ঢাকা মঙ্গলবার, ২২শে এপ্রিল ২০২৫, ১০ই বৈশাখ ১৪৩২


ব্রিজ না যেন মরণ ফাঁদ, পাঁচ বছরেও হয়নি সংস্কার


৩ নভেম্বর ২০১৮ ০১:৩৯

বরগুনার বেতাগীতে একটি ব্রিজের বেহাল দশার কারণে ভোগান্তি পোহাচ্ছে শত শত কোমলমতি শিক্ষার্থীসহ এলাকাবাসী। উপজেলার হোসনাবাদ ইউনিয়নের জলিশাবাজার-আমড়াগাছিয়া’র সংযোগস্থানে, হোসনাবাদআদর্শ মাধ্যমিক বিদ্যালয় সংলগ্ন (বেড়ের ধন) নদীর উপর ১৯৯৫ সালে জেলা পরিষদের অর্থায়নে নির্মিত ব্রিজটি দীর্ঘ পাঁচ বছর যাবত জরাজীর্ণ অবস্থায় আছে। ব্রিজের উপর সিমেন্টের তৈরি পাটা ধসে যাওয়ায় এখন মরণ ফাঁদে পরিণত হয়েছে।

হোসনাবাদ ইউনিয়নে বিধ্বস্ত এই ব্রীজটির একদম বিকলাবস্থা সৃষ্টি হয়েছে যা চলাচলের একদম অযোগ্য। সীমাহীন এই দুর্ভোগে পড়েছে তিনটি প্রাথমিক বিদ্যালয়, দুইটি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও একটি কলেজ, একটি মাদরাসার শত শত কোমলমতি শিক্ষার্থীরা। বিকল্প কোনো যাতায়াত পথ না থাকায়, মরণফাঁদ জেনেও পার হচ্ছে গ্রামবাসী সহ কোমলমতি ছাত্র ছাত্রীরা। সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, ব্রিজের দুইপাশ থেকে ভেঙে যাওয়াসহ উপরের সিমেন্টের তৈরি পাটাতন ধসে যাওয়ায় এই রাস্তা দিয়ে চলাচলের একমাত্র যানবাহন মোটরবাইক চলাও বন্ধ হয়ে গেছে অনেকসময় ঝুকি নিয়ে এর মধ্যে মোটরসাইকেল পার হতে গিয়ে দুর্ঘটনার কবলে পরেছেন চালকরা।

ব্রিজটির বেহাল দশা প্রায় ৫ বছর যাবত। একবছর আগে ব্রিজের উপরের পাটা ধ্বসে পরায় স্থানীয় জন প্রতিনিধিদের তেমন সুফল পরিলক্ষিত না হওয়ায়, স্থানীয় আলহাজ্ব আবদুর রউফ তার নিজ অর্থায়নে কাঠ ক্রয় করে সাময়িক ভাবে মেরামত করে দেন। কিন্তু যোগাযোগের তাগিদে প্রতিনিয়ত ব্রিজ দিয়ে মোটরবাইক, রিকশা, ভ্যান, সেই সাথে হাজার হাজার মানুষ ও শিক্ষার্থীদের চলাচলের কারণে এখন কাঠও ভেঙ্গে গেছে। শিশুরা ঝুঁকিপূর্ণ ব্রিজ দিয়ে যাতায়াত করতে গিয়ে প্রায়ই ছোট-বড় দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে। বর্তমানে ব্রিজটির অবস্থা খুবই করুণ। যে কোনো সময় ভেঙে পরে নানা ধরণের দুর্ঘটনার শিকার হতে পারে পথচারীসহ শিক্ষার্থীরা। স্কুল-কলেজ, মাদরাসার শত শত শিক্ষার্থীর চলাচলের একমাত্র ব্রিজটি ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় চরম বিপাকে পড়েছেন অভিভাবকরা।

