ঢাকা শনিবার, ২০শে এপ্রিল ২০২৪, ৭ই বৈশাখ ১৪৩১

রিফাত হত্যার চার্জশিট মনগড়া উপন্যাস: মিন্নির আইনজীবী


২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০১:৩৫

বরগুনায় আলোচিত রিফাত শরীফ হত্যা মামলায় গ্রেফতার হওয়া প্রধান সাক্ষী ও তার স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নি সুপ্রিমকোর্ট বারে তার আইনজীবীর চেম্বারে সাক্ষাৎ করতে এসেছেন।

রোববার সুপ্রিমকোর্ট বারে আইনজীবী জেডআই খান পান্নার চেম্বারে সাক্ষাৎ করেন তিনি। এ সময় তার বাবা মোজাম্মেল হোসেন কিশোরও উপস্থিত ছিলেন।

এ সময় সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন আইনজীবী জেডআই খান পান্না।

তিনি বলেন, ‘ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শের বিষয় আছে। আইনজীবীর সঙ্গে পরামর্শের বিষয় আছে। চার্জশিটের কথা তো আগাগোড়াই বলেছি- এটি একটি মনগড়া উপন্যাস। মূলত মূল আসামিদের এ মামলা থেকে অব্যাহতি দেয়ার জন্য এ ধরনের কারবার করা হয়েছে। নাথিং নিউ। জজ মিয়া ও জাহালমের আরেকটি সংস্করণ।’

আদালতে মিন্নির দেয়া জবানবন্দি প্রকাশের বিষয়ে সুপ্রিমকোর্টের এ আইনজীবী বলেন, ‘দেখেছি। আমি তো কোর্টে বসেই দেখেছি। আপিল বিভাগের চেম্বার আদালত যখন আমাদের দেখাতে দিতে বলেছিল, তখন এক নজর দেখেছি। সেটিও (১৬৪ ধারার জবানবন্দি) একটি উপন্যাস। সুপ্রিমকোর্ট বারের সভাপতি কোর্টকে বলেছেন- এত সুন্দর করে লেখা, যা চিন্তার বাইরে। সুস্থ মাথায় এত সুন্দরভাবে লেখতে পারে না।’

এটি প্রত্যাহারের আবেদন করেছেন? জবাবে জেডআই খান পান্না বলেন, ‘আগেই করা হয়েছে। মিন্নি নিজে জেলখানা থেকে করেছে।’

আরেক প্রশ্নের জবাবে এই আইনজীবী বলেন, ‘এটি তো পুলিশের কাছে ছিল। সেখানটা বাদে তো আর আসতে পারে না। ইতিপূর্বে আমরা দেখেছি এটি গণমাধ্যমে এসেছে। কোর্টের কাছে দেয়ার আগে এটি প্রকাশিত হয়েছে।’

এটি ঠিক হয়েছে? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এটি ঠিক হয়নি। এটি আদালত অবমাননা।’

গত ২৯ আগস্ট বরগুনার চাঞ্চল্যকর এ হত্যা মামলায় গ্রেফতার হওয়া প্রধান সাক্ষী ও তার স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নিকে দুই শর্তে জামিন দেন হাইকোর্ট।

যে দুই শর্তে মিন্নিকে আদালত জামিন দিয়েছেন সেগুলো হচ্ছে- ১. জামিনে থাকাবস্থায় মিন্নি তার বাবা মোজাম্মেল হোসেন কিশোরের জিম্মায় থাকবেন; ২. জামিনে থাকাবস্থায় তিনি গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে পারবেন না। এই দুই শর্তের ব্যত্যয় ঘটলে মিন্নির জামিন বাতিল হবে বলে রায়ে উল্লেখ করেন আদালত।

গত ২৬ জুন রিফাতকে বরগুনার রাস্তায় প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। এর ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে সারা দেশে আলোচনার সৃষ্টি হয়। পর দিন রিফাত শরীফের বাবা আবদুল হালিম দুলাল শরীফ ১২ জনকে আসামি করে একটি মামলা করেন, তাতে প্রধান সাক্ষী করা হয়েছিল মিন্নিকে। পরে মিন্নির শ্বশুর তার ছেলেকে হত্যায় পুত্রবধূর জড়িত থাকার অভিযোগ তুলে সংবাদ সম্মেলন করলে ঘটনা নতুন দিকে মোড় নেয়।

গত ১৬ জুলাই মিন্নিকে বরগুনার পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে ডেকে নিয়ে দিনভর জিজ্ঞাসাবাদের পর এ মামলায় তাকে গ্রেফতার দেখানো হয়।

পর দিন আদালতে হাজির করা হলে বিচারক তাকে পাঁচদিনের রিমান্ডে পাঠান। রিমান্ডের তৃতীয় দিন শেষে মিন্নিকে আদালতে হাজির করা হলে সেখানে তিনি স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন বলে পুলিশ জানায়।

তার আগের দিনই পুলিশ সুপার মো. মারুফ হোসেন এক প্রেস ব্রিফিংয়ে বলেন, ‘মিন্নি হত্যাকারীদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা এবং হত্যা পরিকল্পনাকারীদের সঙ্গে বৈঠক করেন। মিন্নিকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে হত্যা পরিকল্পনার সঙ্গে মিন্নির যুক্ত থাকার প্রমাণ পেয়েছে পুলিশ।’

মিন্নি পরে জবানবন্দি প্রত্যাহারের আবেদন করেন জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম আদালতে। মিন্নির বাবা অভিযোগ করে আসছেন, ‘নির্যাতন করে ও ভয়ভীতি দেখিয়ে’ মিন্নিকে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিতে বাধ্য করেছে পুলিশ। এর পেছনে স্থানীয় প্রভাবশালী রাজনীতিবিদদের হাত আছে বলেও তার দাবি।

বরগুনার জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম আদালত এবং জেলা ও দায়রা জজ আদালতে মিন্নির জামিন আবেদন নাকচ হয়ে যাওয়ার পর গত ৫ আগস্ট হাইকোর্টে জামিন আবেদন করেন তার আইনজীবীরা।

নতুনসময়/আইকে