জুলাই আগেষ্টর ঘটনাকে পুঁজি করে মামলা বাণিজ্য গেন্ডারিয়ার ওসির

রাজধানীর পূরাণ ঢাকার গেন্ডারিয়া থানার ওসি আবু শাহেদ খানের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ পাওয়া গেছে। জুলাই আগষ্টের ঘটনাকে পুঁজি করে স্থানীয় বড় ব্যবসায়ীদের নামে মামলা দেয়া, মামলার ভয় ও মামলা থেকে নাম বাদ দেয়ার জন্য টাকা আদায় এমনকি জেলখানায় থাকা অবস্থায় ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা দেখিয়ে মামলা দায়ের করা।
ভুক্তভোগীরা বলছেন, ওসি জনগনের সেবক না হয়ে দানব হয়ে উঠছেন। এলাকার বিশিষ্ট ব্যক্তি, ব্যবসায়ীদের আওয়ামী লীগ ট্যাগ লাগিয়ে তাদের হয়রানী করে চলেছেন। তার ভয়ে রাজনীতি না করা অনেক ব্যবসায়ী এলাকা ছাড়া হয়ে আছেন। শুধুমাত্র তাকে চাঁদা না দেয়ার কারণে তাদের এলাকা ছাড়তে হয়েছে। আবার কেউ কেউ আওয়ামী লীগ পদপদবী ধারী হয়েও ওসিকে টাকা দিয়ে দিব্যি এলাকায় আছেন। এমনকি তাদের নামে মামলা হলেও বিপুল অঙ্কের টাকা দিয়ে নাম কাটিয়ে নিয়েছেন। এমন অবস্থায় তাকে অপসারণ জরুরী হয়ে পড়েছে।
ওসির এমন অনৈতিক কর্মকান্ড নিয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা, পুলিশের আইজিপি এবং ডিএমপি কমিশনার বরাবর লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন ভুক্তভোগীরা।
তবে ওসি আবু সাহেদ খান তার বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
তিনি বলেন, একটি গোষ্ঠী তার বিরুদ্ধে অপপ্রচারে লিপ্ত রয়েছে। আইনের পরিপন্থি কোন কাজে তিনি জড়িত নন।
পুলিশ সদরদপ্তর ও ডিএমপি কমিশনারের নিকট লিখিত অভিযোগ দায়ের করা ব্যবসায়ী সিদ্দিকুর রহমান লস্কর জানান, তিনি চকবাজারে পাইকারী রেকসিন ও প্লাষ্টিকের বিভিন্ন পণ্যের ব্যবসা করেন। তার বাসা গেন্ডারিয়া এলাকাতে। বিগত বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময় গেন্ডারিয়া এলাকা কোন হত্যাকান্ড কিংবা অন্য কোন ঘটনাই ছিলনা। কিন্তু ওসি আবু সাহেদ খান যোগদানের পরপরই থানার এক এসআই ও কিছু সোর্স লাগিয়ে মামলার ভয় দেখিয়ে ব্যবসায়ীদের নিকট চাঁদা আদায় শুরু করেন। যারা চাঁদা দেননি তাদেরকে বিভিন্ন মিথ্য মামলা দায়ের করেছেন।
তিনি অভিযোগ করেন, গেন্ডারিয়া এলাকায় গত ৪ আগষ্ট মারামারি সংঘঠিত না হলেও তিনি তার এক সোর্স দ্বারা ৫৯ জনের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা দায়ের করান। ওই মামলাতে আমাকে আসামি করা হয়। ওই দিন আমি গেন্ডারিয়াতেই ছিলাম না। কিন্তু আমাকে আসামি করা হয়েছে।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, ওসি ও মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা আবু শাহেদ বিপুল পরিমাণ অর্থের বিনিময়ে তিনজন আসামীকে চূড়ান্ত প্রতিবেদন হতে অব্যাহতি দেন । এরা হলেন, দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের প্যানেল মেয়র শহিদুল্লাহ মিনু এর ছেলে রাজিব, আওয়ামী লীগ নেতা মাহবুবুর রহমান মিশু। যিনি গেন্ডারিয়া থানার আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী ছিলেন।
সিদ্দিকুর রহমান বলেন, ওসিকে যারাই টাকা দেননি তারাই এলাকা ছাড়া। অথচ তারা এলাকার ভালো ব্যবসায়ী। তাদের রাজনৈতিক কোন সংশ্লিষ্টতা নাই।
ভুক্তভোগী রনি বলেন, আমাকে মিথ্যা মামলায় গ্রেফতার করে । এরপর আমি জেলখানায় থাকা অবস্থায় অন্য ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা দেখিয়ে জামিনে বের হওয়ার পর আবারও গ্রেফতার করে।
তিনি বলেন, গত বছরের অক্টোবরের ২২ তারিখ থেকে চলতি বছরের জানুয়ারির ৯ তারিখ পর্যন্ত আমি জেলখানায় ছিলাম। অথচ ৩০ অক্টোবরের একটি ঘটনা দেখিয়ে ১ ডিসেম্বর আমার বিরুদ্ধে পৃথক মামলা করে।
আমার প্রশ্ন আমি জেলখানা থাকা অবস্থায় আমি কি করে মারামারির ঘটনার সঙ্গে জিড়ত হলাম ?
তিনি অভিযোগ করেন, ওসির চাহিদামত টাকা দিতে না পারার কারণে আমাকে মামলায় জড়ানো হয়েছে।
এদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছিুক স্থানীয় একাধিক ব্যক্তি ওসির বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ করেন।
তাদের দাবি জুলাই আগষ্টের ঘটনাকে পূঁজি করে ওসি আবু শাহেদ খান এলাকায় কোটি কোটি টাকার বাণিজ্য করেছেন। নানা ধরনের সোর্স লাগিয়ে এলাকার যারা ভালো ব্যবসায়ী কিংবা প্রবাসী বা প্রবাস থেকে সদ্য এসেছেন তাদের বিরুদ্ধে মামলার ভয় দেখিয়ে টাকা আদায় করছেন। তাদের ভয়ে বহু ব্যবসায়ী এলাকা ছাড়া হয়ে আছেন বলে তারা জানান।
তারা বলছেন, বর্তমান সময়ে ওসি জনগণের সেবক হবে। কিন্তু ওসি আবু শাহেদ খান দানব হয়ে উঠছেন। দ্রুত তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিলে এলাকাবাসী তার বিরুদ্ধে ফুঁসে উঠবে। ঘটতে পারে যে কোন ধরনের অঘটন।