেন? প্রশ্নের অনুসন্ধানে কয়েকজনের কাছে জানতে চাইলে তারা বলেন, যাদের ভোটার স্লিপ ও জাতীয় পরিচয়পত্র হারিয়ে গেছে তাদের কাছ থেকে টাকা জমা নিয়ে স্মার্ট কার্ড দেয়া হচ্ছে এবং সেখানে টাকা লেনদেনের হচ্ছে। ১০ থেকে ১৫ জন পুরুষ ও মহিলা হাতে টাকা নিয়ে দাড়িয়ে আছে যাদের স্লিপ ও পরিচয়পত্র হারিয়ে গেছে।

স্মার্ট কার্ড বিতরণের টিম লিডার আল মাহমুদুল হাসান তাদের নাম ও ঠিকানা একটি সাধারণ খাতায় লিখছেন এবং টাকা জমা নিচ্ছেন। তবে টাকা নেয়ার কোন রশিদ প্রদান করছেন না তিনি।

নির্বাচন কমিশনের নিয়মানুযায়ী, যাদের পরিচয়পত্র হারিয়ে গেছে তাদের চালান ফরমের মাধ্যমে নির্ধারিত কোডে ৩৪৫ টাকা ব্যাংকে জমা দিয়ে ভেন্যু থেকে স্মার্ট কার্ড গ্রহণ করতে হবে। এছাড়া নতুন ভোটারদের স্লিপ হারিয়ে গেলে তাদের ১২৫ টাকা ব্যাংকে জমা দিতে হবে। কিন্তু গাজীপুর সদর উপজেলার ভাওয়াল মির্জাপুর বিশ্ব বিদ্যালয় কলেজ মাঠে স্মার্ট কার্ড বিতরণে দেখা গেল ভিন্ন চিত্র।

সেখানে ওই স্মার্ট কার্ড বিতরণে টিম লিডার নানা অজুহাত দেখিয়ে পরিচয় পত্র হারিয়ে যাওয়া প্রতি ব্যক্তির কাছ থেকে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা করে আদায় করছেন এবং নতুন ভোটার যারা এখনও পরিচয়পত্র পায়নি তাদের স্লিপ হারিয়ে যাওয়ায় তাদের কাছ থেকে ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা পর্যন্ত হাতিয়ে নেয়া হচ্ছে।

চালান ফরমের টাকা জমা দেয়ার কথা থাকলেও তারা কেন টিম লিডারকে টাকা জমা দিচ্ছেন এবং টাকা জমার কোন রশিদ দিচ্ছেন কি না তা জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কাইঞ্জানুল গ্রামের কয়েকজন ভুক্তভোগী বলেন, আমাদের পরিচয়পত্র হারিয়ে গেছে। পরিচয়পত্র ছাড়া স্মার্ট কার্ড দিচ্ছে না।

স্মার্ট কার্ড বিতরণের টিম লিডার আল মাহমুদুল হাসান অতিরিক্ত টাকা গ্রহণের কথা অস্বীকার করে বলেন, ব্যাংকে টাকা জমা দানের ভোগান্তি কমানোর জন্য সদর উপজেলা নির্বাচন অফিসার আছলাম স্যারের অনুমতি সাপেক্ষে টাকা গ্রহণ করা হচ্ছে। এসব টাকা একসঙ্গে ব্যাংকে জমা দেয়া হবে।

মির্জাপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য আইনাল হক অতিরিক্ত টাকা নেয়ার বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, অনেক বয়স্ক মানুষ আছে যারা পরিচয়পত্র হারিয়ে ফেলেছেন তাদের এবং অনেক দূর থেকে আসা সাধারণ মানুষের যাতে কষ্ট করে ব্যাংকে টাকা জমা দিতে গিয়ে হয়রানির স্বীকার না হতে হয় সেদিক বিবেচনা করে এখানে টাকা নেয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। পরে সবার টাকা একসাথে ব্যাংকে জমা দিয়ে দেওয়া হবে।

তবে ভাওয়াল মির্জাপুর বিশ্ব বিদ্যালয় কলেজ মাঠে স্মার্ট কার্ড বিতরণে টাকা লেনদেনের বিষয়ে জানতে চাইলে গাজীপুর সদর উপজেলা নির্বাচন অফিসার আসলাম বলেন, ভেন্যুতে নগদ টাকা নেয়ার কোন প্রশ্নই আসে না। টাকা লেনদেনের জন্য ব্যাংক আছে। কেউ যদি টাকা নিয়ে থাকে বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হবে। অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

নতুনসময়/আইএ