ঢাকা বুধবার, ২৩শে এপ্রিল ২০২৫, ১১ই বৈশাখ ১৪৩২


আগে মরেছে নেতারা, এখন মরছে সমর্থকেরা


১৭ নভেম্বর ২০১৮ ২২:৩৫

ফাইল ফটো

‘টেঁটা-বল্লমের রাজধানী’ হিসেবে পরিচিত নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলার দুর্গম চরাঞ্চল বাঁশগাড়ী ইউনিউয়ন। এই ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগের সভাপতি হাফিজুর রহমান শাহেদ সরকার। একই ইউনিয়নের মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার ও সাবেক চেয়ারম্যান সিরাজুল হক। সিরাজুল হক ৩০ বছর ধরে এই ইউনিয়নের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেছেন। গত কয়েক বছর ধরেই এই দুই নেতার মধ্যে আধিপত্য নিয়ে দ্বন্দ্ব চলে আসছে।

কয়েক মাস আগেই এই দুই নেতা পৃথিবী থেকে বিদায় নেন। তাদের একজন মারা গেছেন অসুখে। আরেকজন খুন হন আততায়ীর গুলিতে। চলতি বছর হঠাৎ অসুস্থ হয়ে মারা যান শাহেদ সরকার। আর গত ৩ মে আততায়ীর গুলিতে নিহত হন ইউপি চেয়ারম্যান সিরাজুল হক। এ দুই নেতার মৃত্যুর পর স্থানীয়দের ধারণা ছিল, এবার বোধ হয় এলাকায় শান্তি ফিরবে। কিন্তু তাদের রেখে যাওয়া দ্বন্দ্ব যে এত র্দূগন্ধ ছড়াবে তা বুঝতে পারেননি। সিরাজুল হকের খুনের ঘটনাকে কেন্দ্র করে হামলার পর এলাকা ছাড়া করা হয় শাহেদ সরকারের সমর্থকদের। মারা যাওয়া এই দুই নেতার ক্ষমতার দ্বন্দ্ব, আধিপত্যের লড়াইয়ে গত দেড় বছরে নিহত ও গুমের শিকার হয়েছে অন্তত ১৪ জন। এই দ্বন্দ্বের সর্বশেষ বলি চার তরুণের জীবন।

তাড়া খেয়ে পালানো শাহেদ সরকার সমর্থকরা কয়েক মাস পর আবার এলাকায় ফিরে আসে। এই খবর পেয়ে সিরাজুল হকের সমর্থকরা শুক্রবার বাঁশগাড়ী ইউনিয়নে শাহেদ সরমর্থকদের ওপর হামলা চালায়। এতে উবয় পক্ষের মধ্যে শুরু হয় সংঘর্ষ। সেই সংঘর্ষে এখন পর্যন্ত চারজন নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে দুইপক্ষের অসংখ্য মানুষ। সকালে ওই সংঘর্ষে তোফায়েল হোসেন (১৮) নামে এক স্কুলছাত্রর মৃত্যু হয়। গুলিতে গুরুতর আহত সুমন মিয়া (২৬) মামুন মিয়া (২৫) ও সুমন মিয়া (২৫) নামের তিনজনকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে সেখানে তাদের মৃত্যু হয়।


ওই দুই নেতার দ্বন্দ্ব ছড়িয়েছে পাশের নীলক্ষা ইউনিয়নেও। এ ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান তাজুল ইসলাম সিরাজুল হকের সমর্থক। আর সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল হক সমর্থন করেন শাহেদ সরকারকে।

স্থানীয়রা জানান, দুই বছর আগে বাঁশগাড়ী ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে ভোটযুদ্ধে নামেনশাহেদ সরকার ও সিরাজুল হক। কিন্তু স্থানীয় সংসদ সদস্য রাজিউদ্দীনের সমর্থনে সিরাজুল হক চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। এরপর থেকেই এই ইউনিয়নে মূলত শুরু হয় অশান্তির। তবে এলাকার সবাই শান্তি চাইলেও একটি গোষ্ঠী এই বিরোধ দিনের পর দিন জিইয়ে রেখেছে। কারণ এর পেছেনে লাখ লাখ টাকার মামলা বাণিজ্য আছে। দুইপক্ষের পকেট থেকে সেই টাকা চলে যায় ওই গোষ্ঠীর পকেটে। কিন্তু মামলা আর শেষ হয় না। এলাকাবাসীর আশঙ্কা, শুক্রবারের ওই সংঘর্ষের ঘটনা এখানেই থেমে থাকবে না। আবার শুরু হবে সংঘর্ষ। আবারো ঝরবে রক্ত হয়তো বছর ধরে।

আরকেএইচ