ঢাকা শনিবার, ২০শে এপ্রিল ২০২৪, ৭ই বৈশাখ ১৪৩১

রাজশাহীতে গভীর রাতে পুলিশের কান্ড, কমিশনারের নিকট লিখিত অভিযোগ


২৯ মার্চ ২০২০ ০৬:৩১

প্রতিকি

২২ মার্চ রাত ৩ টা। হটাৎ করেই বাড়ির সীমানা প্রাচীর টপকে দরজায় লাথ্থি। গভীর ঘুমে থাকা পরিবারের লোকজন বাসা বাড়িতে ডাকাত পড়েছে ভেবে আতঙ্কিত। পরে পরিচয় জানতে চাইলে তারা পুলিশ পরিচয় দেয়। এতরাতে কেন এসেছেন জানতে চাইলেও অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ। পরে দরজা খুলে দিলে বাসার ভেতরে ঢুকে আসবাবপত্র তছনছ করে কোন কিছু না বলে চলে যায়।

খোঁজ নিয়ে ও ভুক্তভুভোগীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায় রাজশাহী মহানগরীর বোয়ালিয়া থানা পুলিশের কান্ড এটি। নিয়ম অনুযায়ী এক থানার পুলিশ অন্য থানায় গেলে সেই থানার কর্মকর্তাদের অবহিত করতে হয়। কিন্তু সেই নিয়মের কোন তোয়াক্কা না করে বোয়ালিয়া থানার এ এসআই রানাসহ আরও দুই অজ্ঞাত সদস্য এ কান্ড ঘটিয়েছেন। তবে কেন এ কাজ করেছেন এ প্রশ্নের উত্তর ওই এএসআই কিংবা থানার পর্যন্ত দিতে পারেননি। আবার এ বিষয়ে ভুক্তভোগীর পরিবার কমিশনার বরাবর অভিযোগ করার পর পরিবারকে বাড়ি ছাড়া করেছেন তারা।

জানা গেছে, রাজশাহী মহানগরীর রাজপাড়া থানার তেরোখাদিয়া ডাবতলা হার্ডওয়্যাড ব্যবসায়ী মো. বাক্কারের বাসা। গত ২২ মার্চ গভীর রাতে তার বাসায় ঢুকে পুরো বাড়ির আসবাবপত্র তছনছ করেছে ওই চার পুলিশ সদস্য। বিছানার নীচে ছিল মাত্র সাত হাজার টাকা। তাদের যাওয়ার পর তাও আর পাওয়া যায়নি। গভীর রাতে অহেতুক এই হয়রানি ও বাড়ির জিনিসপত্র তছনছের ঘটনায় বোয়ালিয়া থানার দুই এস আইসহ চার পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে মহানগর পুলিশ কমিশনার বরাবর পরদিন ২৩ মার্চ লিখিত অভিযোগ করেন ভুক্তভোগী পরিবারটি।

অভিযোগে মহানগরীর তেরোখাদিয়া এলাকার হার্ডওয়্যার্ড ব্যবসায়ী মো. বাক্কারের ছেলে রুবেল উল্লেখ করেছেন, এ ঘটনায় মহানগরীর বোয়ালিয়া থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মোস্তফা ও এ এসআই রানাসহ আরও দুই পুলিশ সদস্য জড়িত। অপর দুই সদস্য তাদের নাম বলেননি।

অভিযোগে রুবেল বলেন, ২২ মার্চ গভীর রাতে কয়েকজন তাদের বাড়ির প্রটেকশন ওয়াল টপকিয়ে বাসার ভেতরে ঢুকে জোরে জোরে দরজা নক করতে থাকে। এ অবস্থায় তার বাবা উঠে এসে বারান্দায় দাঁড়ালে দেখতে পান হেলমেট পরা চারজন ব্যক্তি বারান্দার গ্রীলের সামনে আছেন। তাদের পরিচয় জানতে চাইলে তারা অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ শুরু করে এবং হুমকি দেয় যে, তাড়াতাড়ি দরজা না খুলে দিলে অবৈধ মালামাল দিয়ে কোর্টে চালান করে দেবে।

