ঢাকা বৃহঃস্পতিবার, ২৪শে এপ্রিল ২০২৫, ১২ই বৈশাখ ১৪৩২


পুলিশের বিরুদ্ধে মামলা: ৫ বছরেও বিচার পায়নি জনির পরিবার


৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০৩:৩৬

ছবি নতুন-সময়

২০১৪ সালে পল্লবীর থানা হেফাজতে নিয়ে জনিকে নির্যাতন করে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় বিচার চেয়ে আদালতে করেন নিহত জনির ছোট ভাই ইমতিয়াজ হোসেন রকি। মামলা দায়ের করার ৫ বছর পেরিয়ে গেলেও বিচার পায়নি নিহত জনির পরিবার। উল্টো জামিনে মুক্তি পেয়ে পুলিশের দুই এএসআই জনির পরিবারকে হুমকিধামকি দিয়ে যাচ্ছে ।

২০১৪ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর পল্লবীর ইরানী ক্যাম্পে এক গায়ে হলুদের অনুষ্ঠানে পুলিশের সোর্স সুমন মেয়েদের উত্যক্ত করতে থাকে। এ সময় জনি ও তার ভাই রকি সুমনকে তাড়িয়ে দেন। কিছুক্ষণ পরে আবারো সুমন ফিরে আসে এবং অনুষ্ঠানে থাকা মেয়েদের সাথে ধাক্কাধাক্কি শুরু করে। আবারো জনি ও রকি তাকে বাধা দিলে সে এসআই জাহিদকে ফোন করে আসতে বলে।

এস আই জাহিদুর রহমান খান, এ এস আই রাশেদুল ও এএসআই কামরুজ্জামান মিন্টুসহ পুলিশের টিম আসে ঘটনাস্থলে। কোনো কিছু বুঝে উঠবার আগেই এসআই জাহিদের নেতৃত্বে আসা পুলিশ ও সোর্স সুমন রাসেল অনুষ্ঠানে তান্ডব শুরু করে। উপস্থিত নারী ও শিশুসহ সকলকে বেধড়ক মারধর করে গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান পন্ড করে দেয়।

অনুষ্ঠান থেকে জনি রকিসহ মোট ৮ জন যুবককে আটক করে। তাদের পুলিশের গাড়িতে তোলার আগে এলাকাবাসী প্রতিবাদ করার চেষ্টা করলে কয়েক রাউন্ড ফাঁকা গুলিও ছুড়ে এসআই জাহিদ।

থানায় নিয়ে জনিকে পিলারের সাথে বেধে পিটাতে থাকে এসআই জাহিদসহ অভিযুক্ত পুলিশ সদস্যরা। তার ভাই রকি জনিকে পেটাতে নিষেধ করলে তাকেও নির্যাতন করা হয়। জনির অবস্থা খারাপ হলে তাঁকে মিরপুর আধুনিক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অবস্থা আরো খারাপ হলে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজে নিয়ে যায় পুলিশ। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।

এ ঘটনায় জনি মারা যাওয়ার পর তার মা খুরশিদা বেগম পল্লবী থানায় মামলা করতে গেলে তা গ্রহণ করা হয়নি। পরে সুস্থ হয়ে হাসপাতাল থেকে ফিরে ২০১৪ সালের ৭ আগস্ট মহানগর দায়রা জজ আদালতে পুলিশ হেফাজতে মৃত্যু (নিবারন) আইনে মামলা দায়ের করেন জনির ছোট ভাই ইমতিয়াজ হোসেন রকি। এ মামলায় প্রাথমিকভাবে পল্লবী থানার ওসি জিয়াউজ্জামান, এসআই জাহিদ, এএসআই রাশেদুল, এ এসআই কামরুজ্জামান মিন্টু, এসআই বাতেন,পুলিশ কন্সটেবল নজরুল, পুলিশের সোর্স রাসেল ও সুমনকে আসামী করা হয়।

পরে ২০১৫ সালে বিচার বিভাগীয় তদন্ত শেষে এস আই জাহিদুর রহমান খান, এ এস আই রাশেদুল ও এএসআই কামরুজ্জামান মিন্টু, পুলিশের সোর্স সুমন ও রাসেলকে মামলায় আসামী হিসেবে রেখে বাকিদের অব্যাহতি দেয়া হয়।

মামলার বাদী ও জনির ছোটভাই রকি অভিযোগ করে বলেন, মামলা দায়ের করার পর যতদিন সকল আসামী কারাগারে ছিলেন ততোদিন আমার ও আমার পরিবারের কোনো সমস্যা হয়নি। উচ্চ আদালত থেকে জামিন নেওয়ার পর থেকে এএসআই রাশেদুল ও এএসআই কামরুজ্জামান মিন্টু আমাকে হুমকিধামকি দেয়া শুরু করে। মামলা তুলে নিতে বলে। তাদের হুমকিতে আমি ভয় না পেলে বাসায় এসে আমার পরিবারকে হুমকি দেয়। এ বিষয়ে আমি থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছি। এসআই জাহিদের মাও আমাদের বাড়ীতে আসছিল। সে আমাদের টাকার লোভ দেখিয়ে মামলা তুলে নিতে বলে। আমাদের টাকার লোভ থাকলে তো আর আমরা মামলা করতাম না। আমি চাই আমার ভাইয়ের হত্যার বিচার।


রকি বলেন, আমাদের টাকা পয়সা নেই। আমরা ভালো আইনজীবী নিয়োগ করতে পারিনা বলে আমার ভাইকে হত্যার ৫ বছর পরেও বিচার শেষ হয়নি। মামলাটির কার্যক্রম হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ স্থগিত করেছেন। আমরা হাইকোর্টে মামলা চালানোর জন্য অনেক টাকাপয়সা লাগে। আময়াদের কাছে তো তা নেই। তাই একটি মানবাধিকার সংগঠন ব্লাস্টের সহযোগিতা চেয়েছিলাম। কিন্তু তারাও বিষয়টি গুরুত্বসহকারে দেখছে না।