ঢাকা শনিবার, ২০শে এপ্রিল ২০২৪, ৮ই বৈশাখ ১৪৩১


লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়েছে আমনের আবাদ


১ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০১:০১

সকল হতাশা পেরিয়ে জলবায়ু পরিবর্তনে বিরুপ প্রভাবের মধ্যদিয়েই এরইমধ্যে রাজশাহীতে আমন আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়েছে।

এখনো চলছে আমনের চারা রোপন। সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি পর্যন্ত চলবে চারা রোপনের কাজ। ঈদের দিন থেকে প্রত্যাশিত বৃষ্টি হওয়ায় ক্ষেতের যত্নে ব্যস্ত সময় পার করছেন চাষি ও কৃষি শ্রমিকরা। কয়েকদিনের বৃষ্টি আমন চাষিদের জন্য আর্শিবাদ বয়ে এনেছে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে জানা গেছে, এরই মধ্যে লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়েছে আমনের আবাদ। এ পর্যন্ত জেলায় আমন চারা রোপন হয়েছে ৭৩ হাজার ২১৯ হেক্টর। এখনও মাঠে মাঠে চলছে চারা রোপনের কাজ। চলতি মৌসুমে রাজশাহী জেলায় আমনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৭১ হাজার ৩৩৭ হেক্টর জমিতে। কৃষি সংশ্লিষ্টরা বলছেন এবারে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে প্রায় ২৫-৩০ হাজার বিঘা (সাড়ে তিন হাজার হেক্টর) বেশী জমিতে আমনের আবাদ হবে। এর জন্য জেলায় এবার বীজতলা হয়েছে ৩ হাজার ৬৬৭ হেক্টর জমিতে।

তবে বীজতলার পরিমাণও বেড়েছে বলে জানায় রাজশাহী কৃষি অফিস।

মৌসুমের শুরু থেকে বৃষ্টি নিয়ে চরম বিড়ম্বনায় পড়ে চাষিরা। আষাঢ় পেরিয়ে শ্রাবণের প্রথমেও বৃষ্টি ছিলনা রাজশাহীতে। প্রলম্বিত খরায় পুড়েছে রাজশাহীর আমনের মাঠ। চাষিরা পুকুর বা খালের পানি ও গভীর নলকুপের পানি সেচ দিয়ে চারা রোপন করেছেন। হতাশা ও দুশ্চিন্তা মাথায় নিয়ে চাষিরা জীবিকা ও মাটির টানে বসে না থেকে আমন চারা রোপন করেছেন।

চাষিরাও জলবায়ুর পরিবর্তনে খাপখাইয়ে নিয়ে এগিয়ে চলছেন ফসল উৎপাদনে। এবারো কষ্ট করে হলেও কৃত্রিম সেচ দিয়েই আমন চারা রোপন করেছেন তারা।

ভারি বৃষ্টি না হলে পানি সংকটে আমন ক্ষেত হুমকির মুখে পড়বে বলে জানিয়েছিলেন কৃষি সংশ্লিষ্টরা। ফলে আবাদের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ না হওয়ার আশংকা দেখা দিয়েছিল।

কয়েকদিনের বৃষ্টিতেই সকল হিসাব-নিকাশ পিছনে ফেলে শংকা কাটিয়ে প্রত্যাশার আলো দেখা দিয়েছে। ফলে একদিকে লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়েছে আবাদের এবং অন্যদিকে আবাদের যত্নে ব্যস্ত সময় পার করছেন চাষিরা।

আষাঢ় ও শ্রাবণ মাস নিয়ে বর্ষাকাল। এ কালের প্রথম থেকেই আকাশে ঘন কালো মেঘের ঘনঘটা ও সাথে সাথে বৃষ্টিপাত যেন চিরায়ত। আবার বৃষ্টির ধরন কখনো গুড়িগুড়ি, কখনো ভারি ও মুষলধারে। তবে কালের বিবর্তনে ও জলবায়ু পরিবর্তনে আমাদের ঋতুগুলো পিছিয়ে যাচ্ছে। এদিক থেকে ভাদ্র মাসেও বর্ষার স্বরুপ দেখা দিয়েছে। এদেশে আমনচাষ হচ্ছে বৃষ্টি নির্ভর। আষাঢ়ের প্রথম থেকেই কৃষকগণ কোমর বেঁধে নেমে পড়েন আমন রোপনে। কিন্তু চলতি বর্ষাকালে রাজশাহী জেলায় কোথাও বৃষ্টিপাত হয়নি। তারপরেও জেলার বিভিন্ন উপজেলায় অনেক জমিতে চাষিরা আমন ধানের চারা রোপন করেছেন।

