ঢাকা মঙ্গলবার, ১লা এপ্রিল ২০২৫, ১৯শে চৈত্র ১৪৩১


মৃত ব্যক্তির নামে ভিজিএফ চাউল উত্তোলন :বিএনপি ও হেফাজতকে নিয়ে ভাগবাটোয়ারা


২৪ মার্চ ২০২৫ ১৯:২৩

ছবি: নতুন সময়

ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি: ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর উপজেলার পাহাড়পুর ইউনিয়ন পরিষদে এক মৃত ব্যক্তির নামে ভিজিএফ এর চাউল উত্তোলন করা হয়েছে। মৃত ব্যক্তির নাম কাউছার ডাক্তার। তিনি ভিটিদাউদপুর গ্রামের মৃত নুরুল ইসলামের ছেলে। গত ১৮ মার্চ পাহাড়পুর ইউপিতে ভিজিএফ’র ১০ কেজি চাল বিতরণের সময় মৃত কাউছারের নামে চাল উত্তোলন করা হয়েছে।চাউল উত্তলনকারী ব্যাক্তি বলেন কিভাবে মৃত কাউছার ডাক্তারের নামে চাউল নিচ্ছি সব জানে বিএনপি নেতা আব্দুল হক।


মৃত কাউছার ডাক্তারের স্ত্রীর সাথে কথা বলে জানা যায়, গত ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে মারা যান তার স্বামী। তার স্বামীর নামেও ১০ কেজি চাল সহ ৩ নামে ৩০ কেজি চাল পেয়েছেন বলে জানান মৃত কাউছার ডাক্তারের স্ত্রী। ৩০ কেজি চাল কিভাবে একই পরিবার পেলেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, সব জানে আমার ভাই কবির ভুইয়া। ফোন করে প্রতিবেদককে দেখা করতে বলেন কবির ভুইয়া।


সরেজমিনে, সংবাদকর্মীরা চেয়ারম্যান সেলিনা আক্তারের বক্তব্য নেওয়ার জন্য ইউনিয়ন পরিষদে গেলে উপজেলা ছাত্রদলের সাবেক আহ্বায়ক ও বহিস্কৃত নেতা মোর্শেদ কামাল কে ফোন দিয়ে প্রতিবেদককে সুপারিশ করার জন্য কথা বলান।কিছুক্ষণ পর জেলা ছাত্রদলের সাবেক সহ-সভাপতি আবু বক্কর নাহিদ ও পাহাড়পুর ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল হককে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার জন্য ডেকে নিয়ে আসেন চেয়ারম্যান সেলিনা।অনুসন্ধানে জানা যায়, চেয়ারম্যান সেলিনা আক্তার আওয়ামীলীগের সক্রিয় কর্মী ও স্বৈরাচারের দোসর ছিলেন এবং বিভিন্ন নির্বাচনে নৌকার প্রার্থীর পক্ষে কাজ করেছেন। এছাড়া তার স্বামী মাইনুল মিয়া পাহাড়পুর ইউনিয়ন সেচ্ছাসেবকলীগের সক্রিয় কর্মী ছিলেন এবং বিস্ফোরক মামলার আসামী।

 

যারা ভিজিএফ কার্ড পাওয়ার কথা তাদের দেওয়া হয়নি। চেয়ারম্যান স্বজনপ্রীতি করেছেন বলে চেয়ারম্যানের সামনেই অভিযোগ করেন কিছু হতদরিদ্র নারী ও পুরুষ। তারা জানিয়েছেন স্থানীয় কয়েকজন বিএনপির নেতার নির্দেশনা অনুযায়ী কার্ড বিতরণ করেন তাদের পছন্দের ব্যক্তিদের মাঝে।পরিষদের একাধিক মেম্বারদের বক্তব্য অনুযায়ী প্যানেল চেয়ারম্যান (২) সেলিনা আক্তার প্রতি ওয়ার্ডের জন্য কেউ পেয়েছে ৬৫ টি কার্ড আবার কেউ ৭০ টি ভিজিএফ কার্ড মেম্বারদের বণ্টন করে দেন। প্যানেল চেয়ারম্যান সেলিনা আক্তার সহ মোট ১২ জন ইউপি সদস্যের মাঝে ভিজিএফ কার্ড বিতরণ হয় প্রায় ৮৪০টি। বাকি কার্ড চেয়ারম্যান সেলিনার কাছে রাখেন।