তাদের কথপোকথনের এক পর্যায়ে বাড়ির সবার ঘুম ভেঙ্গে যায়। এ সময় আমার তিনবোন ও আমার আম্মা উঠে আসে এবং আমার ছোট বোন জিজ্ঞাসা করে আপনারা কে, কোথা থেকে এসেছেন? এই কথা শুনে তারা আরো ক্ষিপ্ত হয়ে গিয়ে আমাদের পরিবারের সকল সদস্যকে অকথ্য ভাষায় কুরুচিপূর্ণ গালিগালাজ করতে থাকেন এবং গেটে লাথি মারতে থাকেন।

পরে আমাদের বাড়ির ভাড়াটিয়ারা উঠে আসালে তারা নিজেদেরকে ডিবি পুলিশ দাবি করে আবার রাজপাড়া থানার পুলিশও দাবি করে এবং অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ দিয়া দরজা খুলতে বলে। ভয় পেয়ে আমার বন্ধুকে ফোন দিলে আমার বন্ধু পুলক সেখানে গিয়ে হাজির হয়।

রুবেল বলেন, তখন আমরা তাকে বলি দেখো এরা কারা এসেছে, এসে গালিগালাজ করছে। আমার বন্ধু গেটের বাহির থেকে তাদেরকে জিজ্ঞাসা করলে ওই তিনজন নিজেদেরকে পুলিশ বলে জানায়, তখন আমার বন্ধু পুলক বলে কোন থানা, তারা বলে বোয়ালিয়া এবং নিজেকে এসআই মোস্তফা, অপরজন নিজেকে এসআই রানা পরিচয় দেয়। অপর দুইজন নাম বলেনি। কী কারণে এসেছেন এই রাত সোয়া ৩টায়? তখন বলে আসামি আছে। কে আসামি? এখানে কোনো আসামি নেই বললে অন্য দুইজন সটকে পড়েন। তখন এসআই মোস্তফা ও এ এসআই রানা বলেন, আসামির নাম বলা যাবে না।

ততক্ষণে আরও ২/৩ জন আমার বাসার ভাড়াটিয়া আসলে আমি সাহস করে দরজা খুলে দিলে তারা আমাদের বাসায় ঢুকে সব কিছু তছনছ করে।

রুবেল অভিযোগে বলেন, কোনো ধরনের কোনো আসামি না থাকার পরও অহেতুক গভীর রাতে বাসায় ঢুকে বোয়ালিয়া থানার চার পুলিশ সদস্য তার বাড়ির সদস্যদের হয়রানি করেছে। আসবাবপত্রও তছনছ করেছে।

এ ঘটনার প্রতিকার চেয়ে এবং দোষী চার পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে মহানগর পুলিশ কমিশনারের কাছে অভিযোগ করেছেন। এখন সেই অভিযোগ তুলে নেওয়ার জন্যও আবার ভয়-ভীতি দেখাচ্ছেন এসআই মোস্তফা। অভিযোগ না তুললে মিথ্যা মামলা দিয়ে ফাঁসানো হবে এমন হুমকি দেওয়া হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন ভুক্তভোগী রুবেল। বর্তমানে তাদের হুমকিতে বাড়ি হয়ে আছেন বলেও জানান তিনি।

এ বিষয়ে রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের বোয়ালিয়া জোনের উপ-পুলিশ কমিশনার সাজিদ হোসেন বলেন,বিষয়টি আমার জানা নাই। লিখিত অভিযোগটি যদি পুলিশ কমিশনার স্যারের দপ্তর থেকে তদন্তের জন্য আমার কাছে আসে তাহলে আমি তদন্ত করে দেখব কেন তারা এক থানার পুলিশ হয়ে অন্য থানা এলাকার বাড়িতে গিয়েছিল? সে বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হবে। তদন্ত পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

এদিকে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে বোয়ালিয়া থানার কর্তকর্তা ও এএসআই রানা কোন মন্তব্য করেননি।