কিছু দিন আগেও বৃষ্টির অভাবে জেলার বিভিন্ন এলাকার আমন ক্ষেত বিবর্ণ হতে শুরু করেছিল। ফেটে গিয়েছিল রোপনকৃত ধানের ক্ষেত।

তবে ঈদের দিন থেকে এখন পর্যন্ত থেমে থেমে হলেও বৃষ্টিপাত অব্যাহত রয়েছে। চাষিরাও আমন ক্ষেতের যত্নে মেতে উঠেছেন।

আবহাওয়া অফিস থেকে জানা গেছে, ঈদের দিন থেকে ২৬ আগস্ট পর্যন্ত ৩০ দশমিক ২ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে রাজশাহীতে। আর এই বৃষ্টিই আমন ক্ষেতের টনিকের কাজ করেছে।

জেলার পবা ও মোহনপুর উপজেলায় বিভিন্ন মাঠে সরোজমিন দেখা যায়, চাষিরা আমনের যত্নে কাজ করছেন। মাঠে মাঠে কোনো ক্ষেতে কীটনাশক প্রয়োগ করছে, কোনো ক্ষেতে আগাছা দমন, আবার কোনো কোনো ক্ষেতে রাসায়নিক সার প্রয়োগ করছেন তারা। এছাড়াও কিছু জমিতে খুশবো ধানের চারা রোপন করতে দেখা গেছে।

পবার মদনহাটি গ্রামের আমিন উদ্দিন বলেন, মাসখানেক আগের বৃষ্টিতে এ বিলের বেশীরভাগ জমিতে আমন চারা রোপন করে চাষিরা। মাঝখানে মাটি শুকিয়ে গেলে একবার গভীর নলকুপের পানিতে সেচ দেয়া হয়। বৃষ্টির জন্য হতাশায় ছিলাম। ঈদের দিন থেকে বৃষ্টি হওয়ায় জমিতে প্রাণ ফিরেছে।

একই কথা জানান তেঘর গ্রামের আফাজ উদ্দিন সরকার। তিনি বলেন, সার দিয়ে জমির মাটি ঘেটে দিয়েছি। গত কয়েকদিনের বৃষ্টি আমন চাষিদের জন্য আর্শিবাদ বয়ে এনেছে।

কৃষি শ্রমিক আব্দুল মালেক ও তারেক সরকার বলেন, আমরা আট জনে ১০ বিঘা জমি চুক্তিতে নিয়েছি। নিড়ানি ও মাটি ঘাটার (মাটি আলগা করা) পরে আমাদের ভালই টাকা পাবো। পর্যাপ্ত বৃষ্টি হয়েছে। জমিতে আটকা রয়েছে যথেষ্ট পানি। যার ফলে আগাছা দমন ও মাটি আলগা করতে বেশ স্বাচ্ছন্দ্য পাচ্ছি আমরা।

সেখানকার আরেক কৃষক রিপন বলেন, আমন মৌসুমে ধানের আবাদে বেশী খরচ হয় না। তাই বর্তমান বাজার থাকলেও চাষিরা লাভবান হবে।

তিনি বলেন, আমনে বিঘা প্রতি প্রায় ২ হাজার থেকে আড়াই টাকা খরচ হবে। আর বিঘা প্রতি ধান উৎপাদন হবে অন্তত ১২ মণ। বিক্রি করে বিঘা প্রতি পাঁচ থেকে সাত হাজার টাকার মত লাভ হবে।

তিনি আরো বলেন, আমনে সেচ (পানি) লাগে না, সার ও কীটনাশক খরচও কম।

রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক দেব দুলাল ঢালী জানান, ভাদ্র মাস পযর্ন্ত কৃষকেরা আমন রোপণ করবে। জলবায়ু পরিবর্তনে চাষের সময়ের হেরফের হচ্ছে। এরইমধ্যে জেলায় আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়েছে।

আবাদ ভাল হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।

একেএ