ঢাকা শনিবার, ২৭শে এপ্রিল ২০২৪, ১৪ই বৈশাখ ১৪৩১

পুলিশ হেফাজতে জনি হত্যা, ৩ পুলিশ কর্মকর্তার সর্বোচ্চ শাস্তি চান স্বজনরা


১৩ মার্চ ২০২০ ০০:২৬

ফাইল ছবি

পুলিশ হেফাজতে জনি নামের এক যুবককে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগে করা মামলায় পল্লবী থানার তৎকালীন এসআই জাহিদুরসহ পাঁচ আসামির বিরুদ্ধে যুক্তিতর্কের শুনানি শেষ হয়েছে। আগামী রবিবার ১৫ মার্চ অন্যান্য চার আসামীর বিরুদ্ধে যুক্তিতর্ক শেষ হওয়ার কথা। যুক্তিতর্ক শেষ হলেই রায়ের দিন ঘোষণা হবে। রায়ে হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের সর্বোচ্চ সাজা আশা করছেন নিহত জনির স্বজনরা।

মামলার বাদী ও জনির ছোট ভাই ইমতিয়াজ হোসেন রকি বলেন, জনি হত্যায় অভিযুক্ত প্রধান আসামি এস আই জাহিদুর রহমান খান, এ এস আই কামরুজ্জামান মিন্টু ও এ এস আই রাশেদুলসহ অন্য আসামিদের যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের আদেশ চাই। আদালতের কাছে এ মামলায় ন্যায়বিচার আশা করছি।

তিনি জানান, ২০১৪ সালে আমার ভাইকে আমার চোখের সামনে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। ৬ বছর পর রায় হতে যাচ্ছে। বিগত ৬ বছরে মামলা তুলে নিতে হুমকি-ধামকি এসেছে। কখনো এস আই জাহিদের মা স্থানীয় মস্তানদের ভাড়া করে নিয়ে আসে আবার কখনো জামিনে থাকা দুই পুলিশ সদস্য হুমকি দিতেন। আমার মামলার সাক্ষিদেরও প্রভাবিত করার চেষ্টা করা হয়েছে। আমি গরীব হলেও সব ধরনের বাধাবিপত্তি অতিক্রম করে আমার বড় ভাইয়ের হত্যার বিচারের জন্য আইনি লড়াই করে যাচ্ছি।

জনির মা খুরশিদা বেগম বলেন, আমার বড় ছেলে আমাদের একমাত্র উপার্জনকারী ছিল। সে মারা যাওয়ার পর থেকে খুব কষ্ট করতে হয়েছে। জনির দুই সনানের ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে আমার ছোট ছেলে রকি তার ভাবিকে বিয়ে করেছে। হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির পাশাপাশি ক্ষতিপূরণও দাবি করেন জনির মা।

রাজধানীর পল্লবী থানা হেফাজতে ইশতিয়াক হোসেন জনি নামের এক যুবককে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগে পুলিশের এসআই জাহিদ হোসেনসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে করা মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণ গতকাল মঙ্গলবার শেষ হয়েছে।

বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড আ্যন্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট) জনির পরাবের পক্ষে মামলা পরিচালনা করছে।

ব্লাস্টের নিয়াগকৃত আইনজীবী এডভোকেট আবু তালেব জানান, ঢাকা মহানগর দায়রা জজ কে এম ইমরুল কায়েশ মোট ২২ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য নিয়ে সাক্ষ্যগ্রহণ সমাপ্ত ঘোষণা করেন। এ মামলার প্রধান আসামি এস আই জাহিদের বিরিদ্ধে যুক্তিতর্ক শেষ হয়েছে। অন্যান্য আসামিদের বিরদ্ধে যুক্তিতর্ক চলছে। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে আগামী রোববার যুক্তিতর্ক শেষ হবে। সম্ভবত ওইদিনেই রায়ের দিন ধার্য করতে পারেন আদালত।

তিনি আরো জানান, এ মামলার দুই আসামি এ এস আই কাররুজ্জামান মিন্টু ও পুলিশের সোর্স রাসেল যুক্তিতর্ক শুরু হওয়ার পর থেকেই পালাতক রয়েছেন। তাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানাও জারি করেছেন আদালত।

মামলার অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, ২০১৪ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি মিরপুর ১১ নম্বর সেক্টরে স্থানীয় সাদেকের ছেলের গায়েহলুদ অনুষ্ঠানে পুলিশের সোর্স সুমন মেয়েদের সঙ্গে অশালীন আচরণ করেন। জনি ও তাঁর ভাই বিষয়টি দেখে সুমনকে সেখান চলে যেতে বলেন।

সুমন চলে গেলেও পরদিন আবার এসে আগের মতোই আচরণ করেন। তখন জনি ও তাঁর ভাই সুমনকে চলে যেতে বললে সুমন পুলিশকে ফোন করেন। পুলিশ এসে জনিকে ধরে নিয়ে যায়। থানায় জনিকে নির্যাতন করা হয়।

একপর্যায়ে জনির অবস্থা খারাপ হলে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে অবস্থা আরো খারাপ হওয়ায় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।

এই ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলায় আদালত ২০১৬ সালের ১৭ এপ্রিল পাঁচ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন। এসআই জাহিদ মিরপুর থানায় ব্যবসায়ী মাহবুবুর রহমান সুজন হত্যা মামলারও আসামি।