কয়েকজন অভিভাবক জানিয়েছেন, প্রতিদিন ছোট ছোট বাচ্চাদের স্কুলে পাঠিয়ে উদ্বিগ্ন থাকতে হয় তাদের। কখন আবার মৃত্যুফাঁদে পা দিয়ে জীবন হারাতে হয় তাদের সন্তানদের। ভুক্তভোগী গ্রামবাসী জরুরি ভিত্তিতে মরণ ফাঁদে পরিণত হওয়া ব্রিজ সংস্কারের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

পার্শ্ববর্তী কযেকটি বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সাথে কথা বলা জানা গেছে, ঝুকিপূর্ন ব্রীজের কারনে বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতির হার কমে গেছে। জলিশা বাজারের ফল ব্যবসায়ী মোঃ জসিম জানান, ভাঙ্গা বিধ্বস্ত কয়েকটি স্পনড ও মরিচা ধরা ঝুলে পড়া লোহার এঙ্গেলের উপর ঝুলে আছে তাদের এলাকার সেতুটি।

স্থানীয় বাসিন্দা ও সমাজসেবক আসাদুজ্জামান রিপন বলেন, ৯০’এর দশকে নির্মিত এই সেতুটিতে যেকানে সময় মানুষ উঠলে কখনো ডানে কখনো বামে কাঁত হয়। আবার অনেক স্থানে স্পনড না থাকায় চরম ঝুঁকি নিয়ে এলাকাবাসী এভাবে কাঁপতে কাঁপতে সেতুর মাঝ বরাবর আসলেও কখনো কখনো নিজেকে সামলাতে না পেরে পড়ে যায় খালের পানিতে। অথচ ব্রিজটি মেরামতের জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কোন মাথা ব্যাথাই নেই। তাছাড়া বেতাগী ও মির্জাগঞ্জ উপজেলার সুপরিচিত মোকামিয়া দরবার শরিফ ও মির্জাগঞ্জের ইয়ারউদ্দিন খলিফার দরবার শরিফ চতরা ওলামা মঞ্জিল ছালেহিয়া দীনিয়া মাদ্রাসায় র্সবদা আসা যাওয়ার অন্যতম সংক্ষেপ মাধ্যম এই পথ এছাড়াও বাৎসরিক মাহফিলে লক্ষাধিক মুসলীম ওলামাদের আসা যাওয়া হয় কিন্তু প্রায় পাচঁ বছর যাবৎ এমন দূর্ভোগে জনসাধারণ যেন দেখার কেউ নেই। মাঝে মাঝে শুনি টেন্ডার হইছে তবে মেরামত কবে হবে জানা নেই আমাদের এলাকাবাসীর। কয়েকদিন আগে কলেজ পড়–য়া ছাত্রী ব্রিজ থেকে পরে যায় গিয়ে মারাত্বক আহত হন। তারপরও মেরামতের কোন ব্যবস্থা করেননি সংশ্লিষ্টরা।

হোসনাবাদ ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. মাকসুদুর রহমান ফোরকান বলেন, আমার ইউনিয়নের এটি সবচেয়ে ঝুকির্পূণ ব্রীজ। বেশ কয়েকটি প্রকল্পে এটি উল্ল্খে করা হয়েছে। খুব অচিরেই এটির একটা ব্যবস্থা নেয়া উচিত।

উপজেলা স্থানীয় সরকার বিভাগের প্রকৌশলী জনাব মোঃ সাইফুল ইসলাম জানান, বর্তমানে নতুন কোন আয়রন ব্রীজ করার পরিকল্পনা সরকারের নেই সকল স্থানেই গার্ড ব্রিজ নির্মাণ করা হবে। তবে এই ব্রিজটি বেশ ঝুকির্পূণ। আর তাই এটি জাইকা প্রকল্পের আওতাধীণ করা হয়েছে এবং খুব অল্প সময়ের মধ্যে টেন্ডার হবে।

এমএ