 

সেলিনা আক্তারের কাছে থাকা ৬৫/৭০ টি কার্ড সহ তার কাছে থাকার কথা প্রায় ২৮০ টি ভিজিএফ কার্ড। বাকি কার্ডগুলো কাদেরকে দিয়েছেন জানতে চাইলে কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি চেয়ারম্যান সেলিনা। কয়েকটি ওয়ার্ডের মেম্বার আওয়ামীলীগের দোসর হওয়াতে পলাতক রয়েছেন, যাদের কার্ড তাদের পরিবারের কাছে পৌছে দিয়েছেন বলে জানান সেলিনা। ৫ নং ওয়ার্ডের নির্বাচিত মেম্বার রফিকুল ইসলাম দীর্ঘদিন অসুস্থ ও পলাতক রয়েছেন বলে জানা যায়। রফিকুল মেম্বারের সাথে কার্ডের ব্যাপারে কথা বললে তিনি জানান, তার ছেলের মাধ্যমে ৭০ টি কার্ড হাতে পেয়েছেন। ওই ওয়ার্ডের কয়েকজন হতদরিদ্র জানান তাদের ওয়ার্ডে ১৩ টি ভিজিএফ কার্ড দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন ৫ নং ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি ইউনুস মিয়া।

 

একাধিক গণমাধ্যমে ‘চাল বিতরণে চেয়ারম্যানের অনিয়ম’ নিয়ে সংবাদ প্রকাশিত হলে চেয়ারম্যান সেলিনা আক্তার ক্ষিপ্ত হয়ে লিখিত প্রতিবাদে উল্লেখ করেন, ‘প্রকৃত ঘটনাটি হল আমি আমার পরিষদের ১০৪৫টি ভিজিএফ কার্ডের মধ্যে ১২জন মেম্বারকে ৭০টি করে মোট ৮৪০টি এবং ইউনিয়ন বিএনপি, হেফাজত ইসলাম, ছাত্র সমন্বয়ক ও ৪২ মোজার হতদরিদ্রদের মাঝে বাকী কার্ড বিতরণ করি।’

 

এবিষয়ে প্যানেল চেয়ারম্যান (২) সেলিনা আক্তারের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, গত ১৩ মার্চ উপকারভোগীদের তালিকা করেছি। ১৮ মার্চ ভিজিএফ চাল ভিতরণ করা হয়েছে। হয়তো মাপে উনিশ বিশ হইতে পারে।এরপর ১৮ মার্চ বিকালে নিজের কাছে থাকা প্রায় ৩০০ শত কার্ডের ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি এ ব্যাপারে কথা না বলে ফোনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়।

 

ভিজিএফ চাউল বিতরণে দায়িত্ব প্রাপ্ত ট্যাগ কৃষি অফিসার চাউল বিতরণের সময় উপস্তিত ছিলেন কিনা জানতে চাইলে আশরাফুল ইসলাম বলেন, উপস্থিত ছিলাম বলতে আমি অসুস্থ ছিলাম চাউল বিতরণ উদ্বোধন করে দিয়ে উপজেলায় মিটিং ছিল সেখানে চলে যায়।

 

বিজয়নগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাধনা ত্রিপুরা বলেন, যারা উপকারভোগী তাদের কারও কাছ থেকে অভিযোগ পায়নি। ওখানে আমার ট্যাগ অফিসার, সচিব ছিল, বিএনপির যারা ছিল তাদের সবার সাথেই কথা বলেছি। সাড়ে ৩ টার সময় কার্ডধারী লোকজন না আসায় তারা চলে গিয়েছিল, পরে কার্ডধারী আসলে আবার বিতরণ করা হয়। চাল তো সকাল ৯ টা থেকেই দেয়া শুরু হয়েছে, ভাতাভোগী উপকারভোগীরা যখন আর আসে না তখন তারা চলে আসে। পরে আরেকটা গ্রুপ আসে চাল নিতে।